রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
ফ্রি স্টাইলে চলছে এনজিও ক্রেডিট প্রোগ্রাম। অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে ক্রেডিট প্রোগ্রামের সিংহভাগ অর্থ। ঋণের জালে আটকে পড়ছে গ্রাম-গঞ্জের বিশাল জনগোষ্ঠী। চক্রবৃদ্ধিহারে আদায় করা হচ্ছে সুদ। যার জন্য স্বনির্ভরতার বদলে মানুষ হচ্ছেন সর্বস্বান্ত। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর আত্মনির্ভরশীলতা সৃষ্টির নামে একশ্রেণীর এনজিও কার্যত জমজমাট সুদের কারবার করছে। প্রশাসনের চোখের সামনে এনজিও ক্রেডিট প্রোগ্রামের নামে সুদের কারবার করে ফুলেফেপে উঠলেও তারা রয়েছে বহাল তবিয়তে। ওইসব এনজিও’র কর্ণধাররা জিরো থেকে রাতারাতি কোটিপতি হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছে। তাদের দিকে কারো কোন দৃষ্টি নেই। দারিদ্র্য বিমোচন, পল্লী উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির নামে এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে এনজিও’র ক্রেডিট প্রোগ্রাম চলছে না। এতে গরীব ও অসহায় মানুষ স্বনির্ভরতার বদলে ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন। এই চিত্র যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরাসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের।
ক্রেডিট প্রোগ্রামের এনজিও কার্যক্রমে সরকারী কোন তদারকি নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাইক্রেডিট অথরিটি থেকে লাইসেন্স নিয়ে ক্রেডিট প্রোগ্রাম করে থাকে এনজিওগুলো। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) থেকে ৩/৪ শতাংশ হারে সুদ দিয়ে ক্রেডিট প্রোগ্রামের অর্থ সংগ্রহ করে এলাকাভিত্তিক ঋণ দেয় তারা। কিন্তু আদায় করে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০%। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় এনজিও’র সংখ্যা ৮হাজার ৩শ’ ৩৬টি। যার সিংহভাগই সুদের কারবার চালাচ্ছে। সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তর এনজিওদের রেজিস্ট্রেশন দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে। কোন তদারকি করা হয় না। বিশেষ করে ক্রেডিট প্রোগ্রামের মোটেও খোঁজ খবর নেয়ার প্রয়োজন অনুভব করে না। কারণ ক্রেডিট প্রোগ্রামের এনজি’র কর্মকর্তারা প্রভাবশালী। তারা উপর মহলে ম্যানেজ করে চলে। সরকারী এম এম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্থনৈতিক বিভাগের প্রধান প্রফেসর সেলিম রেজা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এনজিও’র সুদের কারবারে গরীব মানুষ আরো গরীব হচ্ছেন। কারণ তারা নগদ অর্থ পেয়ে ভোগবিলাসে ব্যয় করে থাকেন বেশীরভাগ। সুদের কারবারীদের লাগাম টেনে ধরা দরকার তা না হলে গ্রামীণ অর্থনীতি দুর্বল হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়নের নামে যেসব এনজিও সুদের ব্যবসা করে তাদের বেশীরভাগই গ্রামীণ অর্থনৈতিক কাঠামোকে ক্রমাগতভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে। আত্মনির্ভরশীলতার বদলে বাড়ছে পরনির্ভরশীলতা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা এমনকি গ্রামপর্যায়ে ক্রেডিট প্রোগ্রামের এনজিও কর্মীদের ব্যাপক তৎপরতা রয়েছে। তারা দারিদ্র্য বিমোচনের দোহাই দিয়ে উচ্চহারে সুদের কারবার করছে অবাধে। সেই সাথে চলছে গ্রামে গ্রামে মহাজনী সুদের ব্যবসা। একজন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী চাষাবাদের আগে মহাজনদের কাছে সুদে টাকা নেয়। দেখা যায়, সুদাসলে টাকা দিতে গিয়ে তার জমির ফসলাদি মাঠ থেকে তুলে নিজ ঘরে তোলার বদলে দিতে হয় মহাজনদের ঘরে।
ইতোমধ্যে যশোরের এনজিও’র চাপে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সুদের কারবার ছাড়াও গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন এনজিও’র সাইনবোর্ডের আড়ালে সাধারণ মানুষকে স্বনির্ভর করার প্রলোভন দেখিয়ে নানা কৌশলে তাদের সঞ্চিত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা একের পর এক ঘটলেও সরকারীভাবে কোন তদন্ত হচ্ছে না। অসহায় দরিদ্র ও সহজ সরল অনেকেই মহাজনী ঋণের জালে আটকা পড়ে ভিটা-বাড়ী পর্যন্ত লিখে দিতে বাধ্য হচ্ছে। গোটা অঞ্চলের অধিকাংশ গ্রামে চলছে গ্রামের দাপটধারী অর্থবিত্তশালী মহাজনদের সুদের কারবার। এনজিওগুলোর মধ্যে আরআরএফ, জাগরণী চক্র, শিশু নিলয়, শাপলা, লাইফ, সমাধান, বাঁচতে শেখা, বন্ধু কল্যাণ, সুশীলন, প্রত্যাশা ও সৃজনীসহ শতাধিক এনজিও’র মাইক্রেডিট অথরিটির লাইসেন্সধারী। এর বাইরেও প্রায় সব এনজিও কমবেশী নিজেদের অর্থে, ব্যাংকের থেকে টাকা নিয়ে ও বিভিন্নপন্থায় সুদের কারবার করে থাকে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ঝিনাইদহের বারোবাজারের মশিয়াহাটি ঋষি পল্লীতে বিভিন্ন এনজিও’র ঋণ কার্যক্রম চলছে টানা প্রায ২৫বছর। ঋষিপল্লীর লোকজন বুট পালিশ, ঝুড়ি ও কুলা তৈরী এবং কমবেশী আবাদী জমি চাষাবাদ করে সংসার নির্র্বাহ করতো। ঋণের জালে আটকে তারা সর্বস্বান্ত হয়েছে। অনেকে ভিটাছাড়া হয়েছে। দীর্ঘদিনেও তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। বরং গরীব আরো গরীব হয়েছে। ক্রেডিট প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত যশোরের একটি বড় এনজিও জাগরণী চক্রের কর্মকর্তা আব্দুল হাসিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণ দিয়ে আসলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচন করা কঠিন হচ্ছে। ঋণ নেয়ার পরই ভোগ-বিলাসে কিংবা অতীতের ঋণ পরিশোধের ব্যয় করে থাকে। কিস্তির টাকা পরিশোধ কিংবা মূল ঋণ পরিশোধে উৎপাদনশীল খাতে ঋণের অর্থ হচ্ছে খুবই কম।
অর্থনীতিবিদ, সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহলের মতে, গ্রামীণ দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলের দোহাই দিয়ে যেসব এনজিও সুদের কারবার চালাচ্ছে তাদের লাগাম টেনে ধরা জরুরী। ঋণ দিলে সেটি উৎপাদনশীল খাতে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার সুনির্দ্দিষ্ট নিদের্শনা থাকতে হবে। তা না হলে দারিদ্র্য বিমোচন, পলী উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির নামে যাচ্ছেতাই অবস্থার সৃষ্টি হবে। শুধু পাকা ঘরবাড়ী, ভোগ বিলাস আর চকচকে অবস্থা আর্থ-সামাজিক অবস্থা শক্তিশালী প্রমাণ করে না। কোন ব্যক্তি নয়, তার ভবিষ্যত প্রজন্মকেও ঋণগ্রস্ত করে রাখার ক্ষেত্র তৈরী করছে অনেক প্রভাবশালী এনজিও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।