পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জি. কে. বিল্ডার্সের মালিক যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) তার মা আয়েশা আক্তার এবং যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার সংস্থার উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে পৃথক দু’টি মামলা করেন। তবে অনুসন্ধান এবং অনুসন্ধানলব্ধ তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই মামলা দু’টি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করছে দুদক।
জি কে শামীম এবং তার মায়ের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে আনা হয় ৫ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা। এর মধ্যে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। তার মায়ের বিরুদ্ধে একই ধারার সঙ্গে ফৌজদারি দন্ডবিধির ১০৯ ধারা যুক্ত করা হয়। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধেও দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। তবে তার সঙ্গে কাউকে সহযোগী আসামি করা হয়নি।
জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এজাহারের তথ্য মতে, জি কে শামীম ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে আয়কর নথিতে ৪০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ টাকার তথ্য উল্লেখ করেন। তবে এ অর্থের কোনো বৈধ উৎস এখনো দুদক পায়নি। এ ছাড়া শামীমের অফিসকক্ষ থেকে উদ্ধারকৃত নগদ ১ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, মায়ের নামে আরো ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদার এবং জি কে বি এন্ড কোম্পানির শেয়ার, গাড়ি ও এফডিআর বাবদ ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদেরও বৈধ কোনো উৎস পায়নি দুদক। জি কে শামীমের মা আয়েশা আক্তারের কোনো বৈধ আয়ের উৎসও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৯০ লাখ ১৬ হাজার ৭০৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎসের হদিস মেলেনি বলে উল্লেখ করা হয় এজাহারে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাবের অভিযানে তার গুলশানের বাসা থেকে ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ টাকার বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। দুদকের অনুসন্ধানে কিংবা জিজ্ঞাসাবাদে এর কোনো উৎস দেখাতে পারেনি খালেদ মাহমুদ। অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগে উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে দুদক আইনে ২৭(১) ধারায় মামলা দায়ের করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অভিযানে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশ কয়েকজন নেতার ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। ঘটনার পরপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করে সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টিম। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, সালাউদ্দিন আহমেদ, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।
উল্লেখ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেলে দুদক সাধারণত কমিশনের অনুমতিক্রমে দীর্ঘ সময় ধরে অনুসন্ধান পরিচালনা করে। অনুসন্ধান কার্যক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সকল ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ডাক অধিদফতর, পুঁজিবাজার, জয়েন্ট স্টক, নিবন্ধন অধিদফতর, ভূমি অফিস, রাজউক, সিটি ও পৌর করপোরেশন, বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসহ অন্তত ২৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য চাওয়া হয়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অবৈধ সম্পদ রয়েছে- মর্মে প্রতীয়মান হলে অনুসন্ধান কর্মকর্তা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিস জারির সুপারিশ করেন। কমিশন অনুমোদন দিলে তাকে দুদক আইনের ২৬(১) ধারায় সম্পদ বিবরণীর নোটিস জারি করা হয়। সম্পদ বিবরণী দাখিল করা হলে ওই বিবরণীতে উল্লেখিত তথ্যাদি যাচাইয়ে ২৪ থেকে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়। প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী গরমিল হলে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপনসহ বিভিন্ন অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা করা হয়। অভিযোগপ্রাপ্তি থেকে মামলা দায়ের পর্যন্ত ৩ মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত সময়ক্ষেপণ করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু জি কে শামীম, তার মা আয়েশা আক্তার এবং খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ক্ষেত্রেই ঘটল এর ব্যতিক্রম। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই না করেই দ্রæততম সময়ের মধ্যে ঠুকে দেয়া হয়েছে মামলা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, দুদক সচিব দিলোয়ার বখত বলেন, মামলা দায়েরের জন্য যেটুকু তথ্য প্রয়োজন দুদকের হাতে সেটি রয়েছে। প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানও করা হয়েছে। কমিশন অনুমোদন দেয়ার পরই মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেনতেন প্রকারে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করলে বিচারে সেটি টিকবে কি না কিংবা শুধু একটি ধারা (২৭/১) প্রয়োগ করলে আসামি সুফল পাবে কি না জানতে চাওয়া হয় দুদকের একজন পরিচালকের কাছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, সম্পদের তথ্য গোপন করা হলে দুদক আইনের ২৬(২) ধারাটি যুক্ত করা হয়। তবে ২৬(২) এবং ২৭(১) ধারা দু’টি একসঙ্গেই প্রয়োগ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপন দু’টি আলাদা অপরাধ। এ দু’টি মামলার ক্ষেত্রে শুধু অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার তদন্তকালে যদি সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আসে এবং প্রমাণ মেলে তাহলে তদন্ত প্রতিবেদনে ওই ধারা যুক্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়। এতে মামলাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। আসামিও বিশেষ কোনো সুবিধা পাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।