Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আওয়ামী লীগ ভারতের সমালোচনা সহ্য করতে পারে না - রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৫ পিএম

আওয়ামী লীগ কিংবা শেখ হাসিনা নিজেদের সমালোচনা কিছুটা সহ্য করতে পারলেও ভারত নিয়ে কোন সমালোচনা হলেই তারা সেটা সহ্য করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ন্যায্য হিস্যার কথা বললেও আওয়ামী লীগ সরকার তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা পাওয়ার কোন অধিকার নেই, ন্যায্য হিস্যার দাবি তোলাটাও যেন ভয়ংকর অপরাধ। আবরার ফাহাদ আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর কাছে অপরাধী, কারণ সে আওয়ামী লীগের বন্ধু রাষ্ট্রের বাংলাদেশের প্রতি আচরণের সত্য ইতিহাস তুলে ধরেছিল। দেশের মাটি, পানি, আকাশের স্বার্থে কথা বলেছিল। এজন্য তাকে জীবন দিতে হলো। এসময়ের শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদ। মৃত্যুঞ্জয়ী আবরার ফাহাদ দেশের জন্য জীবন দিয়ে মৃত্যুকে জয় করেছে। এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধের প্রধান প্রেরণা হয়ে থাকবে আবরার ফাহাদ। আবরার ফাহাদ আমাদের প্রাণের পতাকা। বিএনপির এই নেতা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে লাশ হতে হলো আবরারকে। চুক্তি বাতিল করে প্রমাণ দিন-আপনি আবরারের পক্ষে, ভারতের আবদারের পক্ষে নন।

বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

অমিত সাহার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বিস্ময় প্রকাশ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, যার রুমে যার উপস্থিতিতে আবরারকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় সেই অমিত সাহার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এজাহারে তার নাম নেই, তাকে বহিস্কারও করেনি ছাত্রলীগ। শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুম তথা টর্চার সেলটি অমিত সাহার। তাকে বাঁচাতে বুয়েট প্রশাসন ও বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অথচ অধিকাংশ পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে:’ আবরারকে মারার সময় অমিত সাহা সেখানে উপস্থিত ছিল এবং সে মারামারিতে অংশ নেয়।’ মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর অন্যরা লাশ নিয়ে গেলেও অমিত সাহা তার রুমেই ছিল।’ কক্ষের ভেতরে যখন আবরার এর ওপর অকথ্য টর্চার চলে তখন পুলিশ খবর পেয়েও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাকে বাঁচানোর জন্য এখন নানারকম অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে একটি গোষ্ঠী। আন্দোলনরত ছাত্রদের দাবীর সাথে আমরাও অবিলম্বে অমিত সাহাকে গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি। একই সাথে ছাত্রদের প্রতিটি দাবীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি।

সরকার আবরার হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতে মরিয়া অভিযোগ করে রিজভী বলেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র শহীদ আবরার ফাহাদের বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর যখন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী গগনবিদারী শ্লোগানে উত্তাল তখন সরকার ছাত্রদেরকে নিরস্ত করার জন্য নানা ছলছাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা নানা রকম বক্তব্য দিচ্ছেন। যে কারণে আবরারকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে সেদিক থেকে দৃষ্টি ফেরাতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে সরকার।

তিনি বলেন, আবরারের স্ট্যাটাসের কারণই ছিল দেশবিরোধী চুক্তির বিরোধীতা ও সত্য ইতিহাস তুলে ধরা। আর দেশবিরোধী চুক্তিটি করেছেন বর্তমান মিডনাইট ভোটের সরকার জনগণের সাথে দিনে দুপুরে প্রতারণা করে। সুতরাং আবরার খুনের দায় সরকারও এড়াতে পারে না। দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল ছাড়া আবরারের রুহ শান্তি পাবে না। শহীদ আবরারের মা বলেছেন,‘আমাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করো না। এই লাশ আমি বহন করতে পারবো না। আমি চাই আমার ছেলেকে জীবিত ফিরিয়ে দাও। আমার ন্যায়বিচার দরকার নেই। আমি কার কাছে বিচার চাইবো ?’

এখন সৈরাচারের বিচারের সময় এসেছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাস্তবে খুনী ও স্বৈরাচারের কাছে বিচার চাওয়ার সময় এখন না। এখন সময় এসেছে স্বৈরাচারের বিচারের। যারা নিজেদের ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য একের পর এক দেশবিরোধী চুক্তি করে দেশের সব কিছু অন্যোর হাতে তুলে দিচ্ছে তাদের বিচার করতে হবে। গণমাধ্যমের কাছে জেনেছি আজ প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য দিবেন-জাতির সামনে বক্তব্য দেয়ার আগে সকল দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করবেন কি না জানতে চাই।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সিলেটে বলেছেন, ‘একটা ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, বাংলাদেশ ভারতকে গ্যাস দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানি করা গ্যাস প্রক্রিয়াজাতকরণ শেষে তা ভারতে রপ্তানি হবে।’ কি হাস্যকর যুক্তি ! ভারতের সাথে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক তৈরী করা এই মন্ত্রী মহোদয়কে বলতে চাই-বিদেশ থেকে গ্যাস এনে আমাদের প্রক্রিয়া করে ভারতে রপ্তানী করতে হবে কেন? ভারত নিজে কি প্রক্রিয়া করতে জানে না? আপনি যেখান থেকে গ্যাস আনবেন সেখান থেকে ভারত নিজেইতো গ্যাস নিতে পারে, আপনাকে কেন দিতে বলবে?

ছাত্রলীগ-যুবলীগ গোটা দেশকে টর্চার সেলে পরিণত করেছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো এখন কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প। ছাত্র-যুবক-আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই এখন লীগের টর্চার সেলের নির্মম শিকার। যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের পর সেখানে পাওয়া গেছে আধুনিক টর্চার সেল। যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন স¤্রাটের অফিসে পাওয়া গেছে টর্চার সেল। বুয়েট ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহার ২০১১ নাম্বার কক্ষ যেখানে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে নৃশংসকায়দায় হত্যা করা হয়, সেই কক্ষটিও একটি টর্চার সেল। একদিকে চলছে গুম খুন অপহরণ আর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অপরদিকে সারাদেশে রয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের টর্চার সেল। এই টর্চার সেলগুলোই ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতের গর্ভে জন্ম নেয়া বর্তমান সরকারের শক্তির উৎস।

ছাত্রলীগ-যুবলীগ জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে মন্তব্য করে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রিজভী আহমেদ বলেন, একদিকে বাংলাদেশের পক্ষের জনগণ আর অপরদিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ, হাতুড়ি লীগ সরকারি লীগের সন্ত্রাসীরা। এই সন্ত্রাসীরা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই সন্ত্রাসীদের কাছে নিজ দেশের স্বার্থ বড় নয়। তাই বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে কথা বলতে চায়, লিখতে চায় তাদের বিরুদ্ধে এই সন্ত্রাসীদের এতো ক্ষোভ। এতো প্রতিহিংসা। এতো জিঘাংসা। বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসও এই সন্ত্রাসী এবং তাদের রাজনৈতিক গডফাদারদের বুকে কাঁপন ধরায়।

যারা আবরারকে হত্যা করলো তারা কি মানুষ কিনা সে প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে মত প্রকাশ করায় যারা ছয়টি ঘণ্টা ধরে একজন নিষ্পাপ মেধাবী শিক্ষার্থীকে ঠাণ্ডা মাথায় পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করলো এরা কি মানুষ? এরা হানাদার বাহিনীর চেয়েও নিকৃষ্ট। এরা মানুষরূপী দ্বিপদ জন্তু। এই জানোয়াররা বুয়েটেই তাদের বর্বরতা দেখায়নি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় এবং নিরীহ বিশ্বজিৎ এর ওপর এই জানোয়ারদের নৃশংসতা দেশের জনগণ দেখেছে। সেই সময়ও এই জানোয়াররা হাতুড়ি ও দা-বটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরিকুলকে যেভাবে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে করতে শরীর থেঁতলে দিয়েছিলো সেই জানোয়ারদের বিচার কি হয়েছিল? হয়নি। হয়নি বলেই ঠাণ্ডা মাথায় টর্চার সেলে নিয়ে ভিন্ন দল মতের মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা এখন ছাত্রলীগ-যুবলীগ তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত করেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শহীদ আবরার ফাহাদের নির্মম মৃত্যু কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি ক্ষমতাসীনদের খুনের সংস্কৃতির ধারাবাহিক চর্চার একটি অংশ মাত্র। আজ তাই, বাংলাদেশের মানুষের পক্ষের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এসেছে। এই অন্ধকারের সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে মানুষের অধিকার মানুষের হাতে ফিরিয়ে দিতে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বিকল্প নেই। একজন মাত্র ব্যক্তির ক্ষমতার লিপ্সা, লোভ লাভের কারণে আজ দেশের জনগণই যেন নিজ দেশে পরাধীন। এই পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে আমাদের জেগে উঠতে হবে। এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে দেশের জনগণের অধিকার ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত করতে হবে।

 



 

Show all comments
  • ahammad ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৯ পিএম says : 0
    ১০০% সহমত পোষণ করলাম। আর সহয্য করবেনইবা কিভাবে, যাদের কৃপায় আজ তারা গদিতে, তাদের বিরুধ্বে কথা খারাপ লাগারই কথা। আপনারা বুঝে ও না বুঝার বান্ করেন কেন ???
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ