Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজান কি ব্যবসায়ীদের, বিবেকহীন ঈদবাণিজ্যের শিক্ষা দেয়?

প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবুল কাসেম হায়দার

ঈদবাণিজ্য। কথাটি শুনতে কেমন কেমন মনে হয়। ঈদে আবার বাণিজ্য কী? ঈদে তো শুধু আনন্দ আর আনন্দ। ঈদে ছোটদের মহাআনন্দ। গরিব, ধনী সকল শ্রেণী শিশু-কিশোররা ঈদে আনন্দ করে সবচেয়ে বেশি। নতুন নতুন ফ্যাশনের নতুন জামাকাপড়, জুতা, পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা ঈদের বড় আনন্দ। ধনীদের আনন্দ আরও ব্যাপক। অনেক ধনী পরিবার ঈদে গাড়ি, বাড়ি, গহনাসেট কিনে পরাকে বড় আনন্দ মনে করে। গরিবের বড় আনন্দ হচ্ছে ঈদের দিন নতুন একটা জামা কিনে পরা। নতুন জুতা হলেও ভালো হয়। নতুন লুঙ্গি হলে তো কথা নেই। কিন্তু দেশের এখনও ৩৫ শতাংশ মানুষের ঈদে একটি জামা, একখানা লুঙ্গি এবং এক জোড়া নতুন জুতা কেনার সামর্থ্য নেই। তবুও তারা ঈদ করে। ধনীদের ঈদের আনন্দের ঢেউয়ের সঙ্গে নিজেকে ভাসিয়ে ঈদ আনন্দ করে।
ঈদের আনন্দে আরও ব্যাপকতা লাভ করেছে। বিশেষ করে শহরের ধনী পরিবারের সদস্যগণ এখন ঈদ আনন্দ করেন সপরিবারে বিদেশ ভ্রমণ করে। রমজান শেষে এই ঈদুল ফিতরে ছুটিতে সকলে দল বেঁধে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া বেড়াতে যায়। অনেক ধনী পরিবারের এইটি নিয়মিত ভ্রমণ পরিকল্পনা। অনেক ধার্মিক পরিবার রমজানের শেষে ওমরা করার জন্য মক্কা-মদিনা সফরে যান। অনেকে একাকী বা অনেকে সপরিবারে। এদের সংখ্যা খুবই কম। কারণ ধর্মের রীতি-নীতি মানি আমরা অনেকটা দায়সারাভাবে, যাকে বলে ‘আমল আমাদের খুবই সীমিত। তাই অনেক ক্ষেত্রে আমাদের নামাজ পড়া উঠাবসা ছাড়া আর কিছুই হয় না।’ আল্লাহপাক আমাদের হেদায়েত দান করুক এ কামনা প্রতিনিয়ত করতে হবে সকলকে।
ঈদের আনন্দকে পুঁজি করে আমরা ব্যবসায়ীগণ দেশে ও বিদেশে বাণিজ্য কর্মকা- সম্প্রসারিত করি। খ্রিস্টান সম্প্রদায় ২৫ ডিসেম্বরকে সামনে করে ঈদবাণিজ্য বিশ^ব্যাপী করে থাকে। আমাদের মুসলমান সমাজে ধর্মীয় বড় দুইটি উৎসব রয়েছে। একটি হচ্ছে রমজান শেষে ঈদ অর্থাৎ ঈদুল ফিতর। আর অপরটি হচ্ছে রমজানের আড়াই মাস পর ঈদুল আযহা। কোরবানির ঈদ। এই দুই ঈদে মুসলমান সমাজে ব্যবসায়িক কর্মকা- বেশ প্রসারিত। রমজানের ঈদের বাণিজ্য প্রকৃত অর্থে শুরু হয় রমজান শুরুর দুই মাস পূর্ব থেকে। দেশের সকল ব্যবসায়ী রমজান শুরুর বেশ কয়েক মাস পূর্ব থেকে রমজানের বাণিজ্যের প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে।
আল্লাহপাক ব্যবসাকে ‘হালাল’ করেছেন আর সুদকে করেছেন ‘হারাম’। ব্যবসাকে ইসলাম ধর্মে উত্তম কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী ব্যবসা করেছেন। তাই ব্যবসা এক অর্থে সুন্নত। কিন্তু আজকের সমাজে ব্যবসা নানা দিকে সম্প্রসারিত। প্রথমত, ব্যবসা অভ্যন্তরীণ, অপরটি হচ্ছে বিদেশে। বিদেশের ব্যবসাকে আমরা আমদানি-রপ্তানি এই দুই শব্দে চিহ্নিত করি। আর অভ্যন্তরীণ ব্যবসা দুই রকম। প্রথমত, ট্রেডিং ব্যবসা, দ্বিতীয়ত, উৎপাদনমুখী ব্যবসা। রমজানে অভ্যন্তরীণ, আমদানি-রপ্তানি, উৎপাদনমুখী সকল ব্যবসাই পরিচালিত হয়। আমরা সকল ধরনের ব্যবসায়ীগণ ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসার ছক এঁকে থাকি।
আমদানি বাণিজ্য : রমজান আসার পূর্ব থেকে আমদানিকারকগণ রমজানে নিত্যপণ্যসহ সকল পণ্যের সংগ্রহশালা গড়ে তোলেন। বিশেষ করে আমাদের ঢাকা শহরের মৌলভীবাজার, চকবাজার ও চট্টগ্রাম শহরের খাতুনগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ীগণ প্রচুর আমদানির পরিকল্পনা করে থাকেন। বিশেষ করে ছোলা, বাদাম, কিসমিস, খেজুর, গম ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলা, চিনি প্রভৃতি প্রচুর পরিমাণ আমদানি করে থাকেন। তাদের এই আমদানির ফলে ব্যাংকসমূহ বাণিজ্য করে নিজেদের অর্থ বিনিয়োগ করে। এলসি খোলার সময় ইন্স্যুরেন্স করে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো কভার নোট ইস্যু করে বাণিজ্য করে থাকে। আমদানির কর সিএন্ডএফ, ট্রান্সপোর্ট, রেলওয়ে মালামাল আনা-নেওয়া করে অন্য রকম বাণিজ্য করে থাকে। তাতে দেখা যায়, দিনমজুর থেকে শুরু করে সমাজের বিত্তবান সকল ব্যক্তি ঈদবাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন।
ইফতার বাণিজ্য : রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ঢাকাসহ সকল শহরে ইফতার বাণিজ্য বেশ রমরমা। ঢাকা শহরে চকবাজার, বেইলিরোডসহ সম্ভ্রান্ত এলাকাসমূহে দোকানিরা নানা ইফতারি তৈরি করে সাজিয়ে বসেন বিক্রি করার জন্য। বেশ বিক্রি হয়। ইফতারের সময় আমাদের দেশের মানুষের প্রিয় জিনিস হচ্ছে ছোলা, মুড়ি, জিলাপি, বেগুনি, ছমুচা, চিকেন ফ্রাই, নানা রকমের কাবাব, দইবড়া, হালিম, সেমাই, খেজুর, খোরমা প্রভৃতি। ইফতারের শুরুতে নানা রকম শরবত থাকা চাই। লেবু শরবত, বোরহানি, রুহ আফজা প্রভৃতি ইফতারের টেবিলে সাজিয়ে আমরা ইফতার করতে বসি। শহরের বড় বড় মসজিদসমূহে ইফতারির আয়োজন হয়। প্রতিদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদে দুই থেকে তিন হাজার মুসল্লির ইফতারির আয়োজন করা হয়ে থাকে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাদের নিজেদের অর্থ থেকেও দাতাদের দান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার রোজাদার ব্যক্তিদের ইফতার করিয়ে থাকেন। কারণ আমরা বিশ^াস করি, একজন রোজাদারকে ইফতার করালে একটি রোজার সওয়াব পাওয়া যায়। সউদি আরবেও ইফতারির সময় প্রচুর ইফতারি দানশীল ব্যক্তিগণ মক্কা ও মদীনা শরিফের মসজিদ সমূহে বিলি করে থাকেন। সেখানে অনেক সময় প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় কে কাকে কত বেশি ইফতার করাতে পারবেন।
আমাদের দেশ ছাড়াও পৃথিবীর সকল অমুসলিম দেশে মুসলমানেরা মসজিদে ইফতারির আয়োজন করে থাকে। কোন মসজিদে রুটিন করে পালা ক্রমে দানশীল অমুসলমানগণও ইফতারির ব্যবস্থা করে থাকেন। আমি অস্ট্রেলিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন মসজিদে পালাক্রমে মসজিদে ইফতারির ব্যবস্থা করতে অমুসলমান ভাইবোনদেরও দেখেছি।
 নতুন জামাকাপড় ও জুতা বাণিজ্য : রমজানের ঈদে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় নতুন পাঞ্জাবি-পায়জামা, জামা, প্যান্ট, শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিসসহ জুতা-মোজার বাণিজ্য। শহরের অলিগলিতে সকল দোকানে নতুন জামাকাপড়ের সমাহার। ধনী ব্যক্তিদের তো কথা নেই কমপক্ষে একসেট নতুন পাঞ্জাবি-পায়জামা, শার্ট ক্রয় করা। কোটি কোটি মানুষ নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামা কিনে থাকেন। রমজানে এক মাসের বাণিজ্য বলতে গেলে বাকি এগারো মাসের বাণিজ্য করে নেয় আমাদের দেশের ব্যবসায়ীগণ। রমজান যত শেষ হতে থাকে ততই জামাকাপড়ের দাম বাড়তে থাকে। লাভের পরিমাণও বাড়তে থাকে। জামাকাপড় ছাড়া জুতা-মোজার বাণিজ্যও বেশ ভালো। নতুন একটি টুপি ক্রয় করতে হবে। সকলে অন্তত একটি নতুন টুপি, আতর ঈদের দিনের জন্য কিনে থাকেন। যারা ধনী ব্যক্তি তারা দামি দামি কসমেটিক দামি দোকান থেকে ক্রয় করে থাকেন। অনেকে ঈদের বাজার করার জন্য ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও কলকাতা চলে যান। নিজেদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বিদেশ থেকে ঈদের পোশাক ক্রয় করে নিয়ে আসেন।
স্বর্ণ, রুপা, ডায়মন্ড বাণিজ্য : রমজানের ঈদে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য হয়ে থাকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের। স্বর্ণ, রুপা, ডায়মন্ড প্রভৃতি দোকানসমূহে প্রতিদিন ভিড় লেগেই থাকে। শহরের ধনী ব্যক্তিরা ঈদের সময় উপহার সামগ্রী হিসেবে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের জন্য স্বর্ণ, রৌপ্য ও ডায়মন্ড সামগ্রী ক্রয় করে থাকেন। কেউ কেউ এই ঈদে ছেলেমেয়েদের, স্ত্রীদের নতুন গাড়ি পর্যন্ত উপহার প্রদান করার নজির রয়েছে। আমাদের দেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীসহ বড় বড় শহরগুলোতে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ডায়মন্ডের বাণিজ্য বেশ রকমের দেখা যায়।
যাতায়াত যোগাযোগ বাণিজ্য : রমজানের শেষে শহরের মানুষের গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার এক হিড়িক পড়ে যায়। বড় বড় শহরগুলো একেবারে খালি হয়ে যায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকা, চট্টগ্রাম শহর থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে পরিবারসহ বেড়াতে যায়। পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য বিশালসংখ্যক মানুষ গ্রামে চলে যায়। গ্রামে যাওয়ার জন্য কেউ নিজস্ব গাড়ি, কেউ বা ভাড়া গাড়ির ব্যবস্থা করেন। অবশিষ্ট জনগণ বাসে, ট্রেনে, স্টিমার ও লঞ্চে করে গ্রামের গন্তব্যে যাতায়াত করে। তাতে কোটি কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হয়। সারাদেশে রেলওয়ে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস দিয়ে যাত্রীদের সেবা দেয়ার মাধ্যমে বাণিজ্য করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম শহর থেকে শত শত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস গ্রামে গ্রামে মানুষদের পৌঁছে দেয়। তাতে এই সকল বাস মালিকগণ কোটি কোটি টাকা যাতায়াত বাণিজ্য করে থাকেন। সারা বছর যা আয় করে, এক ঈদের সময় কয়েকগুণ বেশি আয় করে থাকেন। আবার অভ্যন্তরীণ বিমান ও এই সময় বাণিজ্যিক রুটে ব্যবহৃত হয়। যাত্রী যাতায়াত বেশ বেড়ে যায়। অভ্যন্তরীণ বিমানগুলো বেশ রমরমা ব্যবসা করার সুযোগ পায়।
নেই কোন ছাড় : পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ সময় বিশেষ ছাড় দিয়ে বাণিজ্য করে। কিন্তু আমাদের দেশে ছাড় মাত্রই নেই। বরং রোজার ঈদের সময় দোকানিরা দ্বিগুণ মূল্যে পণ্য বিক্রি করে লাভ করার চেষ্টা করে। মানুষও প্রয়োজনে দ্বিগুণ মূল্য দিয়ে পণ্য কিনে নিজেদের ঈদের আনন্দে ভাগাভাগি করে নেয়। অর্থ সম্পদশালী ব্যক্তিগণ পণ্যের মূল্যের দিকে না দেখে নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে যে কোনো মূল্যে পণ্য কিনতে দ্বিধা করেন না।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টানদের বড় দিন উপলক্ষে বেশ ছাড় দিয়ে বাণিজ্য করতে দেখা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে মুসলমান বা অমুসলমান যাই হোক না কেন, কোন ছাড় দিয়ে বাণিজ্য করতে দেখি না। কারণ আমাদের মানসিক মূল্যবোধ কেন যেন হারিয়ে গেছে। আমরা শুধু টাকা উপার্জন করতে চাই। অর্থ আর অর্থ আয় করা যেন আমাদের নেশা হয়ে পড়েছে। বিবেক, সত্য-মিথ্যা কোন কিছুই আমাদেরকে দৃষ্টিচক্ষু খুলতে সাহায্য করে না। আমরা কেমন যেন বিবেকহীন হয়ে পড়েছি। অথচ রমজান আমাদের কী শিক্ষা দেয়। রমজান আমাদের শিক্ষা দেয় ধৈর্য, সততা, নিষ্ঠা, পরোপকার ও সততা। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে আমরা এই সকল গুণগুলো অর্জন করার জন্য মোটেই চেষ্টা করি না। মনে হয় এই জীবনই সব। এ জীবন পরে আর কোন জীবন নাই। কিন্তু মুসলমান তো বিশ্বাস করে আরও একটি বড় জীবন আছে। সেই জীবনে এ জীবনের সকল কর্মের হিসাব দিতে হবে। ভালোমন্দের হিসাব নেওয়া হবে। মন্দের শাস্তি, ভালো কাজের পুরস্কার পরকালে পাওয়া যাবে। এই বিশ^াস আমাদেরকে নামাজ, রোজায় শিক্ষা দেয়। কিন্তু আমরা আমল করতে দ্বিধা করছি।
ভারতের দখলে রমজান বাণিজ্য : ভারত থেকে বৈধ পথে আমদানি কমে গিয়েছে। অবৈধ পথে শুল্ক না দিয়ে ভারত থেকে শত শত কোটি টাকার পণ্য বাজারে আসছে। বিশেষ করে ঈদ সামনে রেখে চলছে রমরমা চোরাই পণ্য বাণিজ্য। রাজধানীর প্রতিটি ছোট বড় শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান এখন ভারতীয় পণ্যের দখলে। লাখ টাকা দামের শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস থেকে শুরু করে সব বয়সীদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি জুতা-স্যান্ডেল প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। বাহারি এইসব পণ্যের চাহিদা ও লাভ বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই সব পণ্য বিক্রিতে বেশি আগ্রহী। রাজধানীর বাহিরেও প্রতিটি জেলা শহরে অবাধে ভারতীয় পণ্য বিক্রি হচ্ছে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসা এসব পণ্যের আগ্রাসনে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্প। সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব।
কমপক্ষে ঈদ উপলক্ষে হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করছে। আর এই জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রাও দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বেনাপোল, যশোর, রাজশাহী, কুমিল্লা, লালমনিরহাট, চুয়াডাঙ্গা, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, ফেনী প্রভৃতি জেলার সীমান্ত দিয়ে এই সকল চোরাই মালামাল আমদানি হচ্ছে। বিজিবি ও বিএসএফের উভয়ের আনুকূল্যে এই সকল অবৈধ বাণিজ্য বিস্তার লাভ করছে। রমজানের শিক্ষা নৈতিকতা, সততা সকল কিছুই ধূলাই লুণ্ঠিত। অন্যদিকে দেশি শিল্পকারখানা অচিরে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
জাকাত, ফিতরা : রমজান মাসে আমরা মুসলমানগণ জাকাত দেয়ার জন্য হিসাব করি। তবে সকল মুসলমান প্রকৃত জাকাতের হিসাব করে জাকাত আদায় করেন না। কিছু কিছু মুসলিম ব্যক্তি পুরোপুরি হিসাব করে জাকাত আদায় করেন। তবে সেই সংখ্যা খুবই সামান্য। অনেকে লামসাম একটা টাকার পরিমাণ জাকাত দিয়ে থাকে। অনেকে শাড়ি, লুঙ্গি ক্রয় করে এলাকার গরিব লোকদের মধ্যে বিলি করেন।
ভেজাল-নকলে বেহাল অবস্থা : আমাদের প্রতিটি দ্রব্যে ভেজাল দেয়ার একটি মানসিকতা তৈরি হয়েছে। খাদ্যে ভেজাল দেয়া, মাপে কম দেয়া যেন আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কীটনাশক দিয়ে খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে সকল সবজি পর্যন্ত না খাওয়ার তালিকায় গিয়ে পৌঁছেছে। এসব নানা জটিল রোগে আমরা আক্রান্ত হচ্ছি। মাছ, তরকারি, ফলমুল সকল কিছুতে ভেজাল ও ক্ষতিকর কীটনাশক দেয়া। বাজার নিয়ন্ত্রণের সংস্থাগুলোও নিষ্ক্রিয়। ভেজাল বন্ধ করা, অতিরিক্ত কীটনাশক দেয়া বন্ধ করার যেন কেউ নেই। মাসে মাসে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ কিছু শান্তি দেখা যায়। কিন্তু ভেজাল তো বন্ধ হচ্ছে না। অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য সরকারের উদ্যোগ খুবই সামান্য। এই কারণে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় অনেক বেশি। স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় অনেক কমে যাবে যদি আমরা ভেজাল খাদ্য ও অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে পারি।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সততার অভাব : রমজান আমাদের কী শিক্ষা দেয়, তা আমরা যেন একেবারে ভুলে গিয়েছি। রমজান আমাদের শিক্ষা দেয় ধৈর্য, সততা, নৈতিকতা, সততা ও মানসিক মূল্যবোধ। কিন্তু আমরা তা চর্চা করি না। মূল্যবোধ ও নৈতিকতা আমাদের জীবন থেকে একেবারে যেন বিদায় হয়ে গিয়েছে। এটা তো হওয়ার নয়। আমি প্রতি মুহূর্তে রমজানে যে শিক্ষা তা নিজের জীবনে একটিবারও চর্চা করার ইচ্ছা করি না। আনারসে অতিরিক্ত কীটনাশক দিয়ে লাভে বাজারে বিক্রি করি। নিজের ছেলেকে বলি আনারস খাবে না। অথচ বাজারে বিক্রি করে লাভ করছি, এ যে অন্যায়-অবিচার তা বিন্দুমাত্র ভ্রƒক্ষেপ করছি না। এই তো আমাদের সমাজের চিত্র। এই চিত্রের পরিবর্তন না করতে পারলে রমজান আমাদের কোনো শিক্ষাই দিল না। আমরা মানুষ নামের অমানুষ হয়ে গেলাম। নৈতিকতা, সততা, মূল্যবোধ ও সত্যকে সত্য বলার অভ্যাস যদি আমাদের মধ্যে না থাকে, তবেই রমজান বাণিজ্য ষোল আনাই মিছে।
লেখক: সাবেক সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজেএমইএ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান কি ব্যবসায়ীদের
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ