পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দীর্ঘদিন পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা ছিল আজ। এ উপলক্ষে সারাদেশে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে। ভোটের মাধ্যমে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের জন্য বেশিরভাগ কাউন্সিলরও উপস্থিত হয়েছেন ঢাকায়। কিন্তু আকস্মিকভাবে ভোটের এক দিন আগে সাবেক এক ছাত্রনেতার করা মামলায় স্থগিত হয়ে গেছে বহুল কাক্সিক্ষত ছাত্রদলের কাউন্সিল। বিএনপি এবং ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কবে অনুষ্ঠিত হবে এই কাউন্সিল। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচনের এই সুযোগ ঢেকে গেছে কালো মেঘে। কাউন্সিল নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
এদিকে কাউন্সিল উপলক্ষে প্রার্থীদের সারাদেশের জেলাগুলোতে সফর, ভোটারদের সাথে দেখা করে ভোট প্রার্থনা, ভোটের প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছিলো উৎসবের আমেজ। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হয়ে ওঠেছিলেন চাঙ্গা। যার হাওয়া লেগেছিল বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সব অঙ্গসংগঠনের মধ্যেও। তবে হঠাৎ করে কাউন্সিলে আদালতের স্থগিতাদেশ আসায় স্থবির হয়ে পড়েছে সব কিছু। বিড়ম্বনায় পড়েছেন প্রার্থী এবং ভোট দিতে ঢাকায় আসা কাউন্সিলররা। হতাশা দেখা দিয়েছে সকল নেতাকর্মীদের মাঝে।
গত বৃহস্পতিবার ছাত্রদলের কাউন্সিলের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ চেয়ে সংগঠনটির সাবেক ধর্মবিষয়ক সহ-সম্পাদক আমান উল্লাহর করা আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাচনের ওপর অস্থায়ী স্থগিতাদেশ দেন ঢাকা জেলা জজ কোর্টের ৬ নম্বর আদালত। একইসাথে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১০ নেতাকে ৭ দিনের মধ্যে কাউন্সিলের ব্যাপারে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে। ঠিক আগ মুহূর্তে আদালতের এই স্থগিতাদেশের পর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা। প্রার্থীরাও হতাশা প্রকাশ করছেন।
আদালতের স্থগিতাদেশের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। অনেকেই প্রার্থী, নেতাসহ গণমাধ্যমের কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চান কাউন্সিল নির্ধারিত সময়ে হবে কি না। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো জবাব না দিলেও ওই রাতেই নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলন করে আদালতের স্থগিতাদেশকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আদালতের স্থগিতাদেশের পর করণীয় নির্ধারণে গতকাল শুক্রবার বিকেলে জরুরি বৈঠকে বসেন বিএনপি এবং ছাত্রদলের কাউন্সিল নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও যোগ দেন। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সবকিছু মোকাবিলা করেই ছাত্রদলের সম্মেলন হবে। ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে হঠাৎ করেই মামলা এবং নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ আছে। বর্তমান সরকার দেশে গণতন্ত্রের ন্যূনতম স্থান থাকুক সেটা তারা চায় না। আসলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে ছাত্রদলের সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবেন।
কাউন্সিলে স্থগিতাদেশের পর থেকেই প্রার্থী, কর্মী-সমর্থক ও কাউন্সিলদের মাঝে প্রশ্ন- এখন কী হবে, কিংবা আদৌ কাউন্সিল হবে কি না, সব প্রস্তুতি কি ভেস্তে যাবে- এমন প্রশ্ন ও সংশয় এখন ছাত্রদল নেতাদের মাঝে। অথচ একদিন আগেও নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে ছিল সাজ সাজ রব। ছাত্রদলের সম্মেলনে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে বিএনপিও শঙ্কায় পড়েছে। কার ইন্ধনে এ স্থগিতাদেশ চাওয়া হল- সেটাই এখন আলোচনার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নেতাকর্মীরা ক্ষোভের সুরে জানান- কাউন্সিল এখন অনিশ্চিত হয়ে গেলো? যদিও কাউন্সিল হবে এমন আশায় গতকাল দিনভর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল ও শোডাউন দিয়েছেন প্রার্থী এবং তাদের অনুসারীরা। এসময় তারা ‘অবৈধ নিষেধাজ্ঞা মানি না, মানব না’, ‘ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে ষড়যন্ত্র, রুখে দাও ছাত্রসমাজ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান।
এদিকে আদালতের আদেশ নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের ভেতরে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, সরকারের হাত থাকতে পারে। আবার নিজেদের দলের নেতাদের প্রতিও সন্দেহের চোখ অনেকের। বিশেষ করে ছাত্রদলের সাবেক এক সভাপতির বিষয়ে অনেক প্রার্থী ও কাউন্সিলর সন্দেহ প্রকাশ করছেন। কারণ মামলাকারী আমান উল্লাহ সেই সাবেক সভাপতির অনুসারি বলেও প্রচারণা রয়েছে তাদের মধ্যে।
তারা বলেন, যারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ মনে করেন তারা এর পেছনে থাকতে পারেন। বিশেষ করে দলের অভ্যন্তরে একটি গ্রæপ আছে যারা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচনের বিপক্ষে। এ ক্ষেত্রে তাদেরও প্রভাব থাকতে পারে। কেননা বহুদিন পর তারেক রহমান সম্মেলনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের যে ধারা চালু করেছেন তা প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্ত।
জানা গেছে, মামলার বাদী ছাত্রদলের সাবেক নেতা আমান উল্লাহ আমানের আবেদনকারী আমানের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। তার সম্পর্কে কাউন্সিলের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে জোর করে এই মামলা করতে বলা হয়েছে। আমরা তার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। যেভাবে রিমান্ডে নিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়, আমরা মনে করি, আমানকে দিয়ে তা-ই করানো হয়েছে। বিবেকবান সব মানুষই বোঝেন, এর পেছনে সরাসরি সরকারের হাত রয়েছে। বিষয়টি আইনী ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবেন বলে তিনি জানান।
বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন বলেন, সরকার ষড়যন্ত্র করে ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিত করার নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবো।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ: এদিকে গতকাল দিনভর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও শোডাউন করেছেন ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এবং তাদের অনুসারীরা। তাদের দাবি আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে যে কোনো মূল্যে ছাত্রদলের সম্মেলন করতে হবে। আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে গতকাল নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন সভাপতি প্রার্থী ফজলুর রহমান খোকন, হাফিজুর রহমান, সাজিদ হাসান বাবু, মামুন খান, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আমিনুর রহমান, শাহনেওয়াজ, তানজিল হাসান, ইকবাল হোসেন শ্যামল, মো: জুয়েল হাওলাদারসহ অনেক প্রার্থী। কাউন্সিল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী ফজলুর রহমান খোকন এবং হাফিজুর রহমান বলেন, কাউন্সিল না হওয়া এবং এ বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা দুঃখজনক। এই আদেশের পেছনে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে। তারা চায় না দেশে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত থাকুক। তারা বলেন, সারাদেশ থেকে অনেক কাউন্সিলর ঢাকায় চলে এসেছেন। অনেক কাউন্সিলর অর্ধেক রাস্তা থেকেই ফিরে গিয়েছেন। একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের কাউন্সিল হঠাৎ করে এভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই কাউন্সিলের কারণে আমাদের সাথে তৃণমূলের যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তা আজীবন থাকবে ইনশাআল্লাহ। তারা আদালতের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান।
অপর সভাপতি প্রার্থী সাজিদ হাসান বাবু ও মামুন খান বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিল উপলক্ষে সারাদেশে যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে তাতে সরকার ভয় পেয়েছে। তৃণমূলসহ ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব সংগঠিত হয়ে এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবে জেনেই আদালতকে ব্যবহার করে কাউন্সিলে বাধা দেয়া হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আমিনুর রহমান বলেন, একটি গোষ্ঠী আদালতের আশ্রয় নিয়ে ছাত্রদলের কাউন্সিল বাধাগ্রস্ত করেছে। এর পেছনে অশুভ উদ্দেশ্য আছে। আমরা আদালতের অবৈধ আদেশ মানি না। শাহনেওয়াজ ও তানজিল হাসান বলেন, তারা আদালতের আদেশের পর খুবই মর্মাহত এবং স্তম্ভিত। কারণ শেষ মুহূর্তে এসে কাউন্সিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা খুবই হতাশাজনক। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যাতে ছাত্রদলের কাউন্সিলটা হতে না পারে, সেজন্য সরকারের নির্দেশিত হয়ে এ নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।