পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে গুলশানের অস্ত্র মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছেন র্যাব। গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয় র্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন। যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া একজন ভয়ঙ্কর আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসী। এলাকায় তিনি গড়ে তোলেন বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী। খালেদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র আইনে করা মামলার অভিযোগপত্রে এমনটিই উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলায় জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল দুপুরে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. আল মামুন এ আদেশ দেন। এর আগে একই আদালত এ মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এছাড়া অস্ত্র মামলায় কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার জি কে শামীমের বিরুদ্ধেও আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে র্যাব। মামলা করার এক মাসের মাথায় স¤প্রতি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ১৯৯৬ সাল থেকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী যুবলীগে সম্পৃক্ত হন। ২০১২ সালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এলাকায় বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি একজন ভয়ঙ্কর আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসী হিসেবে এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত হন। ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল, শাহজাহানপুর, মুগদা, কমলাপুর, রামপুরা সবুজবাগসহ আশপাশের এলাকায় তিনি সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। সাধারণ মানুষ তার ভয়ে আতঙ্কিত ছিল।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ঢাকা মতিঝিল ইয়ংমেন্স ক্লাবসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবে জুয়া, ক্যাসিনো, মাদকের রমরমা ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছিলেন। খিলগাঁও শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী গণপরিবহন থেকে নিয়মিত মোটা অংকের চাঁদা আদায়, প্রতি ঈদে শাহজাহানপুরের কলোনি মাঠে মেরাদিয়া এবং কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ, খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতি রাতে শক্তির দাপট দেখিয়ে মাছের হাট বসিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করা ছিল তার নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। অবৈধ জুয়া, মাদক, ক্যাসিনো ব্যবসা, টেন্ডারবাজি ও রাজনৈতিক দাপট বিস্তার করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করার জন্য নিজ হেফাজতে অবৈধ অস্ত্র রেখেছেন মর্মে উল্লেখ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এর মাধ্যমে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ধারায় তিনি অপরাধ করেছেন মর্মে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে ‘ক্যাসিনো’ চালানোর অভিযোগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর গুলশানের নিজ বাসা থেকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক করে র্যাব। এ সময় তার বাসা থেকে একটি অবৈধ পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি, ২০১৭ সালের পর নবায়ন না করা একটি শর্ট গান ও ৫৮৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এর পরদিন দুপুরে তাকে গুলশান থানায় নেয় র্যাব। একই দিন র্যাব-৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে গুলশান থানায় অস্ত্র, মাদক ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেন। আর মতিঝিলি থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন র্যাবের ওয়ারেন্ট অফিসার চাইলা প্রæ মার্মা।
শামীম-খালেদের ৭ দিনের রিমান্ড
গত ২২ অক্টোবর দুদক আসামিদের গ্রেপ্তার দেখানোসহ ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। ওইদিন বিচারক ২৭ অক্টোবর আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানির দিন ঠিক করেন। গতকাল শুনানিকালে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক প্রথমে আসামিদের স্ব স্ব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর রিমান্ড আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানিতে আসামি খালেদের পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহ আলম এবং জিকে শামীমের পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মোল্লা রিমান্ড বাতিল করে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল রিমান্ডের পক্ষে এবং জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেক আসামির সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ২১ অক্টোবর এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি আট লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী এই মামলা করেন। অন্যদিকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদের অর্জনের অভিযোগে উ-পপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলাগুলোয় আদালত যথাক্রমে আগামী ১৯ নভেম্বর এবং ১৮ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য তারিখ ঠিক করেছে আদালত।
শামীমের মামলায় বলা হয়, ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ পর্যন্ত আসামি শামীম ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে আয়কর নথিতে ৪০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ টাকার তথ্য উল্লেখ করলেও ওই টাকার বৈধ উৎস পায়নি দুদক। এ ছাড়া তার বাসা থেকে উদ্ধারকৃত নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও সাত লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা, শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, মায়ের নামে আরো ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদার এবং জি কে বি এন্ড কোম্পানির শেয়ার, গাড়ি ও এফডিআর বাবদ ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎসও পায়নি দুদক।
অন্যদিকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার মামলায় বলা হয়, এই আসামি চার কোটি ৫০ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৯০ লাখ ১৬ হাজার ৭০৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গত ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাবের অভিযানে তার গুলশানের বাসা থেকে ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ টাকার বিভিন্ন দেশের মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। যার কোনো উৎস দেখাতে পারেননি খালেদ। তাই তার বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, খালেদ গত ১৮ সেপ্টেম্বর এবং গত ২০ সেপ্টেম্বর জিকে শামীম ক্যাসিনোবিরোধী অভিযোনে গ্রেপ্তার হন। এরপর দুজনকেই অস্ত্র, মানিলন্ডরিং ও মাদক মামলায় বিভিন্ন দফায় রিমান্ড শেষে গত ১৩ অক্টোবর কারাগারে পাঠানো হয়।
জি কে শামীমের বিরুদ্ধে চার্জশিট
অস্ত্র মামলায় কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার জি কে শামীমের বিরুদ্ধেও আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে র্যাব। মামলা করার এক মাসের মাথায় স¤প্রতি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। আদালত সূত্র বলছে, জি কে শামীমসহ তার সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় রোববার অভিযোগপত্র জমা দেন র্যাব-১ এর এসআই শেখর চন্দ্র মল্লিক।
জি কে শামীমসহ তার সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে দেয়া চার্জশিটে বলা হয়, জি কে শামীম একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক এবং জুয়ার ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তার সহযোগীরা উচ্চ বেতনভোগী দুষ্কর্মের সহযোগী। তারা অস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে এসব অস্ত্রশস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করেছেন। এর মাধ্যমে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসাসহ স্থানীয় বাস টার্মিনাল ও গরুর হাট-বাজারে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। আসামি শামীম অস্ত্রের শর্ত ভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদক ব্যবসা ও মানিলন্ডারিং করে আসছিলেন। অস্ত্র মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত শামীমের সাত দেহরক্ষী হলেন- নওগাঁর দেলোয়ার হোসেন, গোপালগঞ্জের মুরাদ হোসেন, বাড্ডার জাহিদুল ইসলাম, যশোরের শহিদুল ইসলাম, ভোলার কামাল হোসেন, নীলফামারীর সামসাদ হোসেন ও বাগেরহাটের আমিনুল ইসলাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।