পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় অমিত সাহা তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল ঢাকা ও গাজীপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলো- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, আবরারের রুমমেট মিজান ও এজাহারভুক্ত আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহা (২০)। এ নিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হলো। গ্রেফতারদের মধ্যে এজাহারনামীয় ১২ জন ও এজাহার ছাড়া ৪ জন রয়েছেন। আবরারকে খুনের পরিকল্পনা করা হয় মেসেঞ্জারের একটি সিক্রেট গ্রুপে। শিক্ষার্থী সূত্র ও মেসেঞ্জারের কথোপকথন প্রকাশ পেলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। এদিকে, গতকাল আবরারকে পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত উপ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সবুজবাগ থানাধীন রাজারবাগ কালীবাড়ি এলাকার একটি বাসা থেকে অমিতকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে মিন্টুরোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। আবরার ফাহাদকে যে কক্ষে (২০১১ নম্বর কক্ষ) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই কক্ষের বাসিন্দা অমিত সাহা। ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, গতকাল বেলা ১২টার দিকে নিহত আবরার ফাহাদ রাব্বীর রুমমেট মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজানকে আটক করা হয়েছে। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক মিজান বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় বর্ষের (১৬তম ব্যাচ) ছাত্র। আবরার হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ তার কোন সংশ্লিষ্টতা পেলে তাকেও গ্রেফতার দেখানো হবে।
এদিকে, গতকাল বেলা ৩টার দিকে গাজীপুরের মাওনা এলাকা থেকে হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে বুয়েটের এমই বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র। আবরার হত্যা মামলায় সে ১১ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামী। গাজীপুর থেকে তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে।
খুনের পরিকল্পনা হয় সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপে
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্যাতনের পরিকল্পনা হয় আগেই। ঘটনার একদিন আগেই এ নিয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপে খুনিদের কথোপকথন হয়। যেখানে আবরারকে পিটিয়ে হলছাড়া করার নির্দেশ দেয়া হয়। ওই ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের কথোপকথন এসেছে সংবাদমাধ্যমের হাতে। সেই সাথে ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায়ও উঠে এসেছে লোমহর্ষক সেই ঘটনা।
তবে এই তৎপরতার একদিন আগেই ফেসবুকের সিক্রেট ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে আবরারকে নির্যাতনের নির্দেশ দেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন। ৫ অক্টোবর শনিবার দুপুর পৌনে ১টায় সিক্সটিন ব্যাচকে মেনশন করে রবিন লেখেন- ‘সেভেন্টিনের আবরার ফাহাদ। মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। ২ দিন টাইম দিলাম।’ পরদিন রোববার রাত ৭টা ৫২ মিনিট। সবাইকে হলের নিচে নামার নির্দেশ দেন মনিরুজ্জামান মনির। রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আবরারকে নিজ কক্ষ থেকে ডেকে করিডোর দিয়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে নিয়ে যান সাদাত, তানিম, বিল্লাহসহ কয়েকজন। এরপর রাত ১টা ২৬ মিনিটে ইফতি মোশাররফ সকাল ম্যাসেঞ্জারে লেখেন- ‘মরে যাচ্ছে, মাইর বেশি হয়ে গেছে।’
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন রাত ১২টা ২৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে আশিকুল ইসলাম বিটু ২০১১ নম্বর রুমের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। এর প্রায় ৭ মিনিট পর তিনি বেড়িয়ে যান। গ্রেফতারের আগে শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুমের ভেতরে ওই রাতে আসলে কী ঘটেছিল? আবরারকে নির্যাতনের প্রস্তুতি ও নির্যাতনের পরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিটু বলেন, মনির জেমি আর তানিমকে ফোন দিয়ে বলে আবরারকে ডেকে আনো ২০১১ নম্বর রুমে। পরে দেখলাম ২জন ওর দুটা ফোন ও ল্যাপটপ চেক করছে। কোথায় আবরার লাইক দেয় বা কমেন্ট করে অথবা কাদের সাথে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলে এগুলো নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। এরপরে আমি রুম থেকে বের হয়ে যাই। পরে সাড়ে ১২টার দিকে আমি আবার রুমে আসি আমার ল্যাপটপ ও বই নিতে। আমি রুমের ভিতরে ঢুকে দেখলাম যে আবরার একদম মাটিতে লুটিয়ে পরে আছে। সেখানে আবরারের ব্যাচেরও ৭-৮ জন ছিল। পরে রুম থেকে বের হয়ে সকালকে প্রশ্ন করি, এমন কিভাবে হলো? তখন মুনির জানায় যেদ, অনিক ভাই মাতাল অবস্থায় একটু বেশি মারছে। তখন ওখানে থাকা আমার জন্য সুরক্ষিত না ভেবে তখনই আমি ওখান থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসি।
কিন্তু আবরারকে নির্যাতনের খবর কেন কাউকে জানাননি, এমন প্রশ্নের কোনো সদত্তর দিতে পারেননি বিটু। তিনি বলেন, এমন ঘটনা অনেক সময়ই হলে হয়ে থাকে। তবে আবরার যে মারা গেছে তাও না। তখনো ওকে মেডিক্যালে নিয়ে গেলে হয়তো বাঁচানো যেত।
আদালত সূত্র জানায়, আসামি ইফতি মোশাররফ সকাল স্বেচ্ছায় আদালতে জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইফতির জবানবন্দি গ্রহণ করেন বিচারক। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। ইফতি মোশাররফ বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত উপ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরীর আদালত জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রেফতার ১৬
গত ৬ অক্টোবর আবরারকে হত্যার পর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ । এদের মধ্যে এজাহারনামীয় ১২ জন এবং এজাহার বহির্ভূত ৪ জন রয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, এজাহারনামীয় ১২ জন হলো- মেহেদী হাসান রাসেল, মোঃ অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মোঃ মেহেদী হাসান রবিন, মোঃ মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মোঃ মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মোঃ মনিরুজ্জামান মনির মোঃ আকাশ হোসেন ও হোসেন মোহাম্মদ তোহা। এছাড়া এজাহার বহির্ভূত ৪ জন হলো- ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মোঃ মিজানুর রহমান ওরফে মিজান ও শামসুল আরেফিন রাফাত।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, হত্যার ঘটনায় এজাহার দায়ের করার পূর্বেই ৭ অক্টোবর ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরকে ৫ দিনের রিমান্ড এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এছাড়াও ৮ অক্টোবর ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরও ৫ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
দ্রুততম সময়ে বিচায় চায় মানবাধিকার কমিশন
আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বৃহস্পতিবার নবগঠিত কমিশনের প্রথম কমিশন সভার শুরুতে বর্বর নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের শিকার আবরারের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। আরও উপস্থিত ছিলেন- সার্বক্ষণিক সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, অবৈতনিক সদস্য তৌফিকা করিম, মিজানুর রহমান খান, জেসমিন আরা বেগম ও ড. নমিতা হালদার।
আবরারের মৃত্যুকে দেশ, জাতি ও তার পরিবারের জন্য এক বিরাট ক্ষতি উল্লেখ করে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, কমিশনের সদস্যরা সকলেই ঘাতকদের দ্বারা আবরারের নির্মম ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। আবরার হত্যার শুরু থেকেই কমিশন সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা ও বিচার নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় বক্তব্যকে কমিশন স্বাগত জানায়। আর যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য হত্যাকারীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েট ছাত্র আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী। এ ঘটনায় ৭ অক্টোবর নিহতের বাবা মোঃ বরকত উল্লাহ ১৯ জনের নামোল্লেখ ও আরও অনেককে অজ্ঞাতনামা করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। পেরবর্তী মামলাটির তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।