রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
মাদারীপুরের পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, কুমার, পালরদী নদীর অব্যাহত ভাঙনে মাদারীপুর জেলার ভৌগলিক মানচিত্র পরিবর্তন হচ্ছে। প্রায় প্রতিবছরই বর্ষায় নদীগুলো আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ফুঁসে উঠায় জেলার তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চল এলাকায় আঘাত হেনে ক্রমশ গিলে খাচ্ছে গাছপালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল ঘর-বাড়ি ও জমি।
চলতি বছর পদ্মা নদীতে দুই দফা পানি বাড়ার সঙ্গে মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভয়াবহ ভাঙন আক্রান্ত হয় চরজানাজাত, বন্দরখোলা ও কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন। ৩ সপ্তাহে চারটি বিদ্যালয় ভবন, ৬ শতাধিক ঘরবাড়িসহ চরজানাজাত ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, খাসেরহাটের অর্ধশত দোকান বিলীন হয়। গত ১০ বছরে এ উপজেলায় ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সাড়ে ৬ হাজার পরিবার নদী ভাঙনে আক্রান্ত হয়ে নিঃস্ব হয়। দক্ষিণ বহেরাতলায় ইউনিয়নের প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বাঁধের ৫০ মিটারসহ ২০টি ঘরবাড়ি, নিলখী ইউনিয়নের ১টি মাদরাসাসহ ৪০টি ঘরবাড়ি, দত্তপাড়া ইউনিয়নের মহাসড়ক রক্ষা বাঁধের ৫ শ’ মিটার বাঁধসহ ৫০টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
সন্ন্যাসীরচর ইউপি চেয়ারম্যান রউফ হাওলাদার জানান, সাম্প্রতিক আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে তার বাড়িসহ ইউনিয়নের ৩শ’ ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
শিবচরের ইউএনও মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী শিবচরের ৮টি ইউনিয়ন। চলতি বছর পদ্মা নদীর ভাঙন আক্রান্ত হয়েছে তিনটি ইউনিয়ন। এ পর্যন্ত চারটি স্কুল, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাটবাজার, পাকা রাস্তাসহ ৬ থেকে ৭ শতাধিক ঘরবাড়ি আক্রান্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ সামগ্রী ও বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজৈর উপজেলায় কুমার নদের অব্যাহত ভাঙনে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া দুটি রাস্তা কুমার নদে বিলীন হয়ে যাওয়ায় মানুষের যোগাযোগে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। আরও শতাধিক বাড়িঘর রয়েছে ঝুঁকির মুখে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এ উপজেলার কুমার নদের পাড়ে বসবাসকারি চারটি ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের ২ শতাধিক পরিবার। উপজেলার গাংকান্দি শাখারপাড় এলাকার রাস্তাটি ভেঙে কুমার নদে চলে গেছে। টেকেরহাট কালীবাড়ি ফিডার সড়কের গোয়ালবাথান নামক স্থানে পাকা রাস্তাটি নদে বিলীন হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, নদীর ২পাড়ের ১২টি গ্রামের প্রায় একহাজার পরিবার বসবাস করে। নদের ভাঙনের কবলে পড়ে এরই মধ্যে কিছুসংখ্যক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। পরিবর্তন হয়ে গেছে তাদের বাপ দাদার ঠিকানা।
নদীর অব্যাহত ভাঙনে উপজেলা সাহেবরামপুর এলাকার লঞ্চঘাট প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ ও বাজারসহ ওই গ্রামের কয়েক শত বসতবাড়ি রক্ষা ও দ্রুত বাঁধ নির্মাণ এবং হাজারো কোটি টাকার সম্পদ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ভিটে বাড়ি হারানো কয়েক শত মানুষ। বর্তমানে ভাঙনের কবলে রয়েছে ৭১নং স্বস্থাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাহেবরামপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, কেন্দ্রীয় মসজিদ, ঈদগাঁহ ও একটি বাজারসহ অসংখ্য বসতবাড়ি এবং বিস্তীর্ণ এলাকা। সিডি খানের অনেক বসতভিটা, কৃষি জমি, বাজার, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনাসহ গোটা জনপদ হারানোর ভয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছে ওই ২ ইউনিয়নের প্রায় বিশ হাজার মানুষ। অবিলম্বে নদী ভাঙন রোধ করা না হলে ভৌগোলিক পরিবতর্ন পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে।
কালকিনির ইউএনও মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মাহাফুজুর রহমান। ভাঙন রোধে ৩৯ দশমিক ৬শ’ কিলোমিটার ড্রেজিং করাসহ গুরুপূর্ণ এলাকায় তীর সংরক্ষনের জন্য মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আড়িয়াল খাঁ নদীর অব্যাহত ভাঙনে মাদারীপুর শহর রক্ষা বাধসহ আশেপাশের ৫০টি বাড়িঘর নদী ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। নদী ভাঙনের কবলে রয়েছে সদর উপজেলার কালিকাপুর চরনাচনা পাচখোলা জাজিরা মহিষেরচর গ্রাম। হারিয়ে যাচ্ছে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘুন্সি গ্রামটিও।
ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মকতারা ভাঙন রোধে পর্যাপ্ত ব্লক ও জিও ব্যাগ তৈরি করেছে এবং জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে বলে জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ সাহা বলেন, মাদারীপুর শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় ইতোমধ্যে যে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছিলো তা মেরামত করা হয়েছে। শহর রক্ষা বাঁধ যাতে কোন ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় সি সি ব্লক মজুদও রয়েছে ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।