বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মৃত্যুর আগে পানি খেতে চান। কিন্তু পানি না দিয়ে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা অনিক বলেন, ‘ও ভান করছে, আরও পেটালে ঠিক হয়ে যাবে।’ এরপর আবরারের ওপর শুরু হয় আবারও স্ট্যাম্প দিয়ে নির্যাতন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও পেটানো হয় বুয়েটের এই মেধাবী ছাত্রকে। এভাবেই ছাত্রলীগ নেতাদের নির্মম নির্যাতনে নিস্তেজ হয়ে পড়েন আবরার।
আবরার হত্যা মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার বুয়েট ছাত্রলীগ নেতা মোজাহিদুল ইসলাম জবানবন্দিতে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। যারা আবরার হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছে মোজাহিদুল ইসলাম তাদের অন্যতম। তিনি বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও বুয়েট ছাত্রলীগের সদস্য ছিল।
গ্রেফতারের পর তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি পুলিশ। রিমান্ড শেষ হওয়ার একদিন আগেই স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হওয়ায় রোববার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসি দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মোজাহিদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার পর তাকে জেলে পাঠানো হয়। এর আগে ডিবির কাছে কার্যবিধির ১৬১ ধারার জবানবন্দি দেয় সে।
৬ অক্টোবর আবরার খুন হওয়ার পরপরই যে ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল, তাদের মধ্যে মোজাহিদ একজন।
মোজাহিদের সঙ্গে রিমান্ডে থাকা আরও ৫ জনকে রোববার আদালতে হাজির করা হয়। রিমান্ড শেষ হওয়ার একদিন আগেই তাদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরে ম্যাজিস্ট্রেট তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়া অন্যদের মধ্যে আছে বুয়েট ছাত্রলীগ নেতা মো. অনিক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশাররফ সকাল এবং মেহেদী হাসান রবিন। এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে সকাল, জিয়ন ও অনিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলায় এ পর্যন্ত ৪ জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। আজ মেহেদী হাসান রুবেল নামের আরেক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে পারে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে দুই আসামিকে রোববার ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
স্বীকারোক্তিতে মোজাহিদ আরও বলে, ‘নির্যাতন চলাকালে আবরার একাধিকবার বমি করে। এতে পরনের কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে আবরারের রুম থেকে পরিষ্কার কাপড় এনে তাকে পরানো হয়। তাকে গোসল করানো হয়। নির্যাতনের সময় একাধিকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। জ্ঞান ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাকে পেটানো হয়। একপর্যায়ে তার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। এ সময় আবরার জানায়, তার শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তখন নির্যাতনকারীদের কেউ কেউ আবরারের শরীর মালিশ করে। নিশ্বাস বন্ধ যাওয়ার পর আবরারকে রুম থেকে বের করে সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়।’
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ যুগান্তরকে জানিয়েছেন, নির্মম নির্যাতনের কারণে আবরারের শরীরে ব্যাপক ইন্টারনাল রক্তক্ষরণ হয়। ব্যথা চলে গিয়েছিল সহ্যের বাইরে। এ দুই কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
ডিবির একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া এজাহারের বাইরে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা প্রত্যেকেই নিজেদের দায়-দায়িত্ব স্বীকার করেছে।
তবে আমরা সবাইকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তির আওতায় আনছি না। কারণ, সবার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেয়া হলে আসামিপক্ষের উকিলরা বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করে। তখন প্রকৃত অপরাধীও আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যায়।
এ কারণে আমরা ১৬৪ ধারায় শুধু তাদের স্বীকারোক্তিই নেয়ার চেষ্টা করছি, যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে। যারা চড়-থাপ্পড় দিয়েছে বা খুনিদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের ১৬৪ ধারার আওতায় আনা হচ্ছে না। তবে প্রত্যেকের ভূমিকার বিষয়টিই আলাদাভাবে চার্জশিটে উল্লেখ থাকবে।
প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।
তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলিট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছেন। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমানকে, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা।
এদের মধ্যে ১৯ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।