পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালয়েশিয়া থেকে সাধারণ ক্ষমার (ব্যাক ফর গুড) আওতায় আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল অবৈধ প্রবাসী কর্মীদের নিজ নিজ দেশে ফিরতে হবে। বাংলাদেশিসহ ১ লাখ ১১ হাজার অবৈধ অভিবাসী কর্মী মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগে আত্মসমর্পণ করে স্বেচ্ছায় নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। দেশে ফেরার ফ্লাইটের টিকিটের মূল্য আকাশচুম্বি হওয়ায় অসহায় কর্মীদের ওয়ান ওয়ে টিকিট কিনতে নাভিশ্বাস উঠেছে। জনশক্তি রফতানির অন্যতম দেশ মালয়েশিয়ায় ৭ লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে।
দশ সিন্ডিকেটের অনৈতিক কারণে ২০১৮ সনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ ঘোষণা করেন। গত ৬ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুকরণের লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার পুত্রাজায়ায় দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারানের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। বহু দেন দরবারের পর চলতি মাসের প্রথম দিকে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীর এম কুলাসেগারান নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে সফরে আসার কথা ছিল। কিন্ত দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী বাংলাদেশের সফর বাতিল করে ভারতের দিল্লী চলে যান।
বায়রার ইসির অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ আলী মালয়েশিয়ার ওয়ান ওয়ে ফ্লাইটের টিকিটের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল বলেন, সরকার বার বার অভিবাসন ব্যয় কমাতে বলছেন। কিন্তু অসহায় কর্মীরা মালয়েশিয়া থেকে খালি হাতে দেশে ফিরবে তাদের এয়ার টিকিটের দাম কেন দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সউদীসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ওয়ান ওয়ে টিকিটের দাম ছিল ২০ হাজার টাকা থেকে ২২ হাজার টাকা । বর্তমানে একজন কর্মীকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে পাঠাতে ৫২ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকায় এয়ার টিকিট কিনতে হচ্ছে। এতে বিদেশগামী কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তিনি বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের বিমান ভাড়া দ্রæত সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনা এবং মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণে জোরালো ভূমিকার রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মালয়েশিয়া থেকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বরের পরেও যেসব অবৈধ অভিবাসী দেশটিতে থেকে যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে মালয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। গত ১ আগস্ট থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি অবৈধ কর্মী দেশে ফিরেছে। অবৈধ প্রবাসী কর্মীদের দ্রæত দেশে ফিরিয়ে আনতে বহু দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আগামী ১৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটে অতিরিক্ত ১৬টি ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে। তা’ও ওয়ান ওয়ে টিকিটের মূল্য ১২শ’ ৯৪ রিংগিত নির্ধারণ করেছে (ল্যাগেজ ছাড়া)। ল্যাগেজসহ কুয়ালালামপুর থেকে দেশে ফেরার বিমানের টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭শ’ ৯৪ রিংগিত। বিজনেস ক্লাসের টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪২৪ রিংগিত এবং ল্যাগেজসহ টিকিটের মূল্য ২৯২৯ রিংগিত। এতে অবৈধ প্রবাসী কর্মীরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে।
গতকাল সোমবার মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের লেবার কাউন্সেলর জহিরুল ইসলাম বিমানের ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, বিমানের অতিরিক্ত ১৬ ফ্লাইটের ভাড়া হাই কমিশন নির্ধারণ করেনি। ভাড়া নির্ধারণ করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। এ যাবত কত অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফিরেছে এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রম সচিব বলেন, আমরা এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারব না। তিনি বলেন, কোনো খবর জানতে হলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করুন।
মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী স্বেচ্ছায় নিজ নিজ দেশে চলে যাওয়ার সর্বাধিক সংখ্যক অংশগ্রহণকারী দেশ হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়া (৪২,২৯৯), বাংলাদেশ (৩০,০৯৮), ভারত (১৯,৯৯৯), পাকিস্তান (৫,৭৫৫) এবং মিয়ানমার (৫,৩৩২)। এছাড়া নেপাল, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন এবং চীনা নাগরিকও রয়েছে।
মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক খায়রুল দাজাইমি আবু দাউদ ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল অবৈধ অভিবাসীকে বি-ফোর জি পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। যারা ঐ সময়ের মধ্যে দেশে ফিরবেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। শেষ দিকে দেশটির ইমিগ্রেশনের প্রতিটি কাউন্টারে অবৈধ অভিবাসীদের প্রচÐ ভিড়। এ ভিড় কমাতে দেশটি সরকারি ছুটি শনি ও রোববারেও ইমিগ্রেশন বিভাগ কাজ করছে।
জাতীয় শ্রমিক লীগ মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি নামজুল ইসলাম বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম হাওলাদার গতকাল সোমবার কুয়ালালামপুর থেকে ইনকিলাবকে জানান, ওয়ান ওয়ে বিমানের টিকিট কিনতে অবৈধ কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠছে। ৬/৭ শ’ রিংগিতের এয়ার টিকিট বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৬শ’ রিংগিত থেকে ২ হাজার রিংগিত। বিপুল সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী এয়ার টিকিট যোগাতে না পারায় ইমিগ্রেশনে আবদন জমা দিতে পারেনি। কনফার্ম এয়ার টিকিট না থাকায় বি-ফোর জি কর্মসূচির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক অবৈধ কর্মী। নেতৃদ্বয় বিপদগ্রস্ত অবৈধ কর্মীদের স্বল্প ভাড়ায় দেশে ফিরিয়ে নেয়ার কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা দেশটি বন্ধ শ্রমবাজার অবিলম্বে চালুর জন্যও প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
কুয়ালালামপুরস্থ বেস্ট মার্কেটিং এসডিএন বিএইচ ডি’র পরিচালক রুহুল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, ব্যাক ফর গুড কর্মসূচি ঘোষণার আগে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক অবৈধ অভিবাসীদের জেল, জরিমানা ও বিভিন্ন ধরনের আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হতো, যা ছিল অত্যান্ত কষ্টকর। মালয়েশিয়া সরকারের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পেয়ে দেশে ফিরতে অবৈধ বাংলাদেশিরা দারুণভাবে উচ্ছ¡সিত। কিন্ত এয়ার টিকিটের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসী কর্মীরা দিশেহারা। তিনি বলেন, কনফার্ম এয়ার সংগ্রহ করতে না পেরে হাজার হাজার অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী ইচ্ছা থাকা সত্বেও বি ফোর জি কর্মসূচির সুবিধা নিতে পারছে না। মালয়েশিয়ায় কর্মরত অবৈধ কর্মীদের নির্বিঘেœ দেশে ফেরার সুবিধার্থে বি ফোর জি কর্মসূচির মেয়াদ আরো ছয় মাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে দ্রæত আলোচনা করে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।