Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চান্দিনায় তিন গম্বুজ মসজিদ

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ব্রিটিশ সরকারের আমলে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী তিন গুম্বুজ জামে মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের মেহার গ্রামের পাখি ডাকা, ছায়া ঢাকা, সুশীতল পরিবেশে অবস্থিত মসজিদটি। মসজিদটির ভেতরে ও বাইরে রয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য বিভিন্ন কারুকাজ করা। 

চিনা মাটির প্লেট ভাঙা দ্বারা বিভিন্ন ডিজাইনে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির চারপাশের ওয়ালগুলো ৩ ফুট। যার কারণে শীতকালে মসজিদের ভেতরে গরম আর গরমকালে ঠান্ডা অনুভব হয়। পুরো মসজিদটি চুনশুরকি দ্বারা তৈরি করা হয়েছ। ভেতরের মিম্বরটিতে রয়েছে সুনিপণ হাতে নির্মিত অপূর্ব কারুকাজ। যে কেউ একবার দেখলে মন ভরে যায়। মসজিদের দেয়ালে নির্মাণ সন লেখা রয়েছে ১৩৩১ বাংলা ও ১৯২৫ ইংরেজি সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।
তৎকালীন সময়ে জমিদারি প্রথা চালু থাকার কারণে উপজেলার মহিচাইল গ্রামের জমিদার শ্রী ভৈরব চন্দ্র সিংহ এর অনুমতিক্রমে মেহার গ্রামের তৎকালীন প্রভাবশালী দানবীর ব্যক্তি হাজী নজর মামুদ এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। হাজী নজর মামুদের নাতি হাজী রমিজ, হাজী আ. খালেক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মসজিদটি নির্মাণ কাজের সময় জমিদার শ্রী ভৈরব চন্দ্র সিংহ হাতী চড়ে এসে নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। জমিদার শ্রী ভৈরব চন্দ্র সিংহ তখন একজন প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন। যার জমিদারির আওতাধীন এলাকা ছিল চান্দিনা, বরুড়া, দেবিদ্বার ও দাউদকান্দি এলাকা নিয়ে।
মসজিদটি নির্মাণের পর মসজিদটির নাম দেন মেহার নজর মামুদ হাজী বাড়ি জামে মসজিদ। যা বর্তমানে চান্দিনা উপজেলার সরকারি ওয়েব সাইটে মেহার মধ্যপাড়া হাজী বাড়ি জামে মসজিদ নামে উল্লেখ রয়েছে। আর উপজেলার ৯নং মাইজখার ইউনিয়নের সরকারি ওয়েবসাইটে রয়েছে, মেহার রমিজ হাজী বাড়ির জামে মসজিদ নামে। মূলত মসজিদের নাম হলো নজর মামুদ হাজী বাড়ি জামে মসজিদ। সে সময়ে হাজী নজর মামুদ পায়ে হেঁটে মক্কা শরীফ গিয়ে হজ করেছেন। তৎসময়ে এলাকায় মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কোন মসজিদ ছিল না। তাই তিনি এলাকার মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য নিজ উদ্যোগে মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির সামনে রেখেছেন মুসুল্লীদের বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনা করার জন্য বসার স্থান। মসজিদটির দক্ষিণ পাশে মুসুল্লীদের অযু ও গোসল করার জায়গার জন্য ১২০ শতক জায়গায় তিনি একটি পুকুর খনন করে যান। যাতে রয়েছে পাকা ঘাট। তিনি মসজিদটি নির্মাণ করে ভবিষ্যতে মসজিদ পরিচালনার জন্য প্রতি রমজান মাসের কদরের রাতে মসজিদের মুসুল্লীদের খাবার ও মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের খরচসহ অন্যান্য ব্যয়ভার বহন করার জন্য মসজিদের নামে ২৬৪ শতক জায়গা ওয়াকফ করে দিয়ে যান। হাজী নজর মামুদের ২ ছেলে ছিল, আপ্তরদ্দী ও মিছির আলী। হাজী সাহেবের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে মসজিদের দেখাশোনা করতেন। ছেলেদের মৃত্যুর পর তার ছেলের ঘরের নাতিরা মসজিদটি এখন দেখাশোনা করছেন। বর্তমান সময়ে এসে মসজিদের মুসুল্লীদের স্থানসংকুলন না হওয়ায় তার নাতিরা মসজিদের সামনের খালি জায়গাটি মসজিদের সাথে সংযুক্ত করে স¤প্রসারন করে মুসুল্লীদের নামাজের জায়গা তৈরি করেন। তার পাঁচ নাতির মধ্যে ৩ জন মারা গেছেন। এখন দুই নাতি ও তার বংশের লোকেরা মসজিদটি নিয়মিত দেখাশোনা করছেন।



 

Show all comments
  • হারুন ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৭:২৩ পিএম says : 0
    আললাহ তাদের মসজিদ খেদমত করার জন্য হায়াত বাডিয়ে দিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ