পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজির শত শত কোটি টাকা মালয়েশিয়া, দুবাই, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ সাত দেশে পাচার করেছে ক্যাসিনো সম্রাট। শিগগিরই তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা হচ্ছে। পুলিশ, সাংবাদিক ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিদিন চাঁদার টাকার অংশ পাঠাতেন সম্রাট। মাসে একবার জুয়া খেলতে যেতেন সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে ক্যাসিনোতে। সাথে নিতেন লাগেজভর্তি ডলার। ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়েই তিনি বিমানে উঠতেন। তবে লাগেজ চেক করা দূরের কথা কখনই তাকে দেহ তল্লাশি করা হতো না। ১০ দিনের রিমান্ডে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট । একটি সংস্থার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মাদক ও অস্ত্র মামলায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার রাতে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা মাদক মামলায় সাত দিন ও অস্ত্র মামলায় সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে ভাটারা থানার তদন্ত কর্মকর্তা মাদক মামলায় ১০ দিন ও অস্ত্র আইনে মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে রাজীবের।
চাঁদার ভাগ পেতেন যারা
ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ক্যাসিনোর চাঁদার ভাগ ২০ জনকে দিতেন। এদের মধ্যে সাতজন সরাসরি চাঁদার টাকা নিতেন। এদের মধ্যে দুইজন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা, তিনজন সংসদ সদস্য (এমপি) এবং দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশের যে দু’জন কর্মকর্তাকে চাঁদা দিতেন সম্রাট তারা এডিসি সমমর্যাদার কর্মকর্তা। তবে তাদের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের পকেটেও চাঁদার টাকা পৌঁছে যেত। অস্ত্র ও মাদক আইনে করা দুই মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে এসব তথ্য জানিয়েছে বলে একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানান, মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, আরামবাগ ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। পাশাপাশি ইয়াংমেন্স ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ ছিল যৌথভাবে সম্রাট ও যুবলীগের (বহিষ্কৃত) সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার হাতে। সম্রাট এই ছয়টি ক্লাবের ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন রাতে ৭ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন। এছাড়াও গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, আদর্শ মহানগর মার্কেট, ফুলবাড়িয়া ও বঙ্গবাজারের চারটি মার্কেট থেকে প্রতি রাতে ১ লাখ টাকা আসত তার কাছে। এসব টাকার ভাগ সরাসরি ৭ জনকে দিতেন বলে দাবি করেছেন সম্রাট। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর আত্মগোপনে চলে যান যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা সম্রাট । নানা গুঞ্জনের পর ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে গ্রেফতার করে র্যাব।
সম্রাটের সহযোগী আরমান ফের রিমান্ডে
সম্রাটের সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানকে মাদক মামলায় ফের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ৫ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল সোমবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১ এর এসআই মো. হালিম মাদক মামলায় আসামি আরমানকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চান। রিমান্ড শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকি বিল্লাহ এ আদেশ দেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী সাইফুর রহমান সুমনসহ অন্য আইনজীবীরা রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর ও আসামির জামিন আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান হিরন এ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আরমানকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। উল্লেখ্য, রাজধানীতে অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গত ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে সম্রাটের সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানকেও আটক করা হয়।
রাজীবের নানা কাহিনী
মাত্র বছর দশেক আগে মোহাম্মদপুরে একটি টং দোকান করে সংসার চালাতেন তারেকুজ্জামান রাজীব। বাবা তোতা মিয়া রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। মোহাম্মদপুরে ৬ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বাবাসহ সপরিবারের থাকতেন রাজীব। বছর চারেক পর সেই রাজীবের ভাগ্যের দুয়ার আলাউদ্দিনের চেরাগের মতো খুলে যায়। মোহাম্মদপুরে সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রীকে ‘আব্বা’ ডেকে তার হাত ধরে রাজনীতিতে উত্থান হয়। ২০১৪ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন রাজীব। তরুণ বয়স ও স্মার্ট চেহারা হওয়ায় এলাকার ভোটারদের নজরে পড়েন। জয়ী হন তিনি। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। রাতারাতি বনে যান ‘সুলতান’। তারা প্রাসাদোপম বাড়ি আর পোশাকের সাজসজ্জা এবং চলাচলের জন্য ব্যবহৃত গাড়ি দেখে যে কেউ তাকে ব্রুনাই দেশের সুলতান হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন। আর এই সুলতান এখন গ্রেফতার হয়ে ১৪ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে।
র্যাব সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হওয়া যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভ‚ইয়া, মোহাম্মদপুরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ও গুলশানের স্পা সম্রাট খ্যাত ক্যাসিনো সেলিম প্রধান গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে সবাই তারেকুজ্জামান রাজীবের নাম বলেছে। সেই সূত্র ধরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজীব তার অবৈধ সম্পদের কিছু তথ্য র্যাবের কাছে জানিয়েছেন। এদের মধ্যে র্যাবের কাছে বর্তমানে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও যুবলীগ নেতা আরমান রিমান্ডে আছেন।
মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ১ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর প্লটে ৫ কাঠা জমির ওপর ডুপ্লেক্স টাইপের বাড়িটি ঘিরেই যতসব কান্ডকারখানা। দুই বছর আগে এই বাড়ির মালিকের কাছ থেকে রাজীব জোরপূর্বক অল্প টাকায় দলিল করে নেন। ওই ব্যক্তি মোহাম্মদপুরের একটি গ্রুপের কাছে আশ্রয় চায়। এ নিয়ে রাজীব ও ওই গ্রুপের মধ্যে দ্ব›দ্ব চলে। শেষ মুহূর্তে রাজীব ডুপ্লেক্স বাড়িটি দখল করে নেন। সম্প্রতি ওই গ্রুপটি শক্তিশালী হয় মোহাম্মদপুর এলাকায়। এর আগেও রাজীবের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। মোহাম্মদপুরের এক এলাকায় একজনের বাড়ি দখলের চেষ্টা করে ওই গ্রুপ। বাড়ির মালিক তখন স্থানীয় কাউন্সিলর রাজীবের কাছে যান। রাজীব ওই বাড়িতে তার একটি অফিস স্থাপন করেন। এরপরই ওই গ্রুপ বাড়িটি দখল করতে পারেনি। এসব তথ্য র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন রাজীব। মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ, চন্দ্রিমা হাউজিং, সাত মসজিদ হাউজিং, ঢাকা উদ্যানসহ বিভিন্ন এলাকায় দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে রাজীবের বিরুদ্ধে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।