পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফেনীর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেমন হোসেনকে ৮ বছর কারাদ- দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ রায় দেন।
মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। অভিযোগটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে এ দ-াদেশ দেয়া হয়। সরকারপক্ষের আইনজীবী (পাবলিক প্রসিকিউটর) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীম জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় ৫ বছর কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা অর্থদ- এবং ২৯ ধারায় ৩ বছর কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা অর্থদ-ের আদেশ দেন আদালত। দু’টি ধারায় মোট ৮ বছর কারাদ- এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদ- দেয়া হয়েছে মোয়াজ্জেম হোসেনকে। এ দ- পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে। অর্থদ- অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদ- দেয়া হয়েছে।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন নুসরাতের মামা সৈয়দ সেলিম ও ছোট ভাই রাসেদুল হাসান রায়হান। এ জন্য মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকেও ধন্যবাদ জানান তারা।
এর আগে গত ২০ নভেম্বর সরকার ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। এই মামলায় মোট ১২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। গত ২৭ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা ১২৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালে। এরপর বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গত ১৬ জুন দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরদিন ১৭ জুন তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
প্রসঙ্গত ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। চলতি বছর ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। এমন অভিযোগ উঠলে দু’জনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। এ সময় ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করেন এবং নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দু’জন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ করা হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছেন নুসরাত জাহান রাফি। সেই কান্নার ভিডিও করছেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দুই হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবার ‘মুখ থেকে হাত সরাও’, ‘কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা এবং তা ভিডিও করেন। পরে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে আরো দেখা যায়, ওসি মোয়াজ্জেম অত্যন্ত অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় নুসরাতকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। নূসরাতের বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নও করতে শোনা যায় ওসি মোয়াজ্জেমকে।
নুসরাতের মা মামলা দায়ের করলে ওই অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই মামলায় নুসরাতের বক্তব্য গ্রহণের সময় তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে। যৌন হয়রানির অভিযোগ ভিডিওতে ধারণ এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। পরে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে মাদরাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।
রায়ের পর মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেন, যেসব পুলিশ কর্মকর্তা বাংলাদেশের বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনকে নিজেদের জমিদারবাড়ি মনে করেন, তাদের জন্য ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার রায় একটি অশনি সঙ্কেত। অনেকে মনে করেন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করলে রায় পাওয়া যায় না। আজকের রায়ে প্রমাণ হয়েছে তা সঠিক নয়। শুধু ব্যারিস্টার সুমন নন, যে কেউ শক্তিশালী মানসিকতা নিয়ে লড়লে ন্যায়বিচার পাবেন।
এদিকে ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক হোসেন বলেন, রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। এ রায় একপেশে। সাধারণ মানুষের সেন্টিমেন্ট দেখে এ রায় দেয়া হয়েছে। এটি আবেগতাড়িত। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।