Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

৬০ বছরে কাজ হয়েছে সাড়ে ৯ কি.মি.

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ৭৮ কি.মি.

আবেদুর রহমান স্বপন, গাইবান্ধা থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে গত ৬০ বছরে নদীর তীর (স্থায়ীভাবে সিসি বøক দ্বারা) সংরক্ষণ করা হয়েছে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার। গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার এই তিন নদী ছাড়ও করতোয়া, কাটাখালী, বাঙালি, ঘাঘট, আলাই, মানস, আখিরা ও নলেয়া নদীর তীর সংরক্ষণে কাজ করা হয়নি। তাই নদী ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে আরও নদীর তীর সংরক্ষণের দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। নদীর অব্যাহত ভাঙনের ফলে জেলার মানচিত্র পাল্টে গেছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নদী ভাঙন ঠেকাতে নদীর তীর সিসি বøক দ্বারা (স্থায়ীভাবে) সংরক্ষণ ও জিও টেক্সটাইল ব্যাগে বালু-সিমেন্ট মিশ্রিত করে প্রতিরক্ষা কাজ (অস্থায়ীভাবে) করা হয়। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধা শহরের ঘাঘটসহ সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার আওতাধীন ৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর তীর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের কোন কাজই করা হয়নি। এদিকে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নদীর তীর বাঁধের অংশে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণে কাজ করা হয়েছে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার।

সূত্রটি আরও জানায়, স্থায়ীভাবে পুরাতন ফুলছড়ি হেডকোয়ার্টার এলাকায় ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০০ মিটার, ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৫ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে (৭ কি.মি. বাঁধ মেরামতসহ) সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা বাজার রক্ষায় ৪৯৫ মিটার, ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৪৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরাতন ফুলছড়ি হেডকোয়ার্টার এলাকায় ১০০০ মিটার ও সদর উপজেলার কামারজানী বাজার এলাকায় ১০৪৩ মিটার, ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার বাগুড়িয়া এবং ফুলছড়ি উপজেলার সৈয়দপুর, কঞ্চিপাড়া ও বালাসীঘাট এলাকায় ১৮৭২ মিটার, ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সাঘাটা বাজার এলাকার ৪৭৮৯ মিটারের মোট সাড়ে ৯ কিলোমিটার এলাকা নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ করা হয়। এছাড়া ভাঙনরোধে সদর উপজেলার গোঘাট, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর, ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া, সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, গোবিন্দিসহ ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা ও যমুনা নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ হয়েছে প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকায়।

অপর দিকে যমুনা নদীর ডান তীরের ভাঙণ হতে গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলা এবং গণকবরসহ ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্থাপনার রক্ষা শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট এলাকায় ১ হাজার ৩শ’ মিটার, রতনপুর-সিংড়িয়া-কাতলামারী এলাকায় ২ হাজার ২শ’ মিটার ও পুরাতন ফুলছড়ি হেডকোয়ার্টার গণকবর এলাকায় ৭শ মিটার এবং সদর উপজেলার বাগুড়িয়া এলাকায় ৩শ’ মিটারের মোট সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকা নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের জরিপ অনুযায়ী, নদী ভাঙনের শিকার হওয়া ব্রহ্মপুত্র নদীসহ তিস্তা ও যমুনা নদী বুকে জেগে ওঠা ১শ’ ৬৫টি চরে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৪শ’ ২৭ জন মানুষ বসবাস করে। এ ছাড়া নদী ভাঙনের শিকার আরও অনেক মানুষ ঘর তুলে বসবাস করছে ৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন অংশে।

জরিপ মোতাবেক, গত ৬০ বছরে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা বেষ্টিত ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীর তীর এলাকায় প্রায় ৫৪৬ বর্গ কিলোমিটার নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। তৎকালি সরকার বন্যা নিয়ন্ত্রন কল্পে ১৯৬৩ সালে এই গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডে একজন বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে এসব নদীর তীর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের কোন কাজ না হওয়ায় প্রতিবছরই এই ৪ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। অপর দিকে ভাঙনের ভয়াবহতা রুপ নিলে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২১ বছরে কাজ হয় মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ীভাবে নদী ভাঙনরোধে প্রস্তাবিত প্রকল্প গ্রহন করা হয়।
সরেজমিনে গাইবন্ধা সাঘাটা উপজেলার জুমার বাড়ি যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার মো. ফজলে রাব্বী এমপি। এসময় তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নিদের্শ দিয়েছি ভাঙণ ঠেকাতে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ ও আর সিসি বøক দ্বারা ভাঙণ রোধ করতে হবে।

বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও নির্মাণ বিশেষজ্ঞ শাহজাহান খান আবু বলেন, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ৭৮ কিলোমিটার অংশের মধ্যে স্থায়ীভাবে তীর সংরক্ষণে কাজ করা হয়েছে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার। শুধুমাত্র পরিকল্পনার অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে মাশুল দিতে হচ্ছে। সঠিক সময় প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন না হওয়ায় শুধু অর্থে অপচয় হয়েছে।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো মোখলেছুর রহমান বলেন, বিগত সময়ে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর তীরে সাড়ে ৯ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ীভাবে সংরক্ষণে কাজ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে নতুন করে সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকা স্থায়ীভাবে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে। এতে ব্যায় হবে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ