পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তীব্র যানজটে অচল ঢাকা। এতে জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। এক থেকে দেড় কিলোমিটার রাস্তা পার হতেই সময় লাগছে দুই ঘণ্টারও বেশি। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। যা দুপুরের পরে চরম আকার ধারণ করে। বর্তমানে রাজধানীর সড়কগুলো একদিকে বিভিন্ন সেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ির কবলে পড়ে চলাচলে অনুযোগী হয়ে আছে। অন্যদিকে বিমানবন্দর, মিরপুর ও মতিঝিলসহ শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোর মাঝখান দিয়ে চলছে মেট্রোরেল সড়ক নির্মাণের কাজ। যে কারণে সড়কে তীব্র যানজট এখন প্রতিদিনের দৃশ্য।
গতকাল দিনভর রাজধানীর প্রায় সব রাস্তায় যানবাহনের লম্বা লাইন দেখা গেছে। সকালে বিভিন্ন অফিস আদালতগামী ও বিকালে অফিস ফেরৎ মানুষ ও নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়েই নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে। সময়মত যানবাহ পাওয়া যায়নি। মাঝে মধ্যে দু’য়েকটি পাওয়া গেলেও দিতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই অনেককে যেতে হয়েছে নিজ নিজ গন্তব্যে। বিশেষ করে গতকালের যানজটে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক অচল হয়ে পড়ে। বহুদিন ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির মাঝখান দিয়ে মেট্রোরেল সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। সড়কের মাঝ বরাবর নির্মাণ কাজ চলার কারণে এটি এখন একেবারে সরু রাস্তায় পরিণত হয়েছে। সড়কটির দুই সাইডের এই সুরু রাস্তা দিয়েই ঝুকি নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে। যে কারণে এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় যানজটের দুর্ভোগ। বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ বিমানবন্দরটি রয়েছে এখানে। এই বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ মিলিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এখান দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার নিয়মিত বিমান যাত্রী আসা-যাওয়া করে। এর সাথে রয়েছে হজ ও ওমরা ফ্লাইট। তাদের সঙ্গে তিন-চার হাজার দর্শনার্থীও আসা যাওয়া করে। এছাড়া বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী চলাচল করায় দিনের ২৪ ঘণ্টাই ব্যস্ত থাকে এই সড়কটি। মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ ধীর গতিতে চলার কারণে প্রতিদিনই তাদেরকে যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই দুর্ভোগের শেষ কোথায় কেউ জানেনা।
আব্দুল্লাহপুর থেকে গুলিস্তানগামী বাসযাত্রী রেহানা বেগম জানান, প্রায় দেড়ঘণ্টা ধরে উত্তরার আজমপুরের সড়কে যানজটে পড়ে বসে ছিলাম। গাড়ি যেন চলতেই চায় না। আবার সড়কের দুই পাশে গাড়ির অপেক্ষায়ও ঘণ্টা পর ঘণ্টা অনেককেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কোনো গাড়ি পাওয়া যায়নি। বিমানবন্দর থেকে হাতেগোনা কয়েকটি বাস উত্তরার দিকে যায়। যানজট ও পরিবহন সঙ্কটের কারণে ভোগান্তিতে পড়ে অফিসগামীরা। বিমানবন্দরের ফুটওভার ব্রিজের নিচে ও রেল স্টেশনের সামনেও অনেককেই সড়কে দাঁড়িয়ে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
যানজটের এ দৃশ্য শুধু শহরের ভিতরের নয়। গতকাল গাবতলী ও এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে ঢাকায় প্রবেশের সময় তীব্র যানজটে পড়ে হাজার হাজার যানবাহন। মহাখালী, মগবাজার, মালিবাগ এলাকায়ও একই অবস্থা দেখা গেছে। রামপুরা, কাকরাইল, বাড্ডা লিংক রোড, বনানীসহ বিভিন্ন সড়কের প্রতিটি পয়েন্টে ছিলো তীব্র যানজট। গাড়ির সারিও ছিলো দীর্ঘ।
ভুক্তভোগী পথচারীরা বলছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যানজট ছিলো। তবে সকাল ১১টার পর থেকে এ জট আরও দীর্ঘ হতে থাকে। যা বিকেলর দিকে আরও তিব্র আকার ধারণ করে। বাড্ডা-নতুন বাজার সড়কে কথা হয় আমান উল্লাহ নামের এক পথচারির সাথে। তিনি বলেন, সকালে হাতিরঝিল এলাকা থেকে বের হয়ে প্রতিটি রাস্তাই তীব্র যানজট দেখতে পাই। কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে নতুন বাজার, নর্দা হয়ে বাড্ডা পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ি চলাচল প্রায় স্থবির হয়ে আছে।
একই অবস্থা রামপুরা রোডেরও। দীর্ঘক্ষণ গাড়ি থেমে থাকতে দেখা যায়। শাহবাগ মোড়ে তো যেন গাড়ি চলছেই না। পোস্তগালা থেকে উত্তরার দিয়াবাড়িগামী রাইদা পরিবহনের যাত্রী মারিয়া সোলতানা বলেন, রামপুরা ব্রিজ থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত আসতেই লেগেছে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট সময়।
কাকরাইল থেকে ধানমন্ডি এলাকায় যেতে দেড় থেকে দুইঘণ্টা লেগে যায়। কাকরাইল থেকে ধানমন্ডি এলাকায় যেতে অন্যান্য দিন ২০ থেকে ২৫ মিনিট লাগলেও যানজটের কারণে গতকাল চারগুণ সময় লাগছে। শুধু এ সড়কেই নয়, যানজট ছিলো মিরপুর ১, ২, ১০ নম্বর কালশী এলাকাতেও গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। মিরপুর-১ নম্বর থেকে কুড়িল বিশ্বরোড যেতেও প্রতিটি গাড়িকে যানজটে পড়তে হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে বাংলামোটর, ইস্কাটনের সরু রাস্তায় মগবাজার, মালিবাগ অভিমুখী অসংখ্য গাড়ির জটলা। অন্যদিকে শাহবাগ থেকে এলিফেন্ট রোড় ও বাংলামটর হয়ে ফার্মগেট সড়কে যে সমস্ত যানবাহন চলাচল করছে সেগুলোতো রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাদের যেন কোন তাড়া নেই। এভাইে কেটে গেল আড়াই থেকে তিন ঘণ্ট। গাড়ির চালক ও যাত্রীদের বিরক্তি তখন চরম সীমানায়। অনেকেই নেমে এলেন রাস্তায়। সিগন্যাল না ছাড়ায় কেউ কেউ কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে গালাগাল করছেন ইচ্ছেমতো। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের অবস্থা তখন গলদঘর্ম।
নগরীর ব্যস্ত সড়কগুলোর মতোই যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছিল জনজীবনও। যাত্রাবাড়ি-টঙ্গী রুটে চলাচলকারী ছালছাবিল পরিবহনের যাত্রী একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, আধ ঘণ্টার পথ যদি ৩ ঘণ্টা ব্যয় হয়, তাহলে মানুষ সারাদিন কাজকর্ম করবে কিভাবে? সাতরাস্তার মোড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হোসেন শাহরিয়ার। তিনি বলেন, এদেশ চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। যাওয়ার পথে ১৬০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে মতিঝিল গিয়েছি। এখন ফেরার সময় যানজটের কারণে গাড়িতে উঠে রাস্তায় বসে থাকতে আর ইচ্ছা হলো না। তাই বাধ্য হয়ে দিলকুশা থেকে পায়ে হেঁটে বনানী যাচ্ছি। এই ভোগান্তি শুধু হোসেন শাহরিয়ারের নয়।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী অধিকাংশ লোকজনকেই এই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে হেঁটে ধানমন্ডি যাচ্ছিলেন মতিঝিলের একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ এয়াছিন হাওলাদার। তিনি বলেন, দিলকুশা থেকে বাসে উঠে গুলিস্তান আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা। অথচ এই পথ হেঁটে আসতে সময় লাগে ১০ মিনিট। তাই সময় বাঁচাতে হেঁটেই যাচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।