বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহান রাব্বুল আলামীন যাদের নবুওয়্যাত ও রিসালাতের অলঙ্কারে বিভূষিত করেন তাদের কখনো তার এই পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় না। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সকল বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী বিধায় এমন কাউকে নবুওয়্যাত ও রিসালাতের পদ দান করেন না, যাকে ভবিষ্যতে বরখাস্ত করতে হয়।
এতদপ্রসঙ্গে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের চূড়ান্ত বক্তব্য হল এই যে, রাসূল ও নবীগণ এই পৃথিবীতে ওহী লাভ করার পূর্বেও রাসূল ও নবী। অনুরূপভাবে পৃথিবীর জীবন সমাপ্তি লাভের পরও। তারা সদা-সর্বদা মাসুম বা নিষ্পাপ। এ দাবির প্রমাণ হচ্ছে হযরত ঈসা আ. সম্পর্কে আল্লাহপাকের বাণী। মাতৃক্রোড়ে শৈশবেই হযরত ঈসা আ. নবুওয়্যাতের ঘোষণা দিয়েছেন আর মহান আল্লাহ তা সত্যায়ন করেছেন।
তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহপাকের একজন গোলাম। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং নবী করেছেন। শুধুমাত্র শিশু বা বালক বলে পরিচিত কারো কাছে কিতাব বা ওহী আসে না, যতক্ষণ না তিনি নবী রাসূল হিসেবে মঞ্জুরী প্রাপ্ত হন। আল কোরআনের ১৯ নং সূরা মারয়ামের ৩০,৩১,৩২ ও ৩৩ নং আয়াতে এর বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। উল্লিখিত আয়াতসমূহের কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। তা অত্যন্ত সহজ সরল ও প্রাঞ্জল। যে বা যারা এই বাণী বা হুকুমকে অবিশ্বাস করবে, সে অবশ্যই কাফির হয়ে যাবে। (তামহীদে আবু শাকুর সালেমী : পৃ. ৭৩)।
বস্তুত: সকল নবী ও রাসূল সত্যাবাদী ও বিশ্বস্ত হয়ে থাকেন। তারা জান্নাতের শুভ সংবাদ ও জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করেন। তারা উচ্চমানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তারা স্বীয় সম্প্রদায়ে পরিপূর্ণ মর্যাদায় সকলের অগ্রণী হয়ে থাকেন। তারা সকল প্রকার বানোয়াট হতে মুক্ত ও পবিত্র। তারা দীন প্রচারের পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন না। তারা উম্মাতকে আল্লাহর আয়াত পাঠ করে শোনাতে এবং কিতাব ও হিকমাতের শিক্ষা দানে রত ও ব্যস্ত থাকেন। আল কোরআনে এ প্রসঙ্গে বার বার তাকিদ করা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে: (ক) তিনি ছিলেন অঙ্গীকারে সত্যাশ্রয়ী, তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী। (সূরা মারইয়াম : আয়াত ৫৪)। (খ) ইরশাদ হয়েছে, আমরা তোমার নিকট সত্য নিয়ে এসেছি এবং আমরা অবশ্যই সত্যাবাদী। (সূরা আল হিজর : আয়াত ৬৪)। (গ) ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই হে নবী, আপনি উত্তম চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। (সূরা আল ক্বলম : আয়াত ৪)। (ঘ) ইরশাদ হয়েছে, অবশ্যই আমি তাদেরকে এমন কিতাব দিয়েছি যা নিশ্চিত জ্ঞানের দ্বারা বিশদ ব্যাখ্যা করেছি, তা বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়েত ও করুণা। (সূরা আল আ’রাফ : আয়াত ৫২)।
মোট কথা, সকল নবী ও রাসূল উম্মতের নিকট আল্লাহ তায়ালার সংবাদবাহক ও দীনের প্রচারক ছিলেন। কেননা তাদের সকল কার্যক্রম আখবার প্রদান ও তাবলীগের মধ্যেই বিদ্যমান ছিল। কেননা নবীগণ সংবাদ দেন এবং রাসূলগণ সকল আহকাম কাক্সিক্ষত স্তর পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেন। একটি একটি অতি সুক্ষ্ম বিষয়। এই নাতিদীর্ঘ আলোচনার সারবস্তু হলো এই যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম ব্যতীত অন্য কোনো মানুষ মা’সুম বা নিষ্পাপ নয়।
আল আগরুল মুযানী হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা পিয়ারা নবী মুহাম্মাদ সা. দুই হাত উঁচু করে এ কথা বলতে বলতে আমাদের নিকট তাশরীফ আনয়ন করলেন এবং বললেন, হে লোকসকল, তোমরা তোমাদের পরওয়ারদিগারের নিকট ইস্তিগফার কর। অত:পর তার নিকট তাওবাহ কর। আল্লাহর কসম আমি প্রতিদিন আল্লাহর সমীপে ১০০ বার ইস্তিগফার ও তাওবাহ করি। এ প্রসঙ্গে উলামাগণ বলেন, রাসূল সা. এ কথা বলেছেন, কেননা তিনি সকল প্রকার গোনাহ হতে মা’সুম ছিলেন। তবে অন্যদের জন্য এমনটি শোভনীয় নয়। কারণ তারা মাসুম নন। তাদের গোনাহ হতে প্রত্যাবর্তন তাওবাহর মাধ্যমে সম্ভব। (সুনানে ত্বাহাভী : খ- ২, পৃ. ৩৬৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।