Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইসলামপুরে আশ্রিতরা স্বপ্ন দেখছে ঘুরে দাঁড়াতে

ইসলামপুর (জামালপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

জামালপুর ইসলামপুরে যমুনা নদীর ভাঙনে নিঃস্ব পরিবারগুলোর মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিচ্ছে সরকারের গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প। প্রতিবছর নদী ভাঙনের শিকার যমুনাবর্তী মানুষগুলো পরিবার পরিজন নিয়ে যখন অন্যের ভিটা কিংবা খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে, তখন সরকারের দেয়া গুচ্ছগ্রামগুলো যেনো তাদের জন্য আর্শিবাদ। সম্প্রতি ইসলামপুর উপজেলায় যমুনার দূর্গমচর বেলগাছা ইউনিয়নের চরবরুল গুচ্ছগ্রামে ঠাঁই হয়েছে নদীভাঙা ৫০টি পরিবারের। গুচ্ছগ্রামে বিনামূল্যের ঘর পেয়ে আবারো ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।

গুচ্ছগ্রামে বিনামূল্যের ঘর পেয়ে নুরজাহান বেগম জানান, প্রায় ১২ বছর আগে বিয়ে হয় পাবনার জহুরুল ইসলামের সাথে। ২০০৯ সালে পাবনা থেকে জামালপুর আসার পথে সিরাজগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ডান হাত হারায় নুরজাহান, একমাত্র মেয়ে জান্নাতী তখন তার গর্ভে। সড়ক দুর্ঘটনায় হাত হারানোর পর স্বামী আর খোঁজ নেয়নি, দেখতে আসেনি একমাত্র মেয়ের মুখও। সদ্যজাত মেয়ে জান্নাতীকে নিয়ে নুরজাহানের আশ্রয় হয় বিধবা মায়ের ঘরে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই নদী ভাঙনে হারায় সেই আশ্রয়টুকুও। এরপর থেকেই বৃদ্ধ মা হাছেন বেওয়া আর মেয়ে জান্নাতীকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এবাড়ি থেকে অন্যবাড়ি। অবশেষে সব হারানো নুরজাহানের আশ্রয় হয়েছে চরবরুল গুচ্ছগ্রামে। সরকারের দেয়া বিনামূল্যের ঘর পেয়ে একমাত্র মেয়ে জান্নাতী আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে নুরজাহান। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে সরকারের দেয়া প্রতিবন্ধী ভাতা আর হাঁস মুরগী পালন করে সংসার চালাচ্ছে নুরজাহান। শুধু নুরজাহানই নয়, বেলগাছা ইউনিয়নে যমুনার ভাঙনে শতাধিক পরিবারের আশ্রয় হয়েছে চরবরুল গুচ্ছগ্রামের দুটি গুচ্ছ গ্রামে। এক সময়ের অবস্থাশালী এসব পরিবারগুলো নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে আশ্রয়হীন অবস্থায় দিনযাপন করছিলো, সরকারের দেয়া ঘর এবং জমি পেয়ে আবারো ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছেন তারা। বাড়ির আঙিনায় চাষ করছেন শাকসবজি, লালন পালন করছেন গবাদি পশু। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নে যমুনা নদী বেষ্টিত দূর্গমচর চরবরুল গ্রামে ৭৫ লাক্ষ টাকা ব্যয়ে গুচ্ছগ্রামে নলকূপ শৌচাগারসহ ৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। গত ২৩ অক্টোবর নদী ভাঙনে আশ্রয়হীন ৫০টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করে উপজেলা প্রশাসন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানান, প্রতি বছর যমুনা নদীর ভাঙনে শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়, তাতে আশ্রয়ের জন্য গুচ্ছগ্রামের এই ৫০টি ঘর যথেষ্ট নয়, আরো গুচ্ছগ্রাম বৃদ্ধির দাবি তাদের।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন যমুনার এই দুর্গম চরে অনেক কষ্ট করে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। আশ্রয়হীন ৫০টি পরিবারের মাঝে এসব ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। গেলো ভয়াবহ বন্যায় চরাঞ্চলের একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিলো কয়েকটি গুচ্ছগ্রাম। উচুঁ হওয়ায় বন্যায় গুচ্ছগ্রামগুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান এড. জামাল আব্দুন নাছের বাবুল বলেন, সরকার আশ্রয়হীদের গুচ্ছগ্রামে বিনামূল্যে ঘর দিয়েছেন, সেই সাথে গুচ্ছগ্রামগুলোতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্কুল প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ