Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কাতার-পাকিস্তান হয়ে দেশে ফিরে রাজশাহীর মাফিয়া শীষ মোহাম্মদ শিশু

অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীরা আতংকিত হয়ে আত্নগোপনে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৩ পিএম

ভারতে পালানো আর হলো না। শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়তে হলো আন্তজার্তিক মাদক কারবারি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গড়ের মাঠ এলাকার বাসিন্দা শীষ মোহাম্মদকে (৩৫)। তার গ্রেফতারের খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই তালিকা ভুক্ত ২ শতাধিক মাদক সম্রাট আত্নগোপনে চলে গেছেন, কেউ কেউ মুখে দাঁড়ি গোফ রেখে, পোশাক ও
চেহারার আকার পরিবর্তন করে গ্রেফতার এড়াতে চেষ্টা করছেন কেউ কেউ প্রভাবশালী নেতাদের পিছন পিছন ঘুর ঘুর করছেন বলে ব্যপক অভিযোগ রয়েছেন।
রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ গত ৩ অক্টোবর গোদাগাড়ীর বিজয়নগর মোড়স্থ পাকা রাস্তার পাশ থেকে এই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। চলমান মাদক অভিযানের মধ্যেই সম্প্রতি আগে এই শীষ মোহাম্মদ ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। এরপর ভারত থেকে কাতার ও পাকিস্তান হয়ে সে দেশে ফিরে। এর মাধ্যমে আন্তজার্তিক মাদক কারবারির খাতায় নাম লিখায় সে। এরপর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরে পড়ে এই শীষ মোহাম্মদ।
গত শনিবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রেপ্তারের সময় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শীষ মোহম্মদের কাছ থেকে একটি গোলাপী রংয়ের ট্রাভেলস ব্যাগে থাকা বালিশের তুলার মধ্যে বিশেষ কৌশলে লুকিয়ে রাখা ৬ রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, ৫টি প্যাকেটে রাখা ১০০ গ্রাম করে সর্বমোট ৫০০ গ্রাম হেরোইন ও ১৫টি সাদা পলিথিনের প্যাকেটে রাখা ১০০ পিচ করে সর্বমোট ১৫০০ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। ওইদিন রাত অনুমান একটা ৫ মিনিটের দিকে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি টিম গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শীষ মোহাম্মদ জানায়, সে র্দীঘদিন যাবত মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। এর আগে তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে ৪টি মামলা রয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে ১৭ সাল পর্যন্ত এই শীষ মোহাম্মদ দুইবার মাদক মামলায় কারাগারেও ছিলো।

পুলিশ আরো জানায়, গ্রেপ্তারের পর শীষ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের (সংশোধনী/০২) ১৯-এ/১৯-এফ ধারায় একটি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২০১৮ এর ৩৬ (১) এর ৮ (গ)/১০(ক) ধারায় আরকেটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আদালতের মধ্যমে শীষ মোহাম্মদকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ইফতে খায়ের আলম।
এদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ‘ভারতে পালানোর চেষ্টা করছে শীষ মোহাম্মদ’ শিরোনামে স্থানীয়, জাতীয় ও অন লাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়র পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার পর গত ১ অক্টোবর রাত আটটার দিকে রাজশাহী নগরীর একটি বাসা থেকে শীষ মোহাম্মদ সাদা পোশাকধারী পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

তবে প্রথম দিকে পুলিশ গ্রেপ্তারের বিষয়টি এড়িয়ে যায়। শেষে গতকাল পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শীষ মোহাম্মদকে গত ৩ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অন্যদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই শীষ মোহাম্মদ সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের একজন সহসভাপতিসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলে। মূলত গ্রেপ্তার এড়াতে এসব নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সে। এছাড়াও সম্প্রতি দেশজুড়ে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে নিজেকে বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে যায় সে। পরে সেখান থেকে কাতার ও পাকিস্তান হয়ে সে দেশে ফিরে। এর মাধ্যমে আন্তজার্তিক মাদক কারবারির খাতায় নাম লিখায় সে। এরপর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরে পড়ে এই শীষ মোহাম্মদ। তার পর তাকে ভারতে ঢুকতে ভিসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বাংলাদেশের হাইকমিশনকে জানানো হয়।

এরই মধ্যে পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরে আবারো দুইবার ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করে এই শীষ মোহাম্মদ। তবে দুই বারই তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়। তখন আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতাকে দিয়ে ভিসার জন্য তদবির করাতে থাকে শীষ মোহাম্মদ। এ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী খবর প্রকাশ হয় গত ২৭ সেপ্টেম্বর। তারপর থেকে নড়েচড়ে বসে প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সূত্র মতে, মাদক ও জাল টাকার মাধ্যমে এই শীষ মোহাম্মদ অল্প বয়সেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। এরপর রাজশাহী শহরে একাধিক বাড়ি, জমি কেনা থেকে শুরু করে পাঁজেরো গাড়িও কেনে সে। এদিকে তার গ্রেফতারের খবরে বিভিন্ন সংস্থার তালিকাভুক্ত মাদক সম্রাট, যারা ৫।১০ বছরের মাথায় মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা করে শূন্য থেকে কোটিপতি, অবৈধ সম্পাদের পাহাড় গড়েছেন তারা আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, ঘন ঘন তারা অবস্থার পরির্তন করছেন।



 

Show all comments
  • ahammad ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:২৭ পিএম says : 0
    সরকারীদলের বা দলীয় পদে থাকলে সবই করা যায়। এইটা বংলাদেশে বর্তমান রীতি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে । বশী বাড়াবাড়ী করলে গুম বা ক্রসপায়ারে ছলে যেতে হবে, সাবধান ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ