পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেছেন, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হলে দেশ পিছিয়ে যাবে। তিনি বলেন, লক্ষ্য আদায়ে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। এ বাজেটে দাড়ি-কমা যা আছে, তা মেইনটেন করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে রাজস্ব সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় দেশের সব ভ্যাট, কাস্টমস ও আয়কর কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে রাজস্ব ঘাটতির ব্যাখ্যা দেন আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অণুবিভাগের কর্মকর্তারা। এর জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে না পারলে দেশ পিছিয়ে যাবে। রাজস্ব ঘাটতির যেসব কারণ দেখানো হয়েছে, সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, বিবেচনা করাও ঠিক হবে না। এনবিআরের পরামর্শেই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি সিস্টেমের কারণে আদায় কম হয়ে থাকে সেটা বিবেচনা করা হবে। আগামীতে কোন অজুহাত শোনা হবে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা কর দেয়ার যোগ্য কিন্তু কর দিচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। করযোগ্যদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। অনেকে বিদেশে গিয়ে এক দিনে যে কেনাকাটা করেন তার দশ ভাগের এক ভাগ কর দিতো তাহলে দেশ আরো ভালো চলতো। কর্মকর্তাদের বাজেট বই ভালো করে পড়ার পরামর্শ দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এ বাজেটে দাড়ি-কমা যা আছে, তা বাস্তবায়ন করা হবে। যদি কোন সমস্যা থাকে তা আগামী বছর পরিবর্তন করা হবে। কারণ ব্যবসায়ী, জনসাধারণ সবাই গ্রহণ স্বাগত জানিয়েছে। তিনি বলেন, যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারি তাহলে দেশ পেছনে চলে যাবে। গত বছর ৫৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। ইটস নট অ্যা মেটার অফ জোক। এ টাকার ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। বাজেট যখন আসে, তখন বছরের প্রথম দিন থেকেই খরচ শুরু হয়ে যায়। সেটা কিভাবে পূরণ করবো।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এনবিআর যদি স্বচ্ছ হয়, তাহলে বাংলাদেশের সব খাত স্বচ্ছ হয়ে যাবে। অনেকে ভয়ে ট্যাক্স দিতে আসে না, আসলেও ট্যাক্স নিতে চায় না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, এ বছরে চট্টগ্রাম কাস্টমসকে ৬৩ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হয়েছে, যা মোট শুল্ক আয়ের ৬৮ শতাংশ। অর্থবছরের শুরুতে জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হলেও আগস্টে কোরবানির ঈদ ও ৫ দিনের টানা বৃষ্টির কারণে বন্দর থেকে মালামাল খালাস হয়নি। তাই রাজস্ব আদায় কমেছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমস দিয়ে উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানির পরিমাণ কমেছে। পাশাপাশি চলতি বাজেটে শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাসও শুল্ক কম আদায়ের কারণ।
ভ্যাট বাস্তবায়ন অণুবিভাগের সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, ভ্যাট খাতে ঘাটতির বড় কারণ সিগারেটের কর কাঠামো পুনর্বিন্যাস ও আগাম কর। এ কারণে দুই মাসে ভ্যাটের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশ। যদি গত বছরের মতো সিগারেট খাত থেকে রাজস্ব আদায় করা যেত এবং আগাম কর ফেরত দিতে না হতো তাহলে ভ্যাটে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতো। ইএফডি মেশিন স্থাপন ও অটোমেশন করা গেলে ভ্যাট খাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন পূরণ করা যাবে।
কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা অণুবিভাগের সদস্য কালিপদ হালদার বলেন, বর্তমানে টিআইএনধারীর সংখ্যা ৪৪ লাখ ২৭ হাজার। আগামী ৩ বছরের মধ্যে এটি ১ কোটিতে উন্নীত করা হবে। সব টিআইএনধারী যাতে রিটার্ন জমা দেন সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে আয়কর আদায়ের গতি আরো বাড়বে। শিল্প খাতে কর অব্যাহতি ও অবকাশ সুবিধার কারণে আয়কর আদায় কমার কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, জরিপের মাধ্যমে নতুন করদাতা খুজে বের করা হয়েছে। এদের টিআইএন দেয়া হয়েছে এবং রিটার্ন জমা দিতে বলা হয়েছে। কর কমিশনারদের এ ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ টিআইএনধারী ও রিটার্ন জমাদানকারীদের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। এ বছর ৩০ লাখ রিটার্ন জমা পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, ভ্যাট আদায় বাড়াতে ২০ হাজার ইএফডি মেশিন আমদানিতে দুটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আরো ৫ লাখ ইএফডি মেশিন আনা হবে। সামগ্রিকভাবে এনবিআরের জনবল বাড়াতে অস্থায়ীভিত্তিতে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান আছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে এডিবির সহযোগিতা চাইলেন অর্থমন্ত্রী
মায়ানমার থেকে পালিরয়ে আশা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্শনের বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য উন্নয়ন সহযোগি সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, আমাদের পক্ষে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব হবে না। এ ব্যাপারে এডিবির জোরালো ভূমিকা আমরা প্রত্যাশা করেছি। জবাবে তারা (এডিবি) আমাদের সহায়তার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।
গতকাল রোববার এডিবি‘র ছয় সদস্যর বোর্ড অব গর্ভনর বডির সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ সময় এডিবির প্রতিনিধি দলের প্রধান ও নির্বাহী পরিচালক ইনচ্যাং সং, নির্বাহী পরিচালক রিস পানডে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এডিবি উইংয়ের কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত সচিব ফরিদা নাসরীনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের যৌথ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলা হয়। আহম মুস্তফা কামাল বলেন, আগামীতে আমরা যখন কোনো বড় প্রকল্প হাতে নেব, সেখানে যত অর্থের প্রয়োজন হবে, এডিবি আমাদের আর্থিক সহায়তা করবে।
এডিবি‘র এবারের সফর একটি অর্থবহ সফর উল্লেখ করে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এডিবি একটি বড় টিম এ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। এই টিম শুধু ঢাকা সফর করবে না, বিভিন্ন গ্রামেও যাবে। তারা দেখবেন কিভাবে বাংলাদেশের মানুষ বসবাস করছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, এডিবি‘র প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবেন। সেখানে রোহিঙ্গারা কিভাবে জীবন বসবাস করছে, তাও দেখবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা এডিবি’র প্রতিনিধি দলকে অনুরোধ করেছি যেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা জোরালো ভূমিকা রাখেন। রোহিঙ্গারা যেন নিজ দেশে, নিজেদের ঘরবাড়িতে ফেরত যেতে পারে, সে বিষয়ে তাদের ভূমিকা রাখতে অনুরোধ করেছি। কারণ বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ফলে আমাদের পক্ষে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব হবে না। এ ব্যাপারে এডিবির জোরালো ভূমিকা আমরা প্রত্যাশা করেছি, তারা আমাদের সহায়তার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।
বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেনে নিযুক্ত এডিবির নির্বাহী পরিচালক ক্রিস পান্ডে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন দেব। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে যারা বাংলাদেশে অবস্থান নিয়েছে, তাদেরকে নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে আমরা খুব দ্রæত পদক্ষেপ নেব। এটাকে আমরা সত্যিই গুরুত্ব দিচ্ছি।
অন্যদিকে এডিবি প্রতিনিধি দলের নেতা ইনচ্যাং সং বলেন, গত বছর বাংলাদেশ সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অজর্ন করেছে। বাংলাদেশের এই অর্জনে আমরা গর্বিত। আমরা আশা করব বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। ইনচ্যাং সং বলেন, অতীতের মতো ভবিষ্যতেও বাংলাদেশকে এডিবি সব ধরনের সহযোগিতা করবে। এছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে এডিবির অব্যাহত সহায়তা দিয়ে যাবেন বলেনও উল্লেখ করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত এডিবি বাংলাদেশকে ২৫শ’ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। ১৯৭৩ সাল থেকে এডিবি বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করে আসছে। তারা এ পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়নে ২৫শ’ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা করেছে। আগামীতেও এডিবি বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা কী করেছি, কতটুকু উন্নতি করছি— তা পর্যবেক্ষণ করতে এডিবি বাংলাদেশে এসেছে। ১৯৭৩ সাল থেকে এডিবি বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা করে যাচ্ছে। তাদের সহযোগিতা আমাদের অর্থনীতি অনেক এগিয়ে দিয়েছে, দ্রæত দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। তাদের আর্থিক সহযোগিতা আমরা কিভাবে কাজে লাগিয়েছি, তাও তারা সরেজমিনে দেখবে।
এডিবির পক্ষ থেকে এ সময় উপস্থিত ছিলেন কোরিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, শ্রীলঙ্কা, তাইপেই ও চীনে নিযুক্ত এডিবির নির্বাহী পরিচালক ইন চেং সং; বেলজিয়াম, ফ্রান্স, ইতালি, পর্তুগাল, স্পেন, সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত এডিবির অল্টারনেট এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এনরিক গেলন; অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, লুক্সেমবার্গ, তুর্কি ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত এডিবির অল্টারনেটিভ এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বুরাক মুইজিনগলু; আফগাস্তিান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, লাও পিপলস ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক, তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানে নিযুক্ত এডিবির অল্টারনেটিভ এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বায়রা ম্মুহাম্মদ গেরাজেভ; জাপানে নিযুক্ত অল্টারনেটিভ ডিরেক্টর কেনজো ওহি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।