পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পানিবদ্ধতা আর যানজটে অচল ঢাকা। আবিরাম বৃষ্টিতে গতকালও নগরবাসীর দুর্ভোগের শেষ ছিল না। বৃষ্টির তোড়ে জনজীবন থমকে যাবার উপক্রম হয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে গেছে। যথারীতি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দুই ঘণ্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে রাজধানীর সচিবালয়সহ সব রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। আর বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন না হওয়ায় ব্যস্ততম প্রধান সড়ক ও বিভিন্ন অলিগলিতে হাঁটুপানি জমে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে পানিবদ্ধতা অন্যদিকে তীব্র যানজট। রাজধানীবাসীর এ যেন মহাদুর্ভোগ। যানবাহনের চাকা যেন ঘুরতেই চায় না। এক মিনিট চলে তো ১০ মিনিট থমকে থাকা। সড়কের দুই পাশে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তাতেই কাটাতে হয়েছে যাত্রীদের। বিশেষ করে অফিস-ফেরত যাত্রী, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ অন্য সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে দুপুরের পর থেকেই পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে। বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে অনেকেরই গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
সৃষ্ট অবস্থার সামাল দিতে গতকাল বিকালে বৃষ্টিতে পানিবদ্ধ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দুর্ভোগে পড়া মানুষকে নৌকায় পারাপার হতে দেখা গেছে। পানিবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলোতে মানুষকে এভাবে প্রায় সময় নৌকায় রাস্তা পারাপার হতে দেখা যায়। গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট, কাকরাইল ও শান্তিনগর এলাকার সড়কগুলো হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে। এ সময় সড়কে যানবাহন আটকে যায়। সড়ককে পানিবদ্ধতার কারণে অনেকগুলো সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অটোরিকশা পরিবর্তন করে অনেককে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। দ্রæত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, এই যে পানি পার ২০ টাকা, পানি পার ২০ টাকা। রাজধানীর আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানের দক্ষিণ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই কোরাস সুরে পানি পারাপারের জন্য যাত্রীদের ডাকাডাকি করছিলেন একাধিক ভ্যানচালক। কবরস্থান গেটের সামনে অসংখ্য মানুষ জটলা বেধে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ অফিস-ফেরত, কেউ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউ বা গার্মেন্টস বা ব্যক্তিগত কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন। কিন্তু কবরস্থান গেটের সামনে এসে সবাইকে থমকে দাঁড়াতে হয়েছে।
কবরস্থান গেট থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত রাস্তা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। যেন অচেনা কোনো এক নদী। গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসসহ ইঞ্জিনচালিত যানবাহনগুলো দ্রুত চলে যাওয়ার সময় দু’পাশে পানির ঢেউ আছড়ে পড়ছে। এ ছাড়া নিউমার্কেট সংলগ্ন বড় ডাস্টবিনের ময়লা পানিতে ভাসছে। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে এক মিনিটের পায়ে হাঁটার পথ ২০ টাকা দিয়ে পার হয়েছে। আবার কেউ কেউ জামাকাপড় ভিজিয়ে পানি পার হতে দেখা গেছে। রাস্তার ম্যানহোলের ঢাকনাগুলো খুলে দিয়ে পানি অপসারণের ব্যর্থ চেষ্টাও দেখা গেছে।
কবরস্থানের গেটে দাঁড়িয়ে সিটি মেয়রের সমালোচনা করছিলেন আনুমানিক ষাট বছরের এক বৃদ্ধ। বলছেন, মেয়র সাহেব তো বক্তৃতায় নগর উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরতে গিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। কিন্তু কই? এই যে পানিবদ্ধতার কারণে হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে, এর সমাধান তো করতে পারছেন না। নিউমার্কেটের মতো এলাকায় যদি এমন পানি জমে থাকে তবে কী যে উন্নয়ন হচ্ছে তা সহজেই বোঝা যায়।
অল্প বৃষ্টিতেই মগবাজার, মৌচাক হয়ে মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা ব্রিজ, মেরুল বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়। জমে যাওয়া পানির কারণে অটোরিকশা ও অন্য যানবাহন রাস্তায় আটকে পড়ে। মধ্যবাড্ডায় রাস্তার ওপর ময়লার ভাগাড় পানিতে মিশে একাকার হয়ে সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে অল্প বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও সিটি কর্পোরেশন দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয় না বলে অভিযোগ করেন দুর্ভোগে পড়া যাত্রীরা।
নর্দা, কালাচাঁদপুর থেকে বারিধারা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। এতে যানবাহন আটকে পড়ে। দুর্ভোগে পড়ে অফিসগামী যাত্রীরা। ফলে রিকশায় বাড়তি ভাড়া দিয়ে অনেককে অফিস ও কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। তবে সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার জন্য সিটি কর্পোরেশনের অবহেলাকে দায়ী করেন যাত্রীরা।
বৃষ্টিতে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোড, এয়ারপোর্ট সড়ক, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে, আইসিডিডিআর,বি থেকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পানি জমে যায়। পানির সাথে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা-আর্বজনা মিলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বৃষ্টির কারণে কোথাও কোথাও তীব্র যানজট, কোথাও গাড়ি না থাকায় যাত্রীদের ময়লা পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়।
বৃষ্টিতে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকার সব সড়ক ও স্টেশনের প্রবেশ মুখ হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়ে মালামাল নিয়ে আসা যাত্রীরা। তবে পানি দ্রুত নেমে না যাওয়ায় যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হয়। ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত, ঢাকা মেডিক্যালের সামনের রাস্তা, গোলাপ শাহ মাজারের সামনে পানি জমে যায়। রাস্তায় থাকা ময়লা বৃষ্টির পানিতে মিশে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। সদরঘাটমুখী যাতায়াতকারীদের ময়লা পানি মাড়িয়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে যেতে দেখা গেছে। কাকরাইল থেকে নয়াপল্টন হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো রাস্তা ও আশপাশের গলি বৃষ্টিতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়।
অধিকাংশ স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা ও গর্ত থাকায় যানবাহন চলাচলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। অনেক জায়গায় যাত্রীদের সড়কে পড়ে ভিজে যেতে দেখা গেছে। তবে সিটি কর্পোরেশনকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় সেই চিরাচরিত দুর্ভোগ। তাৎক্ষণিকভাবে পানি নেমে না যাওয়ায় সৃষ্টি হয় পানিবদ্ধতা।
মৌচাক এলাকার মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিং কমপ্লেক্স, মালিবাগের হোসাফ টাওয়ার কমপ্লেক্স, শান্তিনগর এলাকার টুইন টাওয়ার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্স ও ট্রপিক্যাল রাজিয়া শপিং কমপ্লেক্সের সামনে পানিবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে ক্রেতারা পড়েন ভোগান্তিতে। সেই সঙ্গে ওইসব এলাকায় দেখা দেয় যানজটও। রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, আগারগাঁও, মিরপুর, যাত্রাবাড়ীসহ বেশকিছু এলাকা ও মহাসড়কে বৃষ্টির কারণে তৈরি হয়েছে পানিবদ্ধতা। অপরিকল্পিত নগরায়নে পানি জমার সমস্যাটা দিন দিন প্রকট হচ্ছে- বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
এছাড়া পানিবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে রাজধানীর অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা দায়ী। আর পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে রাজধানীবাসীর দুর্দশা আরো বাড়বে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।