Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ইয়াবাসেবী

পাচারের কৌশল পাল্টাচ্ছে ব্যবসায়ীরা

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম


ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইনের পর কুমিল্লার মাদকসেবিদের নেশার তালিকায় চাহিদা বেড়েই চলেছে ক্রেজি মেডিসিন নামের ইয়াবা ট্যাবলেটের। এ ধরণের নেশাখোরদের কাছে এটি বাবা নামে পরিচিতি পেয়েছে।
কুমিল্লায় কম করে হলেও এক লাখ কিশোর, তরুণ, যুবকের পছন্দের নেশার জায়গাটি দখল করে নিয়েছে ইয়াবা। কুমিল্লায় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্ররাও ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইন শৃংখলা বাহিনী প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমান ইয়াবা আটক করলেও এটির চালান আসা বন্ধ হচ্ছেনা। কুমিল্লার মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে যারা চিকিৎসা নিচ্ছে বা ভর্তি হতে আসছে ওদের বেশিরভাগই ইয়াবার নেশায় আসক্ত।

মাদকের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারি সংস্থাগুলো জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করছে ঠিকই। কিন্তু দমানো যাচ্ছে না ইয়াবার আগ্রাসন। একদিকে জোরালো অভিযান, অন্যদিকে ইয়াবার ওপেন সিক্রেট বেচাকেনা। কুমিল্লায় অন্তত এক হাজার মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে, যাদের মধ্যে সাতশোর বেশি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা এসব ব্যবসায়ীরা ইয়াবার খুচরা বিক্রির জন্য নারী, পুরুষ ও শিশুসহ প্রায় পাঁচশো লোক নিয়োজিত রেখেছে। গত কয়েক বছরে কুমিল্লায় ফেন্সিডিল, হেরোইন, গাঁজাসহ অন্যসব মাদককে পেছনে ফেলে ব্যাপকহারে বেড়েছে ইয়াবার ব্যবহার। ইয়াবাসেবীদের কাছে এটি ‘ক্রেজি মেডিসিন’। মিয়ানমারে উৎপাদিত মরণনেশা ইয়াবা টেকনাফ-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম হয়ে স্্েরাতের মতো আসছে কুমিল্লায়। ভারতেও উৎপাদিত হচ্ছে ইয়াবা। কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্ত পথেও আসছে ইয়াবা।

ইয়াবা নামের লাল, নীল, সবুজ রংয়ের গোলাকার ছোট ট্যাবলেট এখন সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত পর্যায়ের তরুণ, যুবক এবং কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছেও প্রিয় নেশায় পরিগণিত হয়েছে। কুমিল্লার পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবের হাতে ইয়াবাসহ আটক হওয়ার ঘটনাও কম নয়। কুমিল্লার মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সেখানে চিকিৎসার জন্য যারা ভর্তি হচ্ছে তাদের মধ্যে ৯০ভাগই ইয়াবাসেবী। দর্পণ মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক গোলাম মহিউদ্দিন জীবন জানান, এখানে বর্তমানে যারা চিকিৎসা নিচ্ছে এদের বেশির ভাগই ইয়াবায় আসক্ত। মরণনেশা ইয়াবার বিষে কুমিল্লার হাজার হাজার তরুণ-যুবকের স্বপ্নময় জীবন নীল হয়ে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি চিকিৎসাসেবা ও যথাযথ কাউন্সিলিং দিয়ে সুস্থ স্বাবাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে।

কুমিল্লা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি বদরুল হুদা জেনু জানান, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক আগ্রাসন তারুণ্য, মেধা, বিবেক, মনুষ্যত্ব সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। পারিবারিক অশান্তি বাড়ছে। বিনিষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ, মায়া-মমতা ও পারিবারিক বন্ধন। মাদকের এ ভয়াবহতা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন জোরদারের বিকল্প নেই। মাদকের যে বিস্তার এটা রাজনৈতিক বা অন্য কোন সঙ্কটের চেয়েও ভয়াবহ।

 



 

Show all comments
  • আশরাফুল ইসলাম ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:১৬ পিএম says : 0
    আন্দোলন থেকে প্রশাসনের আইন প্রয়োগ বাস্তবায়ন হলেই কেবল এটি বন্ধ করা যাবে,,এর জন্য কোন আপোষ চলবেনা, অপরাধী যেই হোক শাস্তি দিতে হবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ন্যায় সাথে সাথে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ