নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের অনুমোদনে সারা দেশের নৌ টার্মিনালে যাত্রী প্রবেস ফি দ্বিগুন করা হল। মঙ্গলবার ১ অক্টোবর থেকে বিআইডব্লিউটিএ এ নির্দেশ কার্যকর করেছে। এরফলে দেশের সর্ববৃহত সদরঘাট ও দ্বিতীয় বৃহত্বম বরিশাল নদী বন্দর সহ খুলনা এবং টার্মিনাল ভবন সমৃদ্ধ নদী বন্দরগুলোতে যাত্রী প্রবেস ফি ৫ টাকার স্থলে ১০ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। এরফলে নৌপথে যাত্রীদের চলাচলে ব্যায় আরো বাড়ল। তবে বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর ও পরিবহন বিভাগের দায়িত্বশীল মহলের দাবী ২০১৭ সালের পরে আর টার্মিনাল প্রবেস ফি বৃদ্ধি করা হয়নি। এবারে বর্ধিত অর্থের মধ্যে ২ টাকা যাত্রী কল্যান তহবিলে জমা হবে। অবশিষ্ট ৮ টাকা বিআইডব্লিউটিএ’র রাজস্ব তহবিলে জমা হবে।
মঙ্গলবার বরিশাল নৌ টার্মিনালে প্রবেস করতে গিয়ে বেশীরভাগ যাত্রীকেই যথেষ্ঠ বিড়ম্বনায় পাড়তে দেখা গেছে। বিশেষকরে নি¤œআয়ের স্বল্প দুরত্বের যাত্রীদের জন্য এ বর্ধিত টার্মিনাল ফি যথেষ্ঠ দূর্ভোগে ফেলেছে। দেশের রেলপথের কোন স্টেশনে টার্মিনাল প্রবেস ফি নেই।
এদিকে নৌ বন্দরের প্রবেশ ফি’র সাথে বিআইডব্লিউটিএ’র আওতাধীন আউট স্টেশনের প্রবেস মূল্যও ৩ টাকার স্থলে ৫টাকায় বৃদ্ধি করা হচ্ছে আগামী ১লা জুলাই থেকে। বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল নদী বন্দর সহ বিভিন্ন বন্দরে নোটিশ টানিয়ে বিষয়টি জানান দেয়া হয়েছে। তবে হঠাৎ করেই নদী বন্দর ভবনে প্রবেশ ফি বৃদ্ধির খবরে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে। ৫ টাকার প্রবেস ফি একলাফে দ্বিগুন করার বিষয়টিকে অনেক সাধারণ যাত্রী ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ বলেও মন্তব্য করেছেন। টার্মিনাল ফি দ্বিগুন করা হলেও যাত্রীদেও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করনে কতৃপক্ষ কোন উদ্যোগ নেবেন কিনা তা বলতে পারেননি। বরিশাল সহ দেশের বেশীরভাগ নৌ টার্মিনাল ভবনে যাত্রীদের জন্য নুন্যতম সুযোগ সুবিধা এখনো অনুপস্থিত। এমনকি এসব টার্মিনারেল বেশীরভাগেই যাত্রীদের বসার পর্যন্ত ব্যবস্থা নেই। শৌচাগারের মত মানবিক বিষয়টিও যথেষ্ঠ অবহেলিত। টার্মিনাল ভবনের শৌচারগুলো যাত্রীদের ব্যবহার উপযোগী নয়। যাত্রীদের ব্যাগেজ পরিবহনে ঘাট শ্রমিকদের সেচ্ছাচারিতা প্রায়সই অত্যাচারের পর্যায়ে পৌছলেও কোন ব্যাবস্থা নেই।
তবে টার্মিনাল ফি বৃদ্ধির এ বিষয়টি নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্তের আলোকেই কার্যকর করা হয়েছে বলে দাবী বিঅইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল মহলের। মহলটির মতে, ‘ নদী বন্দরগুলোর রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ’র আওতাধীন দেশের সকল নৌ বন্দর ও আউট স্টেশনে প্রবেশ টিকেটের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্প্রতি নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। তারই অংশ হিসেবে ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা সহ সব প্রথম শ্রেণীর নদী বন্দরের টার্মিনাল ভবনে যাত্রীদের প্রবেশ ফি ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে।
তবে টার্মিনাল ভবনে প্রবেশের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ নাগরিক, প্রতিবন্ধী ও গর্ভবর্তী মায়েদের প্রবেশ ফি’র প্রয়োজন হবে না।
এদিকে নৌ বন্দরে যাত্রীদের প্রবেশ ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছেন ‘বরিশালে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটি’র সাবেক সদস্যÑসচিব অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল। তিনি বলেন, ‘নদী বন্দরে প্রবেশে যাত্রীদের কাছ থেকে ফি আদায়েরই কথা ছিলো না। কেননা বিআইডব্লিউটিএ যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌযান থেকে রাজস্ব পাচ্ছে। উপরন্তু পণ্য পরিবহনে টোল আদায় ছাড়াও লেবার হ্যান্ডলিং ইজারা দিয়ে বিপুল অর্থ আয় করছে। তার পরেও যাত্রীদের কাছ থেকে ৫ টাকার প্রবেস ফি সহনশিল বলে মেনে নেয়া যায়। কিন্তু ৫টাকা থেকে তা দ্বিগুন করার বিষয়টি কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ‘সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে প্রবেশ ফি’র নামে যে অর্থ আদায় হচ্ছে তা কোন কাজে ব্যয় করা হচ্ছে সেটা আমাদের জানার অধিকার রয়েছে’। টার্মিনাল প্রবেস ফি বৃদ্ধি করা হলেও যাত্রী সেবার মান-এর কোন উন্নতী না হবার বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৫৮ সালে তৎকালীন ইপিআইডব্লিউটিএ গঠিত হবার পরে ’৬৪ সালে বরিশাল, খুলনা, চঁাঁদপুর, ঢাকা ও নারয়নগঞ্জ নদী বন্দর প্রতিষ্ঠত হয়। ১৯৬৮-৬৯ সালে বরিশাল বাদে অন্যসব নদী বন্দরে টার্মিনাল ভবন সহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা প্রতিষ্ঠিত হবার পরে ১০ পয়সা করে টার্মিনাল প্রবেস ফি নির্ধারন করা হয়। বরিশালে তখন একটি ভাসমান টার্মিনাল স্থাপন করে ১০ পয়সা প্রবেস ফি আদায় শুরু হয়। সে প্রবেস ফি ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০টাকা।