পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মন্ত্রী, এমপি, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরীর নেতা, যুবলীগ নেতা, সাংবাদিক, আইন শৃংখলা বাহিনীর কিছু সদস্য সবার মধ্যে এখন সম্রাট আতঙ্ক। আইন শৃংখলা বাহিনীর রিমান্ডে ক্যাসিনো গডফাদার ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে কার নাম বলে দেন সে ভীতিতে এই আতঙ্ক। গ্রেফতার এবং আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করার পর সম্রাট ক্যাসিনোসহ অপরাধ জগতের ‘সম্রাট হাওয়া’র পেছনে থাকা সহযোগী কুশীলব এবং কাদের প্রশ্রয়ে গডফাদার হয়ে উঠে টাকার পাহাড় গড়েছেন, কারা টাকা নিতেন সবার নাম সম্রাটজিজ্ঞাসাবাদে বলে দিচ্ছেন।
আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করার পর ডিবির হেফাজতে থাকা সম্রাট ও আরমানকে গত বৃহস্পতিবার র্যাব-১ এর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে র্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এর আগে ক্যাসিনো কারবারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদন করে র্যাব। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (এএসপি) মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় থেকে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও এনামুল হক আরমানকে র্যাবে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গতকাল র্যাব -১ অধিনায়ক সারোয়ার বিন কাশেম সাংবাদিকদের জানান, ওরা বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। এসব তথ্যের মধ্যে কতটুকু সত্যতা আছে সে ব্যাপারে যাচাই না করে বলা যাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, তাদের র্যাব কার্যালয়ে এক সাথে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সম্রাটের গ্রেফতারের পর যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের বেশ কয়েকজন নেতা আত্মগোপন করেছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে থাকলেও পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। ওমর ফারুক চৌধুরী ও সংসদ সদস্য নূরন্নবী শাওনের ব্যাংক হিসেব তলব ও বিদেশ যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেই আতঙ্কের পড়ে গেছেন। যারা দলীয় সভা সমাবেশের জন্য বিভিন্ন সময় সম্রাট কাছে অর্থ নিয়েছেন এবং নিয়মিত ক্যাসিনোর টাকা নিতেন তাদের মধ্যে এই ভয় বেশি বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের অফিসে নেতাকর্মীদের মধ্যে দিনের আলোচনার বেশির ভাগ জুড়ে থাকছে সম্রাট কাদের নাম বলছেন এবং বলতে পারেন তা নিয়েই।
সুত্র জানায়, ক্যাসিনোর টাকা সম্রাটের কাছ থেকে যারা নিয়মিত নিতেন তাদের নাম জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানিয়ে দিয়েছেন। হঠাৎ ঢাকার চাঁদাবাজির জগতে ‘অধিপতি’ হয়ে উঠার নেপথের কুশীলব কারা, দল ও প্রশাসনের কাদের প্রশ্রয়ে সম্রাট এই অবস্থায় এসেছেন সে সব ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রিমান্ডে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাটগুরুত্বপূর্ণ তথ্যও দিচ্ছেন। আবার কখনো কখনো নীরবতা পালন করলেও অন্যদের ধরা হচ্ছে না কেন সে নিয়েই পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েছেন আইন শৃংখলা বাহিনীর দিকে। রিমান্ডে থাকা সম্রাটের এই তথ্য প্রকাশে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, এমপি, যুবলীগ নেতা, ঢাকা মহানগর নেতা, পুলিশের কিছু সদস্য, সাংবাদিক অনেকেই ভীতির মধ্যে পড়ে গেছেন। কারণ সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে অনেকের নাম বলেছেন যারা নিয়মিত মাসোহারা নিতেন। এমনকি যুবলীগের একজন নেতা মাসে ১০ লাখ এবং অপরজন বিপুল পরিমান অর্থ নিতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। একটি সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ক্যাসিনো সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাসহ চার জনের নাম বলেছে, যারা তাকে (সম্রাট) বিভিন্ন সময় টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনোসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা করতো। তাদের নিয়মিত(প্রতিদিন) মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন তিনি। তাদের প্রশ্রয়েই সম্রাট বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলেও জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, সিঙ্গাপুরে হুন্ডি হক নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশীর কাছে সম্রাটের বিপুল পরিমান টাকা রয়েছে। হোয়াটসআপের মাধ্যমে ওই ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ করতো সম্রাট। এ সব বিষয়ে তদন্ত করছে র্যাব। সূত্র জানায়, আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতাসহ যে চার জনের সেল্টারে সম্রাট বেপরোয়া হয়ে উঠেন, তাদের বিপুল পরিমান টাকা বিভিন্ন সময় সম্রাট দিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়ে বলেন, ক্যাসিনো নিয়ে আলোচনার সময় ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাকে পালিয়ে যেতেও বলেছিলেন।
সুত্রের দাবি অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন সম্রাট ঢাকা ও সিংগাপুরে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। অসুস্থতার কথা শুনেই প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক কাজ ফেলে হাসপাতালে ছুঁড়ে গেছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা। জুনিয়র নেতাকে দেখতে সিনিয়র নেতাদের হাসপাতালে ছুটে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার নেপথ্যেও ওই ক্যাসিনো অর্থ বলে জানা গেছে।
সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার পর যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী আত্মগোপনে গেছেন। শত কোটি টাকার মালিক কাজী অনিসুর রহমান পালিয়েছেন। যুবলীগের সভাপতি ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এডভোকেট মোল্লা আবু কাওছার, যুবলীগ নেতা নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপিসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
ওমর ফারুক চৌধুরী ও নুরন্ননী শাওন এমপির ব্যাংক হিসেবের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়েছে। এই দুই নেতার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে। সম্রাটের কাছ থেকে ক্যাসিনো ও চাঁদাবাজীর টাকার ভাগ নিয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদে এমন ব্যাক্তিদের তালিকা দিয়েছেন সম্রাট। জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানিয়েছেন, উপাজির্ত অর্থ দিয়ে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করতেন, দলের কর্মীদের সহযোগিতা করতেন। সভা সমাবেশের জন্যও নেতারা সম্রাটের কাজ থেকে নিয়মিত টাকা নিতেন।
সুত্র জানায়, গত বুধবার সম্রাট ও আরমানের দুটি মামলা তদন্তভার র্যাবকে দেয়া হয়। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন। সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে আইন শৃংখলা বাহিনীকে বলেছেন, শুধু আমাকে গ্রেফতার করছেন কেন? শুধু আমাকে দায়ী করা হচ্ছে কেন? যাদের প্রশ্রয়ে আমি বেপরোয়া হয়ে উঠেছি সেই নেতাদের জিজ্ঞাসা করে দেখেন, ঢাকায় একটি সমাবেশ করতে কত টাকা লাগে। কে দিয়েছে এই টাকা। আমার কাছ থেকেই ওরা টাকা নিয়েছে। রিমান্ডে সম্রাটের এমন তথ্য প্রকাশে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন অনেক নেতা-মন্ত্রী-এমপি। যারা সম্রাটের কাছ থেকে নিয়মিত ক্যাসিনোর বখরা নিতেন তাদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। একে অন্যের সঙ্গে দেখা হলেই শুদ্ধি অভিযান কতদিন চলবে, সম্রাট কার কার নাম বলেছেন সেসব জানার চেষ্টা করছেন।
উল্লেখ্য গত ১৫ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে মাদক ও অস্ত্র আইনের পৃথক দুই মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। একইভাবে সম্রাটের সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানকেও ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।