Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধানের দামে বিপাকে কৃষক

নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী, বাউফল (পটুয়াখালী) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

কৃষকরা আমন ধান গোলায় তুলতে পারলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পাওয়ার কারণে মাথায় হাত পড়েছে পটুয়াখালীর বাউফল অঞ্চলের কৃষকদের। বর্তমানে একমণ ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪৯০ থেকে ৫৮০ টাকায়। অপ্রত্যাশিতভাবে ধানের দাম কম হওয়ায় প্রান্তিক কৃষক এখন দিশেহারা। দেশব্যাপী মিল মালিক ও আড়ৎদার সিন্ডিকেট এবং সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু না করায় ধান বাজারে চলছে বেহাল অবস্থা। ধান বিক্রি করে চাষের খরচ হওয়া টাকা না ওঠায় আগামীতে ধান চাষ করা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে কৃষকদের মধ্যে।
বাউফল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বাউফলে ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) এবং ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে দেশি জাতের আমন চাষ করা হয়েছে। ঘ‚র্ণিঝড় বুলবুলে বাউফলে আমন ক্ষেতের তেমন ক্ষতি না হওয়ায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
সরেজমিন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম ধানের হাট বাউফলের কালাইয়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে কৃষকরা হাজার হাজার মণ ধান বিক্রির জন্য এনেছেন। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় ধান বিক্রি করতে পারছেন না। প্রতি বছর এ বাজার থেকে ধান ক্রয়ের জন্য দিনাজপুর, রংপুর, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, নওগাঁ এবং পিরোজপুররসহ দেশের অনেক এলাকা থেকে ব্যাপারীরা আসেন। কিন্তু এ বছর এখনো কোনো ব্যাপারী কালাইয়া বাজারে আসেননি। স্থানীয় আড়ৎদাররাও ধান কিনছেন না। ফলে ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলার মমিন চর এলাকার কৃষক আলমগীর গাজী বলেন, গত বছরও এ সময় ধানের বাজার ৮০০ টাকার উপরে ছিলো। একমণ ধান পেতে বীজ বপন থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত শ্রমিক এবং সারসহ প্রায় ৭০০ টাকা খরচ হয়। বর্তমান বাজার অনুযায়ী প্রতিমণ ধানে ১০০ টাকা লোকসান হচ্ছে। এভাবে ধানের বাজার থাকলে আগামীতে আর ধান চাষ করবো না। একই অভিব্যাক্তি প্রকাশ করেছেন ধান বিক্রি করতে আসা অন্য কৃষকরা।
বাউফল উপজেলা কৃষি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, বাউফলে প্রায় ৫৪ হাজার তালিকাভ‚ক্ত কৃষক রয়েছে। যাদের উৎপাদিত ধানের পরিমাণ হবে প্রায় ১৫ লাখ টন। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ ধান সরকারের পক্ষ থেকে ক্রয় করা সম্ভব হবে না।
তবে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত তাদের ধান কম টাকায় ব্যাপারী, আড়ৎদার কিংবা মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করতে হবে।
কালাইয়া বাজারের আড়ৎদার জয়নাল সরদার, মানিক কৃষ্ণ কুন্ডু, কার্তিক সাহা, গৌতম বণিকসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। যার কারণে ব্যাপারীরা ধান কিনতে কালাইয়া বাজারে আসছেন না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, এ সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় চার হাজার কৃষকদের থেকে প্রতি কেজি ২৬ টাকা ধরে ২ হাজার ৫৬৪ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হবে। মাত্র চার হাজার কৃষকদের থেকে আড়াই হাজার মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হলে বাকি কৃষকদের লাখ লাখ মেট্রিকটন ধান বিক্রিতে সরকারিভাবে কোনো ম‚ল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি কৃষি কর্মকর্তা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধান


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ