রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
পদ্মার ভাঙনে কৃষিজমি, বাড়িঘর, সরকারি স্থাপনা, স্কুল মাদরাসা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের। কুষ্টিয়ায় পদ্মায় কমছে পানি, ভাঙছে পাড় ও স্থাপনা আর বাড়িঘর। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ভাটিতে পদ্মার ডানপাড়স্থ কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ২নং বহলবাড়িয়া ও ৩নং তালবাড়িয়া দুই ইউনিয়নের ৭ কি..িম এলাকায় প্রবল ভাঙনে কৃষিজমি, বাড়িঘর, সরকারি স্থাপনা, স্কুল মাদরাসা ইতোমধ্যেই বিলীন হয়েছে গেছে।
এছাড়া উত্তরবঙ্গের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগে একমাত্র মহাসড়কটিও চরম ঝুঁকিতে। এলাকা ভাঙনের অন্যতম কারণ হিসেবে অবৈধ বালিঘাটকে চিহ্নিত করে আক্রান্তদের দাবি অবিলম্বে দীর্ঘদিনের এই ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের। সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেন প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
মিরপুর উপজেলার ২নং বহলবাড়িয়া ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ১৫ বছরের নদী ভাঙনে ৯টি গ্রাম বিশিষ্ট ১৮ দশমিক ৮৬ বর্গ কি.মি. আয়তনের ইউনিয়নটির ৩টি গ্রামসহ ১৮ দশমিক ৮৬ হেক্টর জমির মধ্যে অন্তত: সাড়ে ৪শ’ হেক্টর কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। এর ফলে সাড়ে ৭শ’ কৃষক পরিবার এখন ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীতে পরিনত হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানার অভিযোগ, ‘একেতো নাচুনী বুড়ি তার উপর ঢাকের বারি’, একদিকে ভয়াল পদ্মার ভাঙনে জায়গা জমি বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন হচ্ছে সেই সাথে সা¤প্রতিক কালের ভাঙনের জন্য প্রধানত দায়ি অবৈধ বালিঘাট। এখানে সরাসরি নদী থেকে পানি মিশ্রিত বালি নদীর মধ্যে থেকে ২শ’ বা ৩শ’ মিটার দূরে সমতল কৃষি জমিতে পাহাড় সমান উঁচু করে রাখছে। এই বালির পানি ভু-গর্ভস্থ হয়ে নদীর পানির সাথে সংযোগ হওয়ার ফলে গলন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সমতল জমি ধসে নদী গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। মিরপুর ৩নং তালবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বিগত ১০ বছরের নদী ভাঙনে ১৪টি গ্রাম বিশিষ্ট ১৬ দশমিক ২৬ বর্গ কি.মি. আয়তনের ইউনিয়নটির ৭টি গ্রামসহ ১৬শ’ ৪৫ হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে সাড়ে ৭শ’ হেক্টর আবাদি কৃষি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। সেই সাথে প্রায় এক হাজার কৃষক পরিবার সবকিছু হারিয়ে এখন গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা হয়েছেন। মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া গ্রামের ঝর্না খাতুন বলেন, ২০ পূর্বে আমার বিয়ের সময় শশুরবাড়ি ছিলো স্বচ্ছল কৃষি নির্ভর। কিন্তু এখন সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব কয়েকবার ভাঙনের শিকার হয়ে এবছর শেষ সম্বল মাথা গোজার ঘরটিও ভেঙে গেলো। এক সময়ে স্বামী আমানত কৃষি কাজ করলেও এখন সে ভ্যানচালিয়ে জীবনধারণ করে। সর্বনাশা এই ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি তার। তালবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মন্ডল বলেন, দীর্ঘদিনের ভাঙনে ইতোমধ্যে ইউনিয়নের ৩ ভাগের দুইভাগ নদীগর্ভে চলে গেছে।
সর্বশেষ এখন যেভাবে ভাঙছে তাতে মিরপুর উপজেলার মানচিত্র থেকে খুব শীঘ্রই তালবাড়ি ইউনিয়ন হারিয়ে যাবে। সেই সাথে কুষ্টিয়া-ঈশ^রদী-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কটিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। জরুরি ভিত্তিতে পদ্মার ভাঙন থেকে রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি তার।
সরেজমিনে ভাঙন প্রবন এলাকায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে বালির বস্তা ফেলে ঠেকানোর চেষ্টা কাজের তদারকিরত শাখা কর্মকর্তা অসীম সরকার বলেন, এখানকার ভাঙনের যে তীব্রতা তাতে আমরা জনবল লাগিয়ে যা ফেলছি তার সবই গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে। এর একমাত্র সমাধান বড় কোন প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, পদ্মার ভাঙন কবলিত ৭কি.মি. এলাকায় ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞ টিমের পরামর্শক্রমে প্রকল্প প্রনয়ন ও প্রেরণ করা হয়েছে। সেটা এখন প্রি-একনেক পর্যায়ে আছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। অনুমোদন পেলে এই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, পদ্মার ভাঙন রোধে প্রেরিত প্রকল্প অনুমোদন পেলে স্থায়ী ব্যবস্থা হবে। সেই সাথে ওই এলাকায় বালিঘাটের কারণে যদি ভাঙনের তীব্রতা বেশী হয় এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।