Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাজশাহী সীমান্ত লঙ্ঘন করেই চলেছে বিএসএফ

রাজশাহী ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাবাহিনী আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রাজশাহীর চারঘাট ও গোদাগাড়ী সীমান্তের অভ্যন্তরে প্রবেশের বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে। প্রায়শই অভিযোগ ওঠে বিএসএফ বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে কৃষক আর রাখালদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করে, জেলে রাখে এমনকি হত্যাও করে। গত বৃহস্পতিবারও বিকেলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ফরহাদপুর নির্মলচরের নিচ থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে আব্দুর রহিম (৫৫) ও ওমর আলী (৩২) দুই জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতের টিকনা চর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা। যদিও এসব অভিযোগ বিএসএফের পক্ষ থেকে সব সময় মিথ্যে বলে নাকচ করে দেয়া হয়।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও চারঘাট সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের অনুপ্রবেশের ঘটনায় প্রমানিত হয়েছে তাদের অপতৎপরতার। গত ২৯ নভেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাতে বিএসএফ নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সাহেব নগর সীমান্তে জেগে ওঠা নদী চরে নিজেদের দাবি করে চৌকি স্থাপন করে প্রহরা বসায়। নোম্যান্সল্যান্ডে বিএসএফের চৌকি স্থাপনের জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। জানানো হয় বিষয়টা নিয়ে পতাকা বৈঠকে বসার জন্য। তিনদিন পর গত মঙ্গলবার সাহেব নগর সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়। সেখানে দু’দেশের বাহিনী মিলে এলাকার সীমানা চিহ্নিত করে। এতে দেখা যায় বিএসএফ শূণ্য রেখার ভেতরে এসে চৌকি স্থাপন করেছে।

বিএসএফ শূণ্য রেখা থেকে ৭০ মিটার ভেতরে এসে চৌকি স্থাপন করেছে। উভয়পক্ষ আলোচনার পর বিএসএফ তাদের বসানো চৌকি সরানোর জন্য পাঁচদিন সময় নিয়েছে। প্রমানিত হয়েছে বিজিবির দাবির সত্যতা।

গত ১৭ অক্টোবর ভারতের সীমান্তরেখা অতিক্রম করে কয়েকজন জেলে বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করে। তারা রাজশাহীর চারঘাটের ভেতরে পদ্মা নদীতে প্রবেশ করে ইলিশ শিকার করতে থাকে। ওই সময় বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশ শিকারের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চলছিলো। মা ইলিশ শিকারের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত তিন জেলের মধ্যে এক জেলেকে আটক করে।

এ সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সদস্যরা কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করেই বাংলাদেশের প্রায় ৬৫০ গজ অভ্যন্তরে এসে আটক জেলে প্রণব মন্ডলকে বিজিবির নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে বিএসএফ বিজিবিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। বিজিবি পাল্টা গুলি চালালে বিএসএফের হেড কনস্টেবল বিজয় ভান সিং নিহত এবং আরেক বিএসএফ সদস্য রাজবীর সিং আহত হন। সে ঘটনায় বিএসএফ সবকিছু অস্বীকার করে ঘটনার জন্য বিজিবিকে দোষারোপ করে। যদিও ঘটনার পর সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি ১ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বিএসএফের বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা ডেকে নিয়ে এসে কাছে আনার পর গুলি করে তাদের মেরে ফেলবো-একটা বাহিনীর সাথে সম্পর্ক অবনতি করবো-এমনটা হতে পারে না। আমরা একটা বাহিনীর সাথে সম্পর্ক অবনতি করার মতো কোন ঘটনাও ঘটাইনি’।

এদিকে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস্ (এসওপি) লঙ্ঘনের দায় স্বীকার করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করেছিল বিএসএফ সদস্যরা-এমন প্রমাণও মিলেছে। ভারতীয় প্রভাবশালী দৈনিক ‘ডেকান ক্রনিকল’ (উবপপধহ পযৎড়হরপষব) পত্রিকা গত ১ ডিসেম্বর এ তথ্য প্রকাশ করে।

প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ‘সম্প্রতি কলকাতার বিএসএফ ক্যাম্প ঠাকুর ভিলায় ৫৫তম বিএসএফ রাইজিং দিবস উদযাপনের সময় বক্তব্য দেন, বিএসএফের উপ-মহাপরিদর্শক (দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত সদর দফতর), এসএস গুলেরিয়া। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেও এসওপি লঙ্ঘন হয়েছে। বিষয়টি তদন্তেরও আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসওপি লঙ্ঘনকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এসওপি লঙ্ঘনের অভিযোগে এরই মধ্যে মুর্শিদাবাদের কাকমারি চরের বিএসএফের উপ-পরিদর্শকসহ তিন সদস্যের বিরুদ্ধে আদালত তদন্ত শুরু করেছে’। এদিকে, ৪ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকা ‘সংবাদ প্রতিদিন’ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পতাকা বৈঠক সেরে ফিরে আসার সময়ই বিএসএফের ওপর গুলি চালানোর’ অভিযোগ আবারো অসত্য প্রমাণিত হলো বিএসএফের উপ-মহাপরিদর্শক (দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত সদর দফতর), এসএস গুলেরিয়ার স্বীকারোক্তিতে।

চারঘাটের ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি অনলাইন ও ফেসবুক পেইজ এ রাজশাহী বিজিবি ১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ এর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নামে মহল বিশেষ। প্রচার করা হয় ঘটনার জন্য তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এবং কোর্টমার্শালে বিচারে মুখোমুখি করা হয়েছে। এনিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, মহল বিশেষ কি উদ্দেশ্য নিয়ে এমন অপপ্রচারে নেমেছে তা বোধগম্য নয়। তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। বদলি বা কোর্টমার্শাল অপপ্রচার ছাড়া কিছুই না। তিনি বলছেন স্বপদে স্বাভাবিকভাবেই চাকরিতে বহাল রয়েছেন তিনি। দয়া করে অপপ্রচার না করার আহবান জানান।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ