Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টার্মিনালের বাইরে টার্মিনাল

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:৫৪ এএম, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

রাজধানীর সায়েদাবাদ আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালের মাত্র কয়ে গজ দুরে মহাসড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে বিকল্প আরেক টার্মিনাল। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম থেকে গোপীবাগ-মানিকনগর হয়ে একেবারে গোলাপবাগ পর্যন্ত মহাসড়কের উপর থেকে দুরপাল্লার বাস ছাড়ে। ঢাকার বাইরে থেকেও যাত্রীরা এসে মহাসড়কের উপরেই নামে। দিনের বেলা মহাসড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে কয়েকটি কোম্পানীর দুরপাল্লার বাস। এতে করে ওই সড়কে রাতদিন যানজট লেগেই থাকে। চোখের সামনেই সড়ক দখল করে বাস টার্মিনাল গড়ে উঠলেও তা যেন দেখার কেউ নেই। পুলিশও রহস্যজনক কারণে নীরব। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়ক দখল করে দুরপাল্লার বাস টার্মিনাল বানানোর জন্য প্রতিটি বাস কোম্পানীকে প্রতি মাসে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয়। শুধু তাই নয়, গোপীবাগ এলাকায় বাসের কাউন্টার বসানোর জন্য শীর্ষ সন্ত্রাসী নাসিরের লোকজনকেও দিতে হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা। গোলাপবাগ ছাড়িয়ে হানিফ ফ্লাইওভারের পাশ থেকে সায়েদাবাদ জনপদ মোড় পর্যন্ত রয়েছে আরও অর্ধশতাধিক বাস কাউন্টার।
সূত্র জানায়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ৩২টি রুটে প্রতিদিন প্রায় ৬০০-৭০০ বাস ছেড়ে যায়। এর মধ্যে প্রধান ৫টি রুট গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে কয়েক শ’ বাস চলাচল করে। এই ৫টি রুটের বাস ছাড়া বাকি প্রায় সবগুলোই টার্মিনালের বাইরে থেকে আসা-যাওয়া করে। অথচ বাসগুলো চলাচলের জন্য টার্মিনালের অভ্যন্তরে খালি জায়গা পড়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে সায়েদাবাদ টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা তথা রাস্তার শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে রাস্তার উপর থেকে বাস কাউন্টারগুলো সরাতে হবে। এজন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। গোপীবাগ থেকে ছেড়ে যাওয়া একুশে পরিবহনকে এ নিয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, টার্মিনালের বাইরে এভাবে টার্মিনাল বন্ধের দায়িত্ব পুলিশের।
এ দিকে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ হয়ে একেবারে কাপ্তানবাজার পর্যন্ত শত শত বাস, পিকাপভ্যান রাখা থাকে। এসব গাড়ি যান চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেও সেদিকে কারও নজর নেই।
সায়েদাবাদের কাছেই যাত্রাবাড়ী মোড়ে মাওয়া, ডেমরা ও শহীদ ফারুক সড়কে রয়েছে একইরকম বিকল্প বাস টার্মিনাল। মাওয়া সড়কের এক প্রান্ত থেকে ছাড়ে মুন্সীগঞ্জের দুরপাল্লার বাস। আরেক প্রান্ত গাজীপুরের বলাকা পরিবহনের দখলে। ডেমরা সড়ক দখলে রেখেছে শ্রমিক নেতা বাচ্চু। বাচ্চুর নেতৃত্বে আড়াই শতাধিক টেম্পু চলে ডেমরা-সারুলিয়া এবং শনিরআখড়া-রায়েরবাগ হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। এসব টেম্পু থেকে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে বাচ্চুর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগিদের মতে, যাত্রাবাড়ীতে এসব অস্থায়ী বাস ও টেম্পু স্ট্যান্ডের জন্য কোনো যানবাহনই স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। দিনে রাতে লেগে থাকে যানজট।
একই চিত্র রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও। মতিঝিলের আরামবাগে রয়েছে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি,কক্সবাজার, সিলেটসহ বেশ কয়েকটি রুটের বাসের কাউন্টার। মতিঝিল নটরডেম কলেজের উল্টোদিক থেকে ছাড়ে খুলনা, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটিসহ বেশ কয়েকটি রুটের দুরপাল্লার বাস। এমনকি মতিঝিল স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে থেকেও রাতে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের দুরপাল্লার বাস ছাড়ে।
একই দৃশ্য গাবতলী টার্মিনালের আশপাশেও। গাবতলী টার্মিনালের আগে মিরপুর রোডের আসাদ গেইট এলাকায় প্রধান সড়কের উপরেই রয়েছে বেশ কয়েকটি দুরপাল্লার বাসের কাউন্টার। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বড় বড় বেশ কয়েকটি কোম্পানীর বাস ছাড়ে কল্যাণপুর থেকে। গাবতলী টার্মনালের সীমানার একটু বাইরে টেকনিক্যাল মোড় থেকে পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, যশোরসহ বেশ কয়েকটি জেলার দুরপাল্লার বাস ছাড়ে। এসব বাসের কারণে মিরপুর রোডে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। খোদ ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারাও তা স্বীকার করেছেন। তবে তারা এ নিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
গুলিস্তান ফুলবাড়ীয়া বাস টার্মিনাল থেকে যেসব বাস ছাড়ে সেগুলোর বেশিরভাগই আজিমপুরে গিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়ায়। সে কারণে আজিমপুরে অস্থায়ী একটি বাস টার্মিনালের সৃষ্টি হয়েছে। যাতে করে ওই এলাকায় যানজট মানুষের নিত্যসঙ্গী। একই চিত্র রাজধানী অভিজাত এলাকা উত্তরাতেও। উত্তরার আব্দুল্লাহপুর ও আজমপুরে রয়েছে বেশ কয়েকটি দুরপাল্লার বাসের কাউন্টার। মহাখালী টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া সবগুলো রুটের বাসই উত্তরার আব্দুল্লাহপুর ও আজমপুরে দাঁড়ায়। এজন্য সেখানে রয়েছে বাস কাউন্টার। এর বাইরেও শুধুমাত্র উত্তরা থেকে কিছু বাস ছাড়ে যেগুলোর শুরু ও গন্তব্য উত্তরা এলাকাতেই। দুরপাল্লার ওই বাসগুলো মহাখালী টার্মিনাল পর্যন্ত আসে না।
এসব ছাড়াও গোটা রাজধানীর প্রতিটি এলাকার সড়ক দখল করে বড় ও মিনিবাস দাঁড়ানো থাকে। কমলাপুর থেকে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের রাস্তার দুপাশেই বাস দাঁড়ানো থাকে দিনরাত। যাত্রাবাড়ীর কুতবখালী থেকে শনিরআখড়া হয়ে রায়েরবাগ পর্যন্ত শত শত বাস দাঁড়ানো থাকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপরেই। মিরপুর ১ নং সেকশন থেকে দুই নম্বর হয়ে একেবারে ১০ নং গোলচত্ত¡র পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে শত শত বাস দাঁড়ানো থাকে। পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে ছাড়ে গাজীপুরগামী দুরপাল্লার বাস। ভিক্টোরিয়া পার্কের গোলচত্বর পুরোটাই দখল করে রাখে বাসগুলো। যে কারণে এই স্থানে কোনো গাড়িই ঠিকমতো চলতে পারে না।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, রাস্তা দখল করে বাস বা যে কোনো গাড়ি রাখার জন্য পুলিশকে টাকা দিতে হয়। এমনকি ফ্লাইওভারের নিচে গাড়ি রাখার জন্যও পুলিশকে টাকা দিতে হয়। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাফিক ও থানা পুলিশের কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টার্মিনাল

২৯ মার্চ, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ