Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ক্ষুধার তাড়নায় বানর দলবেঁধে হানা দিচ্ছে লোকালয়ে

খাদ্য কর্মসূচি বন্ধ : অতিষ্ঠ মাদারীপুর শহরবাসী

আবুল হাসান সোহেল, মাদারীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বানরদের জন্য মাদারীপুর জেলা পরিষদ ও বন বিভাগের সকল খাদ্য কর্মসুচি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরম খাদ্য সংকটে দুই সহস্রাধিক বানর এখন বেপরোয়া হয়ে মূল পৌর শহরে ঢুকে পড়েছে। ক্ষুধার তাড়নায় এ সব বানর দলে দলে মহল্লার বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে মানুষের ঘরের খাদ্য-সামগ্রী, ধ্বংস করছে গাছের ফলফলাদী, কেড়ে নিচ্ছে স্কুলগামী শিশুদের টিফিনবক্স। হাট-বাজার করে বাড়ি ফেরার পথে মানুষের হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিচ্ছে। বাঁধা দিলে বা তাড়া করলে দল বেঁধে হামলা করে কামড়ে আহত করছে অনেককে। রান্নাঘরে রান্না করার সময় লাঠি নিয়ে পাহারা দিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা ঘর থেকে বের হয়ে একা চলাফেরা করতে পারছে না। সুযোগ পেলেই কামড়ে দিচ্ছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। মোট কথা, বানরের অত্যাচারে শহরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। শহরের পাঠককান্দি, হরিকুমারিয়া, চরমুগরিয়া, খাগদি, পাকদি, থানতলী, তরমুগরিয়া, পুরান বাজার, মাস্টার কলোনী, উকিলপাড়া, সরদার কলোনী ও নতুন শহর এলাকা এখন বানরের রাজ্যে পরিণত হয়েছে।

জেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এক সময় মাদারীপুরে ১০ সহস্রাধিক বানরের বসবাস ছিলো। পঞ্চাশের দশকেও জেলা সদরের সর্বত্র দল বেধে বানরগুলো বিচরণ করতো। তখন কুলপদ্মীর হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন বানরকে দেবতা মনে করে কলা, মোয়া, মুড়ি, চিড়া, খৈ, মুড়কি, বিস্কুট ও নানা প্রকার ফলমূল খেতে দিতো। ধীরে ধীরে হিন্দু বসতি হ্রাস পাওয়ায় এবং বন-জঙ্গল উজাড় হতে থাকায় আস্তে আস্তে বানরগুলো পৌর এলাকার চরমুগরিয়া বন্দরে থাকতে শুরু করে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে চরমুগরিয়া বন্দরে বানর ছিলো প্রায় সাড়ে সাত হাজার। তখন চরমুগরিয়া জেটিসির মাঠে বানরদের জন্য একটি অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়। কিন্তু ঐ সব এলাকা ক্রমাগতভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় আশ্রয়হীন বানরকুল খাদ্য সংকটে পড়ে। আশ্রয়হীন ও রোগাক্রান্ত বানরগুলো ক্ষীণকায় হয়ে মারা যেতে থাকে। এভাবে কমতে কমতে ১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকে বানরের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। এরা তখন মাড়োয়াড়িদের জেটিসি, আদমজী, ইস্পাহানী, লতিফ বাওয়ানীসহ বিভিন্ন পাট কোম্পানির পরিত্যক্ত গুদাম, স্কুল-কলেজ, মানুষের বাড়ি-ঘরে সানশেড, টিনের চালার নিচে অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে কোন রকম থাকতে শুরু করে। ক্ষুধার তাড়নায় বানরগুলো এখন ছোট ছোট দলে বিভক্ত মূল শহরে তান্ডব চালাচ্ছে। সামাজিক বন বিভাগ ফরিদপুরের তত্বাবধানে এক সময় এ সব বানরের জন্য খাদ্য সরবরাহ কর্মসূচি চালু ছিলো। কিন্তু এ কর্মসূচি বেশিদিন চালু রাখা হয়নি।

মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা দীপক রঞ্জন সাহা বলেন, ‘২০০৬-০৭ অর্থ বছরে ১২ লাখ ১৯ হাজার, ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ১১ লাখ ৭৮ হাজার, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে ৫ লাখ ৬১ হাজার, এর পর দুই বছর বন বিভাগের বরাদ্দ বন্ধ থাকে। আবার ২০১১-১২ অর্থ বছরে ২ লাখ, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৩ লাখ, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ২ লাখ ৪০ হাজার, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ২ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা দুই সহস্রাধিক বানরের জন্য খাদ্য বরাদ্দ ছিলো। বর্তমানে বন বিভাগের বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম খাদ্যাভাবে এ সব বানর বেপরোয়া হয়ে মানুষের বাড়ি-ঘরে হানা দিচ্ছে।’

মাদারীপুর জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা লতিফা ইয়াসমিন বলেন, ‘জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটানা ৭ বছর বানরের খাদ্য কর্মসূচি চালু ছিলো। প্রথমে অর্থাৎ ২০১০-১১ অর্থ বছরে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ লাখ ৪ হাজার ৪০৬ টাকা। ২০১১-১২ অর্থ বছরে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫১ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫৯৩ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬০ টাক্ া২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮০ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩০ টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৫৭ হাজার ৯৭০ টাকা। এরপর আর কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এ ব্যাপারে এগিয়ে আসেনি। তবে এবার জিলা পরিষদ থেকে বরাদ্দের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে পত্র প্রেরণের জন্য সম্প্রতি একটি সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ