বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পিয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. মু’জিযাসমূহের মধ্যে কোরআনুল মাজীদ শ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী মু’জিযা। তা আল্লাহর দীন ইসলাম এবং ইসলামের সভ্যতার এক বড় প্রমাণ। এ প্রসঙ্গে শরহে আকীদায়ে সিফারানিয়্যাহ’র দ্বিতীয় খ- ২৯১ পৃষ্টায় বলা হয়েছে যে, আল্লাহর কালাম আল কোরআন সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মাদ সা. এর উপর অবতীর্ণ। এটি সকল সৃষ্টজীবকে তার প্রতিযোগিতায় অক্ষমকারী। সকল মানুষ-জিন, প্রবীণ-নবীন, প্রথম দিকের ও শেষ দিকের সকলের জন্য এটি চিরন্তন মু’জিযা। কিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও কেউ আল কোরআনের সূরার তূল্য একটি সূরাও রচনা করতে পারবে না।
শুধু তা-ই নয়, কোরআন মাজীদ নাযিল হওয়ার সময় থেকে অদ্যাবধি তাওয়াতুর (অবিচ্ছিন্ন) পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়ে আসছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত উক্ত পদ্ধতিতেই বর্ণিত হতে থাকবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত উক্ত পদ্ধতিতেই বিদ্যমান থাকবে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : আমিই কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই তার সংরক্ষণকারী। (সূরা আল হিজর : আয়াত ৯)। কাশফে আসরাব শরহে উমুলুল বাযদাভীতে বলা হয়েছে : কোরআনুল মাজীদ রাসূলুল্লাহ সা. এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে মাসহাফে লিখিত এবং সংশয়মুক্তভাবে মুতাওয়াতির পদ্ধতিতে নবী সা. থেকে বর্ণিত হয়েছে। (পৃ. ৬৯-৭০, খ. ১)।
আল কোরআনে সর্বমোট ১১৪টি সূরা রয়েছে। বর্তমান মাসহাফে সুবিন্যস্ত সূরাসমূহের বিন্যাস যদিও অবতীর্ণের বিন্যাস মতো নয়, তবুও বর্তমান ক্রমধারা অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সা.-এর ফরমান ও নির্দেশ অনুযায়ী বিন্যস্ত করা হয়েছে। মহান আল্লাহপাক রাসূলুল্লাহ সা. কে সম্বোধন করে ইরশাদ করেছেন : হে নবী আপনি কোরআনপাক তাড়াতাড়ি মুখস্ত করে নেয়ার উদ্দেশ্যে আপনার জিহ্বা সঞ্চালন করবেন না। কেননা, আপনার অন্তরে কোরআন সঞ্চিত করা ও তার পাঠোদ্বার করার দায়িত্ব আমার ওপর ন্যাস্ত। সুতরাং আমি পাঠ করলে আপনি তার অনুসরণ করুন। অত:পর তা বর্ণনার দায়িত্ব আমার।
কোরআন মাজীদ সর্বপ্রথম লাওহে মাহফুজ হতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে একসাথে অবতীর্ণ হয়। অত:পর প্রয়োজন ও মুসলেহাত অনুযায়ী কিছু কিছু করে অবতীর্ণ হতে থাকে। অত:পর লাওহে মাহফুজের বিন্যাস অনুযায়ী মাসহাফে সংকলিত ও বিন্যস্ত হয়। (আল ইতকান : পৃ. ১৬৫)।
বস্তুত কোরআন মাজীদ আল্লাহপাকের কালাম ও তার আদি সিফাত। সুতরাং অন্যান্য সিফাতের মতই তা অনাদি ও অনন্ত। নব উদ্ভাবিত বা সৃষ্ট নয়। ইমাম আজম হযরত আবু হানিফা রহ. স্বীয় ‘ওয়াছিয়্যাহ’ গ্রন্থে লিখেছেন, আমরা দৃঢ়ভাবে স্বীকার করি যে, কোরআনুল কারীম আল্লাহর কালাম, তার ওহী, তার অবতারিত গ্রন্থ এবং তার সিফাত। আল কোরআন তিনিও নয়, তিনি ভিন্নও নয়। বরং তার সিফাত, মাসহাফে লিখিত। যবানে পঠিত, হৃদয়ে সংরক্ষিত, আল্লাহর কালাম, মাখলুক বা সৃষ্ট নয়। যে বলে কোরআন মাখলুক সে অবশ্যই কাফির। (শরহে ফিকহে আকবার : পৃ. ২৬)।
কোরআন মাজীদ আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। শব্দ ও মর্ম দু’টো মিলেই কোরআন। সুতরাং অনারব ভাষায় কোরআনুল কারীম নামাযে তিলাওয়াত করা জায়েজ নেই। অনারব ভাষায় তার অনুবাদকে ‘কোরআনের অনুবাদ’ বলতে হবে। কেননা, মূল কোরআন আরবী। এ প্রসঙ্গে দিকদর্শন হচ্ছেÑ এই যে, ক. যদি কেউ অনারব ভাষায় (বাংলা, উর্দূ, ফার্সি, ইংরেজী ইত্যাদি) কোরআনের অনুবাদ পড়ে এবং তাকেই মূল কোরআন মনে করে নামাজে তা পাঠ করে, তবে হয়ত সে পাগল যার উপযুক্ত চিকিৎসা দরকার, অথবা সে যিন্দিক যার শরীয়ত সম্মত শাস্তি মৃত্যুদ-। (শরহে ফিকহে আকবার : পৃ. ১৫২)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।