Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নবুওয়্যাত ও রিসালাত শ্রেষ্ঠ নেয়ামত

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

মহান রাব্বুল আলামীন যাদের নবুওয়্যাত ও রিসালাতের অলঙ্কারে বিভূষিত করেন তাদের কখনো তার এই পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় না। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সকল বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী বিধায় এমন কাউকে নবুওয়্যাত ও রিসালাতের পদ দান করেন না, যাকে ভবিষ্যতে বরখাস্ত করতে হয়।

এতদপ্রসঙ্গে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের চূড়ান্ত বক্তব্য হল এই যে, রাসূল ও নবীগণ এই পৃথিবীতে ওহী লাভ করার পূর্বেও রাসূল ও নবী। অনুরূপভাবে পৃথিবীর জীবন সমাপ্তি লাভের পরও। তারা সদা-সর্বদা মাসুম বা নিষ্পাপ। এ দাবির প্রমাণ হচ্ছে হযরত ঈসা আ. সম্পর্কে আল্লাহপাকের বাণী। মাতৃক্রোড়ে শৈশবেই হযরত ঈসা আ. নবুওয়্যাতের ঘোষণা দিয়েছেন আর মহান আল্লাহ তা সত্যায়ন করেছেন।

তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহপাকের একজন গোলাম। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং নবী করেছেন। শুধুমাত্র শিশু বা বালক বলে পরিচিত কারো কাছে কিতাব বা ওহী আসে না, যতক্ষণ না তিনি নবী রাসূল হিসেবে মঞ্জুরী প্রাপ্ত হন। আল কোরআনের ১৯ নং সূরা মারয়ামের ৩০,৩১,৩২ ও ৩৩ নং আয়াতে এর বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। উল্লিখিত আয়াতসমূহের কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। তা অত্যন্ত সহজ সরল ও প্রাঞ্জল। যে বা যারা এই বাণী বা হুকুমকে অবিশ্বাস করবে, সে অবশ্যই কাফির হয়ে যাবে। (তামহীদে আবু শাকুর সালেমী : পৃ. ৭৩)।

বস্তুত: সকল নবী ও রাসূল সত্যাবাদী ও বিশ্বস্ত হয়ে থাকেন। তারা জান্নাতের শুভ সংবাদ ও জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করেন। তারা উচ্চমানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তারা স্বীয় সম্প্রদায়ে পরিপূর্ণ মর্যাদায় সকলের অগ্রণী হয়ে থাকেন। তারা সকল প্রকার বানোয়াট হতে মুক্ত ও পবিত্র। তারা দীন প্রচারের পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন না। তারা উম্মাতকে আল্লাহর আয়াত পাঠ করে শোনাতে এবং কিতাব ও হিকমাতের শিক্ষা দানে রত ও ব্যস্ত থাকেন। আল কোরআনে এ প্রসঙ্গে বার বার তাকিদ করা হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে: (ক) তিনি ছিলেন অঙ্গীকারে সত্যাশ্রয়ী, তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী। (সূরা মারইয়াম : আয়াত ৫৪)। (খ) ইরশাদ হয়েছে, আমরা তোমার নিকট সত্য নিয়ে এসেছি এবং আমরা অবশ্যই সত্যাবাদী। (সূরা আল হিজর : আয়াত ৬৪)। (গ) ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই হে নবী, আপনি উত্তম চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। (সূরা আল ক্বলম : আয়াত ৪)। (ঘ) ইরশাদ হয়েছে, অবশ্যই আমি তাদেরকে এমন কিতাব দিয়েছি যা নিশ্চিত জ্ঞানের দ্বারা বিশদ ব্যাখ্যা করেছি, তা বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়েত ও করুণা। (সূরা আল আ’রাফ : আয়াত ৫২)।

মোট কথা, সকল নবী ও রাসূল উম্মতের নিকট আল্লাহ তায়ালার সংবাদবাহক ও দীনের প্রচারক ছিলেন। কেননা তাদের সকল কার্যক্রম আখবার প্রদান ও তাবলীগের মধ্যেই বিদ্যমান ছিল। কেননা নবীগণ সংবাদ দেন এবং রাসূলগণ সকল আহকাম কাক্সিক্ষত স্তর পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেন। একটি একটি অতি সুক্ষ্ম বিষয়। এই নাতিদীর্ঘ আলোচনার সারবস্তু হলো এই যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম ব্যতীত অন্য কোনো মানুষ মা’সুম বা নিষ্পাপ নয়।

আল আগরুল মুযানী হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা পিয়ারা নবী মুহাম্মাদ সা. দুই হাত উঁচু করে এ কথা বলতে বলতে আমাদের নিকট তাশরীফ আনয়ন করলেন এবং বললেন, হে লোকসকল, তোমরা তোমাদের পরওয়ারদিগারের নিকট ইস্তিগফার কর। অত:পর তার নিকট তাওবাহ কর। আল্লাহর কসম আমি প্রতিদিন আল্লাহর সমীপে ১০০ বার ইস্তিগফার ও তাওবাহ করি। এ প্রসঙ্গে উলামাগণ বলেন, রাসূল সা. এ কথা বলেছেন, কেননা তিনি সকল প্রকার গোনাহ হতে মা’সুম ছিলেন। তবে অন্যদের জন্য এমনটি শোভনীয় নয়। কারণ তারা মাসুম নন। তাদের গোনাহ হতে প্রত্যাবর্তন তাওবাহর মাধ্যমে সম্ভব। (সুনানে ত্বাহাভী : খ- ২, পৃ. ৩৬৮)।

 

 



 

Show all comments
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ১৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা ও মানবকুল থেকে রাসুল মনোনীত করেন। এ ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ফেরেশতা ও মানবকুল থেকে রাসুল মনোনীত করে থাকেন।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৭৫) মানবজাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষই নবী ও রাসুল হয়ে থাকেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ মোশাররফ ১৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    নবী-রাসুলরা আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত এবং তিনি তাঁদের সব ধরনের চারিত্রিক ও মানবিক দোষত্রুটি থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই তারা ছিল আমার মনোনীত উত্তম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ৪৭)
    Total Reply(0) Reply
  • নাসিম ১৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    আল্লাহ প্রতিটি জাতির জন্য স্বজাতি থেকে নবী ও রাসুল প্রেরণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর এমন কোনো জাতি নেই, যাদের কাছে সতর্ককারী বা ভীতি প্রদর্শক প্রেরিত হয়নি।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৪)
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ১৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    পবিত্র কোরআনে নবী-রাসুলদের (আ.) মৌলিক চারটি কাজের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে একজন রাসুল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদেরকে তাঁর আয়াতগুলো পড়ে শোনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিল।’ (সুরা : জুমুআ, আয়াত : ২)
    Total Reply(0) Reply
  • সত্য বলবো ১৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
    নবী-রাসুলদের (আ.) কর্মপদ্ধতি ছিল উচ্চতর প্রজ্ঞা ও কল্যাণকামিতায় ভরপুর।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ১৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
    পৃথিবীতে নবী-রাসুলদের আগমনের ধারাক্রম মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে শেষ হয়েছে। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না। ফলে তিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষ ও জিন তাঁর আনীত শরিয়ত (জীবনবিধান) মানতে বাধ্য।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ শেখ সাদী ১৫ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ পিএম says : 0
    অসাধারণ
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ শেখ সাদী ১৫ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ পিএম says : 0
    অসাধারণ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন