পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা হওয়ায় রাজধানীমুখী হয়ে পড়েছে সারাদেশের মানুষ। নাগরিক সুবিধা ও উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ হয়ে গেছে ঢাকা কেন্দ্রীক। ফলে চাকরি, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং দাফতরিক কাজে ঢাকায় আসতে হয় মানুষকে। ফলে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ ঢাকায় বসবাস করছে। মানুষের এই চাপের কারণে রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বাড়িভাড়া। সিটি কর্পোরেশনে কার্যত বাড়িভাড়া আকাশচুম্বি। তারপর এলাকাভেদে এর তারতম্য বিড়াট। একই শহরে ৫শ স্কয়ার বর্গফুটের বাসা কোথাও ভাড়া ১৫ হাজার টাকা; একই মাপের বাড়ি কোথাও ২৫ হাজার টাকা। ১৯৯১ সালে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন হলেও বাস্তবায়নে সরকারের আগ্রহ না থাকায় ইচ্ছেমতো বাড়ি ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
রাজধানীতে যারা বসবাস করেন তাদের বেশির ভাগ মানুষ ভাড়টে। বাড়িভাড়া নিয়েই বসবাস করতে হয়। সরকারি বাসা-বাড়ির মাসিক ভাড়া নির্ধারিত থাকায় যারা সরকারি কোয়ার্টার ও বাসায় বসবাস করেন; তাদের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয় না। মাস থেকে তারা নির্ধারিত ভাড়া দেন। আর ব্যাক্তিমালিকানার বাসায় ভাড়ার কোনো নিয়মনীতি মানা হয় না। বাড়ির মালিকরা প্রতিবছর ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকে। কয়েক বছর ধরে আইন শৃংখলা রক্ষায় থানাগুলো ভাড়াটেদের পুণাঙ্গা তথ্য বাড়ির মালিকদের সংগ্রহ করার বাধ্যবাধকতা জারী করলেও ভাড়া নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে বাড়িওয়ালাদের বাসা ভাড়া বৃদ্ধিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে গতকাল হাইকোর্ট বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১ এর ১৫ ধারা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভ‚ত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে ‘ভাড়া নিয়ন্ত্রক’ নিয়োগসহ বাড়িভাড়ার বিদ্যমান অসঙ্গতি দ‚র করে মানসম্মত বাড়ি ভাড়া নির্ধারণে সুপারিশ প্রণয়নে অনুসন্ধান আইন, ১৯৫৬ এর ৩(১) ধারা অনুযায়ী অনুসন্ধান কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া চেয়েছেন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক সম্প‚রক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, আইন সচিব ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সুত্র জানায়, ১৯৯১ সালে বর্তমানে প্রচলিত বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি জারি করা হয়। অন্যদিকে ১৯৯১ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ঢাকা মহানগরীকে ১০টি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি)। এ আইনের বিধান কার্যকর না হওয়ায় এবং কোনো এলাকার ভাড়া কতো হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করুক, এটি কার্যকর চেয়ে ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়। একই বছরের ১৭ মে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধান কার্যকর করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
রিট আবেদনে বলা হয়েছিল, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে ভাড়ার রশিদ ও বাড়ি ছাড়ার জন্য নোটিশ দেওয়াসহ বিভিন্ন বিধান থাকলেও বেশিরভাগ সময় বাড়ির মালিকেরা সেটা পালন করছেন না। এমনকি ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুসারেও ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকরের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলের চ‚ড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১ জুলাই বিচারপতি বজলুর রহমান ও বিচারপতি রুহুল কুদ্দুসের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।
কিন্তু রায়ের প‚র্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের আগেই মৃত্যুবরণ করেন রায় প্রদানকারী বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি বজলুর রহামনের। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে প্রধান বিচারপতি ফের এ মামলার শুনানির জন্য বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পাঠান। পরে ওই বেঞ্চে একটি সম্প‚রক আবেদন দেয় এইচআরপিবি।
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১ আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘নিয়ন্ত্রক, বাড়ির-মালিক বা ভাড়াটিয়ার আবেদনের ভিত্তিতে, কোন বাড়ীর মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করিবেন এবং এমনভাবে তা নির্ধারণ করিবেন যেন উহার বাৎসরিক পরিমাণ বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্থিরকৃত উক্ত বাড়ীর বাজার ম‚ল্যের ১৫% শতাংশের সমান হয়: তবে শর্ত থাকে যে, যেক্ষেত্রে মানসম্মত ভাড়ার পরিমাণ যে আইনের অধীন নির্ধারণ করা হয়েছে সেক্ষেত্রে অনুরূপভাবে নির্ধারিত মানসম্মত ভাড়া সংশোধন বা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত, এই ধারার অধীন নির্ধারিত মানসম্মত ভাড়া হিসাবে গণ্য হইবে।’
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সম্প‚রক আবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের ১৭ মে হাই কোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করেছিল।
রুলের পর মনজিল মোরসেদ বলেন, ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া আইনে ভাড়া নির্ধারণ করার যে পদ্ধতি বলা আছে, সেই পদ্ধতি অনুসারে এখন যে বাসার ভাড়া ৩০ হাজার টাকা সে বাসার ভাড়া হবে ৯০ হাজার টাকা। এটাই হলো দেশের প্রচলিত আইন। এই কারণে ভাড়া নির্ধারণের জন্য মালিক এবং ভাড়াটিয়ার মধ্যে যে বিধান ছিল সে ব্যপারে কেউ আদালতে যাচ্ছে না। কারণ এটা অসম্ভব এবং অকার্যকর। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এইচআরপিবির পক্ষ থেকে আইনটিকে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি। আদালত শুনেছেন। তিনি বলেন, মানসম্মত বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু সরকার সেটি করেনি। ফলে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালাদের মধ্যে প্রায়ই বিরোধ হচ্ছে। অনেক বাড়িওয়ালাই ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াচ্ছেন, অনেক ভাড়াটিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছেন। এই সমস্ত নিয়ে নানা জটিলতা হচ্ছে। কিন্তু কোনো ভাড়াটিয়া যে আদালতে গিয়ে প্রতিকার পাবে, আইনি জটিলতা এতটাই বড় যে সে কারণে সেটা তারা পারছে না। এই কারণে আমরা একটি আবেদন করেছিলাম কমিশন গঠনের জন্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।