Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

থামছে না দিনারপুরের পাহাড় নিধন

ফখরুল আহসান চৌধুরী, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

নবীগঞ্জের দিনারপুরে শুরু হয়েছে পাহাড় নিধন উৎসব। নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি পাহাড়ি এলাকার পরিবেশ। নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর পরগনা বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়িয়া দ্বীপ হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করলেও পাহাড় খেকোদের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। সম্প্রতি দিনারপুরে পাহাড় কাটা নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হলে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপির নজরে আসে। তিনি খোঁজ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দিনারপুর অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষা ও পাহাড় খেকো চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরে মহা-পরিচালক (ডিজি) সুলতান আহমেদকে নির্দেশ দেন। এরপরই তদারকি শুরু করে স্থানীয় ভুমি অফিস ও পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপর কিছু দিন পাহাড় কাটা বন্ধ থাকে। কিন্তু প্রশাসনের নিয়মিত তদারকি না থাকায় আবারও অবৈধভাবে পাহাড় কাটা শুরু হয়েছে উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের লামরোহ, সাতাইহাল, গজনাইপুর, মামদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে। ফলে কয়েকশ’ বছর ধরে গড়ে ওঠা দিনারপুর পরগনার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের পরিবেশ, মাটি, পানি ও প্রাণবৈচিত্র্যের ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেই সঙ্গে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে সবুজ বনভুমি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে পাহাড় কাটতে পারবে না, কাটলে কমপক্ষে ১০ বছরের জেল কিংবা ১০ লাখ টাকার জরিমানা প্রদান করতে হবে। এমন আইন থাকলেও তার প্রয়োগ না থাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যক্তিগত লাভ, পরিবেশ সংক্রান্ত আইন প্রয়োগের অভাবসহ নানা কারণে বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, গজনাইপুর ইউনিয়নের লামরোহ গ্রামের খলিল মিয়ার ছেলে জয়নাল মিয়ার টিলা থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলের নির্দেশে কুতুব মিয়া নামের এক লোক বেশ কিছুদিন ধরে পাহাড় কেটে উজার করছে।

অপর দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই সাতাইহাল গ্রামস্থ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ির প্রবেশ পথেই উচুঁ একটি পাহাড় কেটে সমতল করছেন সাবেক ইউপি সদস্য তোয়াব মিয়া নামের এক লোক। পাহাড় কেটে সমতল করে বড় বাড়ি নির্মানের জন্য এমন কর্মকান্ড করছেন বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। এ ছাড়াও গজনাইপুর, মামদপুরসহ আরও কয়েকটি স্থানেই পাহাড়ের মাটি কাটা শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পরিবেশ বিধ্বংসী এই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জোড়ালো কোন ভুমিকা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এসব স্থানে কোন কোন সময় দিন-দুপুরে আবার কোন সময় রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে মাটি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে অন্যত্র। অনেক জায়গায় এক্সক্যাভেটর মেশিন দিয়ে পাহাড় কাটা হলেও প্রশাসন যেন নির্বিকার।

ক্ষুব্দ এলাকাবাসী বলছেন, প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় বিরামহীনভাবে এই পাহাড় কাটা হচ্ছে প্রশাসনের চোখের সামনেই। ওই অঞ্চলের এলাকাজুড়ে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে অনেক স্থাপনা।

এদিকে পাহাড় কাটার সাথে জড়িত কুতুব মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ‘স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলের নির্দেশে তিনি পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যবহার করছেন।’

কুবুব মিয়ার এমন বক্তব্যের সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হলে গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল বলেন ‘পাহাড় কাটার বিষয়ে আমি অবগত নই। কোথাও পাহাড় কাটা হয় বলেও আমি জানিনা।’

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিষয়টি আমি শুনেছি, ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবগত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ এমপির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দিনারপুর পাহাড়ি দ্বীপ হিসেবে সারাদেশে পরিচিত, যারা পাহাড় কাটছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ