Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একটি দলকে কব্জায় রেখে বাংলাদেশে আধিপত্য বজায় রেখেছে ভারত--- রিজভী

এখনও বিচার বিভাগকে বিশ্বাস করে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

একটি রাজনৈতিক দলকে কব্জায় নিয়ে বাংলাদেশে ভারত তাদের আধিপত্য বজায় রেখে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনে বিএনপিকে অভিযুক্ত করে ন্যাক্কারজনক বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন না থামার কারণেই নাকি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি এনেছেন। অমিত শাহ সত্যভ্রষ্ট। তার এই দায়িত্বজ্ঞানহীন জঘন্য মিথ্যা অভিযোগ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। ভিত্তিহীন এই অভিযোগ প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, অমিত শাহদের আশির্বাদপুষ্ট আওয়ামী লীগের সময়ে এদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর বেশী নির্যাতন হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

বাংলাদেশ অচিরেই নাগরিকত্ববিহীন ভারতীয় মুসলিম নাগরিকের ভয়ঙ্কর পুশইন তান্ডবের শিকারে পরিণত হবে আশঙ্কা প্রকাশ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারতের পার্লামেন্টের লোকসভায় পাস হওয়া নাগরিকত্ব বিলের ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী হিসেবে যাওয়া অমুসলিমদের ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে শুধুমাত্র মুসলিমদেরকে কোন নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, এর আগে আসামে এনআরসির ফলে প্রায় ১৯ লাখ ভারতীয় নাগরিককে ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ১৪ লাখের বেশী হিন্দু স¤প্রদায়ের নাগরিককে ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ বলেও ঘোষণা করা হয়েছিল। এখন এই বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশের ফলে সেই ১৪ লাখেরও বেশী হিন্দু স¤প্রদায়কে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। বাকী প্রায় ৫ লাখ মুসলিম, যাদেরকে ইতোমধ্যেই ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাদেরকে নাগরিকহীন করা হলো।
ভারতের এই আচরণকে ফ্যাসিবাদের নব্য সংস্করণ উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, যাদেরকে অনুপ্রবেশকারী বলা হচ্ছে তাদেরকে এখন ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢুকানো হবে। রাতারাতি ভারতের এই মুসলিম নাগরিকরা রাস্তার ফকিরে পরিণত হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পের বদ্ধ কারাগারে থাকতে বাধ্য হবেন। এটাতো শুধুমাত্র এক আসাম রাজ্যের ঘটনা। এরপর ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা মতে পুরো ভারতজুড়ে তারা এনআরসি করতে চান। ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম নাগরিকদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ ঘোষণা দিয়ে তাদেরকে নাগরিকত্বহীন করার মাধ্যমে তাদের বাড়ি-ঘর ক্রোক করে ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢুকানো হবে। তবে, ভারতের এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে শুধুমাত্র ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম নাগরিকরা একাই ভয়াবহ সংকটে পড়বে না, এতে ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশ অচিরেই নাগরিকত্ববিহীন ভারতীয় মুসলিম নাগরিকের ভয়ংকর পুশইন তান্ডবের শিকারে পরিণত হতে পারে।
বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, ইতোমধ্যেই ভারত থেকে বাংলাদেশের সীমান্তে অবৈধভাবে ভারতীয় নাগরিকদের গণহারে পুশইন করা শুরু হয়ে গেছে। সীমান্তে বিজিবি কয়েক দফা এদেরকে গ্রেফতার করে জেলেও পাঠিয়েছে। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ অবধি এটা জানেনই না বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন! অন্যদিকে ভারতের নানা প্রান্ত থেকে ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে অসংখ্য মুসলিম নারী-পুরুষদের আটক করে দলে দলে কলকাতায় নিয়ে এসে গোপনে ও জোর করে সীমান্ত পার করে দেয়া হচ্ছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে। যা খোদ ভারতের সংবাদ মাধ্যমেই প্রকাশ পেয়েছে।
অমিত শাহের বক্তব্য অশুভ ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য করে রিজভী বলেন, বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ’র এই বক্তব্য শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং সৎ প্রতিবেশীসূলভ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অশুভ ইঙ্গিতবাহী। তার এই বক্তব্য বাংলাদেশী জনগণকে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করা। একটি দলকে কব্জায় নিয়ে বাংলাদেশে তারা যে আধিপত্য বজায় রেখেছেন, অমিত শাহ’র এই বক্তব্য সেটির সুষ্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, বিএনপি সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতিতে বিশ্বাসী। আমাদের সরকারের সময় আমরা কখনো কোনো নাগরিককে তার ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নির্যাতন, অধিকার থেকে বঞ্চিত করা কিংবা ধর্মাচরণে বাধা দিতে দিইনি। আইনের শাসনকে কঠোরভাবে বলবৎ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের আগে নির্বাচনী সহিংসতার সাথে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক প্রতিশোধের বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকেও তদন্ত ও আইনের আওতায় আনা হয়। কোথাও অমুসলিম নাগরিকদের ওপর কোনো রকম অত্যাচার চালাবার সুযোগ কাউকে দেয়া হয়নি। বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারী আওয়ামী শাসনামলেই সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির ওপর আঘাত এসেছে।
রিজভী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও আওয়ামী লীগ সমর্থক ড. আবুল বারাকাতের গবেষনা ‘বাংলাদেশে কৃষি ভূমি জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি-২০১৬’ ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে, স্বাধীনতার পর থেকে এইদেশের সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর যত অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ণ হয়েছে এবং তাদের যত জায়গা-জমি-সহায় সম্পদ দখল হয়েছে তা আওয়ামী লীগের দ্বারাই হয়েছে।
এখনও বিচার বিভাগকে বিশ্বাস করে বিএনপি : দেশের মানুষ গভীর আশা নিয়ে সর্বোচ্চ বিচারালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে বলে মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, দুঃশাসনকবলিত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল ও ভরসার জায়গা হলো দেশের বিচারালয়। আমরা এখনও বিচার বিভাগকে বিশ্বাস করি। বিশেষ করে সুপ্রিমকোর্ট নিরপেক্ষ থেকে ন্যায়বিচার করবেন, আইনের শাসন কায়েম থাকবে বলে আশা করি। আমরা আশা করি, মহামান্য আদালত চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর প্রাপ্য হক জামিন দিয়ে মুক্ত পরিবেশে পছন্দমতো হাসপাতালে স্বাধীনভাবে সুচিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেবেন। আইন, সংবিধান, মানবাধিকার, বয়সসহ সকল বিবেচনা অনুযায়ী জামিন পাওয়া তাঁর ন্যায়সঙ্গত অধিকার। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা চেয়ারপারসনের জামিন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন। আমরা আশা করি উচ্চ আদালত সবকিছু বিবেচনা করে সঠিক রায় দেবেন।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে বিনা অপরাধে ৬৭২ দিন ধরে অমানবিক ও নির্দয়ভাবে বন্দী রাখা হয়েছে। সুচিকিৎসার অভাব এবং মানসিক নিপীড়ণে ৭৫ বছর বয়সী গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রীর অবস্থা খুবই বিপজ্জনক। সেই কারণেই সরকার তাঁর জীবনকে আরও বিপন্ন করার জন্য জামিন দিচ্ছে না। যে কোনো সময় তাঁর স্থায়ী পঙ্গুত্বের আশঙ্কা রয়েছে। দেশের জনগণ তাদের নয়নমনি দেশনেত্রীকে নিয়ে প্রতি মুহুর্ত গভীর উৎকন্ঠায় কালাতিপাত করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে মানবাধিকার রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। আমাদের বিচার বিভাগ যেন স্বাধীনভাবে কাজ করে সেই স্বাধীনতাও আমরা বিচার বিভাগকে নিশ্চিত করে দিয়েছি, মানুষ যাতে ন্যায় বিচার পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে।”
তিনি বলেন, আমরা আগামীকাল সর্বোচ্চ আদালতে প্রধানমন্ত্রীর এই কথা ও অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। তিনি যে মানবাধিকারকে পদদলিত, সমগ্র বিচার ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করে ন্যায়বিচারের টুটি চেপে ধরে মিথ্যাবাদীতার নীতি নিয়ে তিনি যে সরকার পরিচালনা করছেন সেখান থেকে সরে আসার নজীর সৃষ্টি হবে, তিনি যদি আদালতকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেন। কারণ ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি প্রধান বিচারপতিসহ একজন বিচারককে বন্দুকের নলের মুখে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
রিজভী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, গুরুতর অসুস্থতায় ধুঁকছেন দেশনেত্রী। তাঁর জীবন হানীর শংকায় শঙ্কিত আমরা। গোটা দেশবাসী গভীর উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আছে। জামিন আটকে দিতে আদালতে নগ্ন হস্তক্ষেপ করবেন না। ন্যায়বিচারে বাধা দিবেন না। মানবিক কারণে দেশনেত্রীর জামিন দিন। তাঁর জামিনই এখন দেশবাসীর কাছে মূখ্য। তাহলেই বোঝা যাবে, প্রধানমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্যের সাথে কাজের মিল আছে।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ