Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লোকসানে লবণ চাষে অনীহা চাষিদের

আসছে চোরাই পথে, বাড়ছে আমদানি

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

নভেম্বরের শুরু থেকেই লবণ উৎপাদন মৌসুম। কিন্তু এখনো মাঠে নামার লক্ষণ নেই চাষিদের। গত কয়েক বছর ধরে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনের পরও লবণের ন্যায্য ম‚ল্য পাচ্ছেনা প্রান্তিক চাষিরা। কক্সবাজারের মিল ও মাঠে লাখ লাখ মেক্ট্রিক টন উৎপাদিত লবণ মজুদ রয়েছে এখনও। কিন্তু চোরাই পথে বন্ধ হয়নি লবণ আমদানি।

গত মৌসুমের উৎপাদিত অন্তত ৬ লাখ মে.টন লবণ রয়েছে উদ্বৃত্ত। তবু বিভিন্ন অজুহাতে ঢুকেছে ভারতীয় লবণ। সর্বশেষ জুলাই মাসের শেষের দিকে শুধু তৈয়বুর রহমান নামের এক ব্যক্তির আমদানি করা ১১ ট্রাক ভারতীয় লবণ জব্দ করে প্রশাসন। এসব কারণে দেশীয় লবণ মাঠে মার খাচ্ছে। উৎপাদিত লবণে মজুরি খরচও উঠবেনা কিনা এ সন্দেহে মাঠে নামতে চাচ্ছেনা চাষিরা। অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে লবণ ঋণের ঘোষণা দেয়া হলেও কার্যত তা বাস্তবায়নের কোন লক্ষণ নেই। নানা জটিলতা দেখিয়ে ব্যাংকগুলো ঋণদানে অনাগ্রহী। মাঠ পর্যায়ে ৮০ কেজির লবণের বস্তা বিক্রি হয় ৩০০-৩৫০ টাকা দরে। সে হিসেবে প্রতি কেজির দাম পড়ে মাত্র ৪ টাকা। যা দিয়ে মজুরি বা উৎপাদন খরচও সামাল দিতে পারেনা চাষিরা। অথচ বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত লবণ বিক্রি করা হয় প্রায় ৪০ টাকা। উৎপাদনের পর থেকে বাজারে পৌঁছা পর্যন্ত অন্তত ৩টি হাত বদল হয় লবণের। প্রত্যেকে লাভবান হলেও কেন লোকসান গুনতে হয় চাষিদের। এদিকে অপরিশোধিত লবণ পরিশোধন করে খাবার উপযুক্ত ও বাজারজাত করতে কেজিতে সর্বোচ্চ ১ থেকে দেড় টাকা খরচ পড়বে। সে হিসেবে এক কেজি লবণের দাম হওয়ার কথা সাড়ে ৫ টাকার নিচে। কিন্তু বাজারে ভোক্তারা কিনছে প্রায় ৪০ টাকায়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয় স‚ত্র জানায়, ২০১৯-২০ মৌসুমে বিসিকের চাহিদা ১৮ লাখ ৪৯ হাজার মে.টন। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার মে.টন। গত ২০১৮-১৯ মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় উৎপাদনযোগ্য লবণ জমির পরিমাণ ছিলো ৬০ হাজার ৫৯৬ একর। চাষির সংখ্যা ২৯ হাজার ২৮৭ জন।
গত মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ লাখ মে. টন। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ২৪ হাজার মে.টন। যা বিগত ৫৮ বছরের লবণ উৎপাদনের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। কিন্তু ন্যায্যম‚ল্য না পাওয়ায় চলতি মৌসুমে অর্ধেক চাষিও মাঠে নামবে কিনা এতে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম আজাদ জানান, কালো বাজারি, উৎপাদিত লবণের ন্যায্যম‚ল্য না পাওয়া ও বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেটের কারণে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় লবণ শিল্প। মাঠে ও মিলে পড়ে রয়েছে অন্তত ৬ লাখ মেট্রিক টন অবিক্রিত লবণ। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কালো বাজারিদের লবণ আমদানির কারণে দেশীয় লবণ খাত মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারছেনা। পিছিয়ে যাচ্ছে দেশের এই গুরুত্বপ‚র্ণ খাত। দরপতন অব্যাহত থাকলে চলতি মৌসুমে লবণ চাষিরা মাঠে যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
লবণ মিল মালিকদের একটি সুত্র জানিয়েছে, বিসিকের কিছু সিনিয়র পর্যায়ের অসাধু কর্তা কালোবাজারিদের আমদানির সুযোগ করে দিয়ে থাকে। উদ্বৃত্ত থাকার পরও প্রতি বছর লবণ আমদানি করা হয়। রপ্তানীর কথা বলে আমদানিকৃত টেক্স ফ্রি সোডিয়াম সালফেট ছড়িয়ে দিচ্ছে স্থানীয় বাজারে। যে কারণে বারবার দেশীয় লবণশিল্প মার খাচ্ছে।
বিসিক কক্সবাজারের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সৈয়দ আহামদ জানান, বিসিকের চাহিদার তুলনায় প্রচুর লবণ মজুদ আছে। তবুও একটি অসাধু শ্রেনী সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট’এর নামে চায়না-ইন্ডিয়া থেকে ‘সুডিয়াল সালফেট’ আমদানি করেছে। তারা স্থানীয় বাজার থেকে কোনো লবণ কিনেনি। যে কারণে দাম পাচ্ছেনা লবণ চাষিরা।
চাষিদের লবণ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। এ জন্য ব্যানার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল বিতরণসহ নানামুখি প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও দাবি করেন বিসিকের ডিজিএম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ