Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হুমকির মুখে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ

ড্রেজারে বালু উত্তোলন

কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

 ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন। দ্রুত ড্রেজার অপসারণ করে ফসলি জমি ও রেললাইন রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসীর। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় রেলপথ লাগোয়া জমি থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এতে আশপাশের জমির মাটি ভেঙে গভীর কূপ সৃষ্টি হচ্ছে। বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।

দীর্ঘদিন ধরে এভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ফসলি জমির পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথও। এসব বিষয়ে অভিযোগ করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা। তারা দ্রুত বালু উত্তোলন বন্ধসহ ফসলি জমি ও রেললাইন রক্ষার জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। ভূমিদস্যরা অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে পার্শ্ববর্তী কৃষিজমি। জমি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় পার্শ্ববর্তী কৃষককে বাধ্য করা হচ্ছে তার কৃষিজমি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে। এভাবে পর্যায়ক্রমে পুরোটাই দখলে নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা। কৃষিজমি ভেঙে বিলীন হয়ে যাওয়ার ভয়ে এলাকার গরিব কৃষকরা আতঙ্কিত দিনযাপন করছেন।
স্থানীয় আমিনুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জেলার বুড়িচং উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ লাগোয়া পাইকোঠা, নারোরা, পাঁচোড়া, খোদাইতলীসহ আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট এলাকার বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট জমিতে ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বুড়িচং উপজেলার রেলপথ লাগোয়া পাইকোঠা গ্রামের জমিতে পাঁচটি ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলন করে রেললাইনের পাশে স্তূপ করছেন উপজেলার বাকশিমুল গ্রামের জামাল হোসেন। তিনি বলেন, যেখান থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তা অনাবাদি জমি, এগুলোতে ফসল হয় না। ভবিষ্যতে এখানে মাছ চাষ করা হবে। তাই বালু উত্তোলন করছি, এ বালু বিক্রি করা হবে।
আট জন জমির মালিক জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রভাবশালীরা জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে তাদের ফসলি জমিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অভিযোগকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, মাটি কাটা বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর প্রভাবশালীরা বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকিধমকি দেয়। এতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছি। এছাড়া ফসলি জমি রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছি।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছুসংখ্যক অসাধু মাটি ও বালু ব্যবসায়ী জমিতে আটটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ ফুট গভীর করে বালু উত্তোলনে রেললাইনের জন্য ম্যাক্স কোম্পানিতে সরবরাহ করছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম খান বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সরবরাহের জন্য কাউকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। এ ধরনের অভিযোগ পেলে কার্যাদেশ বাতিল করে দেওয়া হবে। এভাবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হলে জমিগুলো গভীর জলাশয়ে পরিণত হয়ে কৃষিতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

বুড়িচং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিদা আক্তার বলেন, অবৈধভাবে ড্রেজিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। কৃষি জমি, রেলপথ কিংবা পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, ইতিপূর্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অনেক ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করা হয়েছে। অবৈধভাবে কাউকে বালু উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ