বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এ কথা সর্বজন বিদিত যে, সকল নবী রাসূলের দ্বীন তথা মৌলিক আকিদা এক অভিন্ন। শরীয়ত তথা কর্ম পদ্ধতি এবং শাখা গত বিধি-বিধান পৃথক পৃথক। এ সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ক. আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য ওই দ্বীনই বিধিবদ্ধ করেছেন যা নূহ আ. কে নির্দেশ করেছেন। যা আপনার নিকট ওহী করেছি ও যা ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা আ. কে নির্দেশ করেছি। আর তা হলো তোমরা দ্বীন কায়েম করো ও সে ব্যাপারে পৃথক পৃথক হয় না। (সূরা আশ শুয়ারা : আয়াত ১৩)।
খ. ইরশাদ হয়েছে: আপনার পূর্বে প্রেরিত রাসূলগণকে জিজ্ঞেস করুন যে, আমি কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য ইলাহকে ইবাদত এর জন্য নির্ধারণ করেছি? (সূরা আয যুখরুফ : আয়াত ৪৫)। উল্লেখিত আয়াতসমূহ হতে যে মর্ম উদ্ঘাটন করা যায়, তা হলোÑ হে প্রিয় হাবিব সা., অন্যান্য নবীর জন্য মৌলিকভাবে একটা দ্বীনবৈধ করেছি, আর তা হলোÑ তাওহীদ, সালাত, যাকাত, সিয়াম ও সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ। এ সবই এক দ্বীন ও মিল্লাত হিসেবে বিধিবদ্ধ। নবীদের মধ্যে এ সকল বিষয়ে কোনো ইখতিলাফ ছিল না। মোট কথা, দ্বীনের মূল বিষয় ছিল এক, শাখা-প্রশাখা ছিল বিভিন্ন। উত্তম চরিত্র ও প্রশংসিত আচরণ গ্রহণ এবং ঘৃণিত ও নিন্দনীয় স্বভাব বর্জন করার ব্যাপারে তাদের একমত হওয়াটা ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক ও যথার্থ।
আর এ কথাও সুবিদিত যে, প্রত্যেক নবী স্বীয় নবুওয়াতের উদ্দেশে ও আল্লাহর পক্ষ হতে অর্পিত দায়িত্ব পালনে সফল হয়েছেন। কোনো নবীর উপর একজন ব্যক্তিও যদি ঈমান না এনে থাকে তবুও তিনি সফল ছিলেন। কারণ নবীর কাজ হলো সংবাদ পৌঁছে দেয়া। মানা না মানা শ্রাবণকারীর কাজ। এই বিশেষত্বটি আল-কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে: ক. ইরশাদ হয়েছে, হে নবী, তুমি নসিহত কর। তুমি একজন নসিহতকারী মাত্র। তুমি তাদের উপর দারোগা নও। তবে যে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও কাফের হয়ে যায়, আল্লাহতালা তাকে কঠিন আজাব দিবেন। (সূরা গাশিয়া : আয়াত ২১-২৪)।
খ. ইরশাদ হয়েছে, রাসূলদের উপর আহকাম প্রকাশ্যভাবে পৌঁছে দেয়া ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব নেই। (সূরা নাহল : আয়াত ৩৫)। তবে তাবলীগের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াবলী সম্পর্কে গোটা উম্মত এ বিষয়ে একমত যে, নবী ও রাসূলগণ মিথ্যা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। তারা জনগণের মাঝে প্রচারণা ও উৎসাহ প্রদানের ব্যাপারে সদা সচেষ্ট ছিলেন। অন্যথায় নবুয়তের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তাদের অনীহা ও অযোগ্যতা প্রমাণিত হবে। আর স্বেচ্ছায় বা ভুলক্রমে তাদের থেকে এহেন উদাসীনতা প্রকাশ পাওয়া সর্বসম্মত মতে অসম্ভব অকল্পনীয়।
নবীগণের দ্বারা কখনো কখনো ইজতিহাদী ত্রুটি হতে পারে। এটা নবীর নিষ্পাপ হওয়ার প্রতিবন্ধক নয়। এ ব্যাপারে স্মরণযোগ্য যে, নবী কখনো ইজতেহাদি ভুলের উপর স্থির থাকেন না। বরং আল্লাহ তাআলা তাকে সংশোধন করে দেন। সুতরাং প্রত্যেক নবী মাসুম নিষ্পাপ। অর্থাৎ কোনো সগীরা বা কবীরা গোনাহ স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোনো নবীর দ্বারা সংঘটিত হয়নি। নবীর মাসুম হওয়া এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা কোনো প্রকার চাপ প্রয়োগ ছাড়াই নবীদের গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে। আল-কোরআনে এই বিষয়টিকে খোলাসা করে বয়ান করা হয়েছে।
ক. ইরশাদ হয়েছে: যদি আমি তোমাকে দৃঢ়পদ ও অবিচালিত না রাখতাম, তবে তুমি তাদের প্রতি একটু ঝুঁকে পড়তে। (সুরা ইসরাইল : আয়াত ৭৪)। ইরশাদ হয়েছে: তোমাদের সাথী (মোহাম্মদ সা.) কখনো বিপথগামী বিভ্রান্ত হননি। (সূরা আন নাজম : আয়াত ২)। বস্তুত নবীগণ তাবলীগের ব্যাপারে বিশেষত: শরঈ বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদি উম্মতকে পথনির্দেশনা ও বিধানসমূহ তাদের নিকট পৌঁছাতে অসত্য হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ছিলেন। উম্মতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নবীগণ ওহী প্রাপ্তির পূর্বে ও পরে কুফরী হতে মুক্ত নিষ্পাপ ছিলেন। (নিবরাস : পৃ. ২৮৩)।
মোটকথা শয়তানি প্রতারণা, মিথ্যা, সগীরা বা কবিরা গুনাহ ইত্যাদি হতে স্বেচ্ছায় বা ভুলক্রমে, নবুয়তের কার্যক্রম আরম্ভ করার পূর্বে বা পরে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও পবিত্র ছিলেন। অর্থাৎ, তারা নিষ্পাপ ছিলেন। শারহুল মাকাসিদে উল্লেখ করা হয়েছে, গুনাহ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা হতে বিরত থাকার যোগ্যতা শক্তিকে ইসমাত বলে। সকল উসুলবিদ ইমামগণ বলেন, সকল নবী নিষ্পাপ। ভুলেও তাদের দ্বারা কোনো গোনা হবে না। আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে তাদের দ্বারা কোনো ভুলত্রুটি হওয়ার অবকাশ নেই। (আল ইউওয়াকিতু ওয়াল জাওয়াহিরু : খ- ২, পৃ. ২)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।