Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিলমারী চরাঞ্চলে শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত

অন্ধকার ভবিষ্যৎ : দিশাহারা অভিভাবক

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

‘এ ক‚ল ভাঙে ও ক‚ল গড়ে এইতো নদীর খেলা’। এমন খেলা খেলছে চিলমারীর সাথে ব্রহ্মপুত্র নদও। ভাঙছে চর, গড়ছে চর, ছিন্নভিন্ন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। বাদ যাচ্ছেনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের খেলায় চলছে মানুষের দৌড়ের খেলা দিশাহারায় পড়ছে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। সঠিক পদক্ষেপ আর নজরদারির অভাবে পিছিয়ে পড়ছে চরাঞ্চলের ছেলে মেয়েরা। দেশ আর শিক্ষা এগিয়ে গেলেও দিনের পর দিন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সাথে সাথে পিছিয়েই যাচ্ছে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার আমতলা চরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের আমতলা চরে প্রায় ৪ শতাধিক পরিবারের বসবাস। ভাঙনের শিকার হয়ে পরিবারগুলো বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে আমতলা চরে এসে আবাস গড়ে তোলে কয়েক বছর থেকে। পরিবারের সাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থীরাও চলে আসে উক্ত চরে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ভাঙনের শিকার হয়ে অন্য চরে চলে যাওয়ায় আমতলা চরের আশপাশের চরের শিক্ষার্থীরাও এখন দিশাহারা। শিক্ষার্থী আফছানা জানায়, তারা ইতোপূর্বে রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের লাল চামার চরে বসবাস করতো, নদী ভাঙনে তা বিলিত হওয়ায় পরিবারসহ আমতলা চরে আশ্রয় নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করছে। কিন্তু এই চরে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় পড়শুনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। নাজিম, মাফিয়া, মর্জিনা বলেন, এই চরে স্কুল না থাকায় আমরা কয়েকজন মিলে চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র চরে অবস্থিত নৌ-থানা পরিচালিত একটি স্কুলে যাই। ঐ স্কুলে যেতে নৌকায় প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগে এছাড়াও ভয় তো আছেই। সাজু, আসিফ বলে, আমাদের চরে স্কুল না থাকায় অন্য এলাকায় যেতে হয় এই জন্য ভোর বেলায় বের হতে হয়, না হলে ক্লাস মিস হয়। রুবেল নামে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, এখানে স্কুল না থাকায় আমি এখন বাড়ির কাম করি, অন্যের গরু চড়াই, মাঠেও কাম করি। স্কুলে যেতে না পাড়ায় এখন বাড়িতে কাজ আর খেলায় সময় পাড় করছে আফছানা। শুধু রুবেল, আফছানা নয় তাদের মত অনেক শিক্ষার্থীরা এখন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে কোমলমতি ছেলে মেয়েরা এখন বিভিন্ন কাজে জড়িত হয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয় দিনে দিনে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত সংখ্যা বেড়েই চলছে আর তারা দু’চোখে দেখছে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
সাহের আলী, আকবর আলীসহ অনেকে জানান এই চরে প্রায় ৪ শতাধিক পরিবারের বসবাস এছাড়াও এখানে দুটি আশ্রয়ন কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে। এখানে একটি অন্তত প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা দরকার তা না হলে শতশত শিক্ষার্থী আর ছেলে মেয়েরা বঞ্চিত হবে শিক্ষা থেকে আর জড়িয়ে পড়বে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে। এসময় এলাকাবাসী আমতলা চরে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দাবি জানান এবং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করেন।
চিলমারী উপজেলার ডুষমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এনামুল হক বলেন, আমতলা চরটি গড়ে উঠার বেশ কয়েক বছর হলো।
এখানকার ছেলে মেয়েরা এখন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই চরের ছেলে মেয়েরা যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় এই জন্য এই চরে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া খুবই প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম-৪ (চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর) আসনের সংসদ সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপি সাথে কথা হলে তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষা বান্ধব সরকার। শিক্ষা থেকে কোন এলাকার ছেলে মেয়ে কিংবা শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে না পড়ে সে দিকে আমাদের নজর আছে।আমতলা চরে শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হন সেদিকে আমাদের নজর থাকবে প্রয়োজনে সেখানে নতুন করে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ