পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লেখার শিরোনামটি সুন্দর নয়। এটি দেখে মানুষের ভালো লাগবে না। জানি, অনেকে কষ্ট পাবেন। কিন্তু বাধ্য হয়েই এমন একটি অভাবনীয়, অশোভনীয় শিরোনাম চলে এসেছে। কারণ, এটি এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার একটি শিরোনাম ও আলোচ্য বিষয়। আন্তর্জাতিক মিডিয়া এমন খারাপ ভাষায় একটি প্রতিবেদন করায় এর জবাবে আমরাও অনিচ্ছা সত্তে¡ও এভাবে শিরোনামটি করেছি।
এদেশের কোটি কোটি মানুষ তাদের ধর্মীয় বিষয়গুলোকে নিষ্কলুষ দেখতে চায়। পবিত্র আবহে সচল ও সজীব ভাবতে চায়। শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ নিজেরা যতটুকু ধর্ম পালন করতে পারে বা না পারে, নিজেদের ধর্মীয় দায়িত্বশীলদের পূর্ণাঙ্গ ও নিখুঁত আদর্শ হিসেবে পেতে চায়। নিজেরা ধূমপান করলেও মসজিদের ইমাম সাহেব সিগারেট খাবেন তা এ দেশের মানুষ আশা করে না।
অনেক মানুষ নিজেরা দাড়ি শেভ করে। কিন্তু কোনো আলেম দাড়ি কাটুক তা পছন্দ করে না। নিজে পর্দা ততটা মেনে না চললেও আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের পর্দা লঙ্ঘন মেনে নিতে পারে না। এমনকি যারা নির্দ্বিধায় সুদ-ঘুষ খেয়ে বেড়ায় তারাও তাদের হুজুরকে অবশ্যই হালাল খানা খাওয়ার উপরন্তু সন্দেহজনক খাবার থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে ভালোবেসে পাহারা দিয়ে রাখে।
সুযোগ পেলে প্রশ্ন করে বসে। এসবই তাদের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও আলেমদের প্রতি মহব্বতের নিদর্শন। আলহামদুলিল্লাহ, ধর্মীয় ব্যক্তিরাও শত শত বছর ধরে জনগণের এ আস্থা, বিশ্বাস, ভরসা ইত্যাদি সযতেœ ধরে রেখেছেন। দেশের গড়পড়তা নীতি-নৈতিকতা ও গণচরিত্রের তুলনায় ধর্মীয় সমাজের নীতি ও চরিত্রের মান অকল্পনীয় স্বচ্ছ, পবিত্র ও অপরাধমুক্ত।
মানুষ গর্বভরে বলে থাকে, দ্বীনি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা কিংবা এদের সাথে জড়িত মানুষেরা অপেক্ষাকৃত খুবই কম অপরাধপ্রবণ। আলেমরাও উঁচু গলায় বলেন, গত ৫০ বছরের খুন, গুম, চুরি, ডাকাতি, মাদক, ছিনতাই, ধর্ষণ, দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ে দেশের সব থানার রেকর্ড খোঁজ করলে কোনো প্রকৃত মাদরাসা শিক্ষিত বা আলেম ওলামার নামে মামলা বা একটি জিডি পর্যন্ত পাওয়া কঠিন। যদি মানুষ হিসেবে দুর্বলতার দরুন এ ধরনের কেউ কোনো অপরাধে যুক্ত হয়েও থাকে তাহলেও এর সংখ্যা সাধারণ অপরাধীর তুলনায় গণ্য হওয়ার মতো নয়। কোনো গড়েই তা পড়ে না।
এরপরও দেখা যাবে যাকে আলেম বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বলা হচ্ছে তিনি মূলত তেমন কেউ নন। হয়তো তার বাহ্যিক রূপ আলেমের। আসলে তিনি ইসলামের আদর্শ ধারণ করেননি। অনেক সময় চেহারা-সুরত পোশাক-আসাক থেকে মানুষ ধরে নেয়, লোকটি মনে হয় আলেম। অনুসন্ধান করলে বোঝা যাবে অপরাধী লোকটি আলেম নয়। মানবিক দুর্বলতা বা রিপুর তাড়নায় মানুষ অপরাধ করে ফেলে। এজন্য শিক্ষা, মোটিভেশন ইত্যাদি তো আছেই। আইন বিচার ও শাস্তির নিয়মও রয়েছে।
ইসলাম আইনের ক্ষেত্রে সবাইকে সমান দেখে। দুর্ভাগ্যক্রমে যদি ইমাম ও আলেম পরিচয়ের কেউ সমাজবিরোধী কোনো অপরাধ করে তাহলে তার জন্য আইনের বিধান সমান। একটি মাদরাসা শিক্ষক বা সাধারণ আলেম দেওয়ানী বা ফৌজদারি অপরাধ করলে এবং তা প্রমাণিত হলে তার বিচারে আলেম সমাজ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, এমন নজির ইতিহাসে নেই।
কেউ হয়তো বলবেন, সমাজ ও দায়িত্বশীল লোকজন নিজেদের মধ্যে সঙ্ঘটিত অপরাধ ঢেকে রাখেন। সামাজিক সালিস বিচারে এর ইতি ঘটান বা দেখেও না দেখার ভান করেন। এ ক্ষেত্রে যারা বিষয়টির ফলে সৃষ্ট মন্দ প্রতিক্রিয়া থেকে শ্রেণি সমাজ প্রতিষ্ঠান ও পরিপার্শ্বকে বাঁচানোর দিকটিকে প্রাধান্য দেন। তাদের ভ‚মিকার পক্ষে নিজেদের যথেষ্ট যুক্তি থাকে। এখানে যে দিকগুলো উপেক্ষিত থেকে যায়, এসবের প্রতিও সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে হবে।
বিচারে অসন্তুষ্ট পক্ষ এখানে সরাসরি আইনের আশ্রয় নিতে পারে। সমস্যাটি শিকড় থেকে উপড়ে ফেলার জন্য যেকোনো ন্যায্য ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্পও নেই। তবে একটা কথা স্পষ্ট যে কোনো ধর্মীয় ব্যক্তির পদস্খলন হলে তার বিচারও রাষ্ট্রের আইনেই হওয়ার নিয়ম। মাদরাসা মসজিদ বা ইসলামী সংগঠনের পক্ষে কারো শাস্তি বিধান শরীয়তের আইনে নিজেদের হাতে বাস্তবায়ন করা ইচ্ছা করলেই সম্ভব নয়।
সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বার্তা সংস্থা এএফপি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দুনিয়ার বহু দেশের প্রধান প্রধান সংবাদ মাধ্যম স্বল্পতম সময়েই সেটি বারবার ছেপেছে। এত বেশি আগ্রহে প্রতিবেদনটি লুফে নেয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের সম্পর্কে অতীতে খুব কমই করা হয়েছে। এ শিরোনাম বিভিন্ন জায়গায় আলাদা আলাদা হলেও বেশির ভাগের ব্যবহৃত মূল শিরোনাম ছিল (Bangladeshis Speak up about rampant rapes in Madrasas).
কোনো কোনো মিডিয়া মাদরাসার স্থলে (Islamic Schools) শব্দটি ব্যবহার করেছে। এটি আন্তর্জাতিক ইসলাম বিদ্বেষী চিন্তাবিদদের সুচিন্তিত কার্যক্রমের অংশ হওয়াও বিচিত্র নয়। তারা নিউজটিকে এমন শিরোনাম দিয়েছেন যাতে মনে হবে বাংলাদেশে সম্ভবত সবচে’ বড় সমস্যা এখন এটিই। আর এ বিষয়টি নিয়ে দেশে কোনো গণঅভ্যুত্থান হয়ে যাবে।
দীর্ঘদিন মাদরাসাগুলোকে জঙ্গিবাদের আস্তানা ও জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র বলে প্রচার করেও মানুষের মনে এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। এখন একটি সুযোগ তারা পেয়ে গেলেন মিডিয়ার মাধ্যমে মাদরাসা ও আলেম-ওলামাকে ভালো রকম পচানোর। যদি এটি মানুষকে খাওয়ানো যায় তাহলে মাদরাসা বন্ধ করার বহু পুরনো পাঁয়তারা এক সময় সফল হতেও পারে।
জাতিসংঘের ১৯৮৯, ২০০০ সালে এবং অন্যান্য সময় প্রণীত রেজুলেশনেও ১৯৫৯ সালের শিশু অধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র সিআরসি-এর দৃষ্টিতে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ খুবই মারাত্মক। শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় যেকোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান’ নিতে রাষ্ট্র বাধ্য এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও ‘নেসেসারি অ্যাকশন’ নিতে বাধ্য। এর আলোকে অসংখ্য সংবাদ প্রতিবেদন ও প্রবন্ধ নিবন্ধ তৈরি হতে থাকবে। অনলাইনে ছড়িয়ে যাবে। ভার্চুয়াল জগত ভরে যাবে। কাটিং ও ফাইল জমা হতে হতে স্ত‚পের আকার নেবে।
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে রাষ্ট্রকে চাপ দেয়া হবে মাদরাসা বন্ধ করো। পুতুল সরকার বসার সুযোগে মাদরাসা ও আলেম সমাজকে ধ্বংস করে দেয়া হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নামে বাইরের হস্তক্ষেপও তখন বৈধতা পাবে। পাশাপাশি পশ্চিমাদের নগদ একটি লাভ হয়ে গেল, গির্জাগুলোয় চাইল্ড এবিউজের যে ব্যাপক ও মারাত্মক অভিযোগ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, এক নিউজে সেসবের তুলনায় জমজমের পানিতে ধোয়া মাদরাসাগুলোকে গির্জার কাতারে নিয়ে যাওয়া হলো।
ক’মাস আগেও পশ্চিমা মিডিয়ার এক প্রতিবেদনেই খবর এসেছিল, গির্জা সম্পর্কীয় গুরুরা ৮০ শতাংশই সমকামী ও ধর্ষণের সাথে যুক্ত। সে তুলনায় মাদরাসায় এ ধরনের কিছু যদি ঘটেও থাকে তাহলে তুলনামূলকভাবে এর উপমা ‘স্বাভাবিক’ অবস্থার সামনে ‘দুর্ঘটনা’র মতোই। এ জন্য পশ্চিমা গির্জার তুলনায় দায়িত্ব নিয়েই মাদরাসাকে জমজমের পানিতে ধোয়া বললাম।
কোনো ঘটনার ভিত্তিতে ভিকটিম কথা বলবে বিচার চাইবে বিচার পাবে এসব খুবই স্বাভাবিক এবং তার অধিকার। সংশ্লিষ্টরা সামান্য সমস্যা হলেও তা পূর্ণ গুরুত্ব দিয়ে বিদূরিত করবেন। এ ক্ষেত্রে যারা ইসলামী শিক্ষার উন্নয়ন চায় তাদের নিজেদের ভেতর কাজ করতে হবে। পরামর্শ ও প্রস্তাবসহ কমিউনিটিকে পথ দেখাতে হবে। তবে শত্রুর হাতিয়ারে পরিণত হওয়া চলবে না।
ধর্ষণের সেঞ্চুরি, শত শত এবিউজিং, ভার্সিটির হলে অবৈধ নবজাতককে ট্রাংকে লুকিয়ে রেখে মেরে ফেলা, ছাত্রী কোচিংয়ে যৌন নির্যাতন কেন্দ্র তৈরি প্রভৃতির জন্য যদি ভার্সিটি কলেজ স্কুল কোচিং সেন্টার চিরতরে বন্ধ ও নির্মূল করে দেয়া না হয়, তাহলে এসবের তুলনায় অনুল্লেখযোগ্য কারণে মাদরাসা বন্ধের কথা উঠছে কেন? তাছাড়া গির্জার সাথে মসজিদের তুলনা কিসের? অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে মাদরাসার কথা আসবে কেন?
মসজিদ তো ২৪ ঘণ্টাই দশ দিক দিয়ে খোলা। অন্য ধর্মের ধর্মস্থানের মতো উঁচু পাঁচিল ঘেরা ও ফটক আঁটা নয়। মাদরাসাকে তার সোনালি ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। সেখানে কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে আদর্শের দাবিতেই তাকে দূরে নিক্ষেপ করতে হবে। আইনের আওতায় আনতে হবে।
অতীতে যারা ধর্ম আস্থা বিশ্বাস আমানত শ্রদ্ধা ও ভক্তির উচ্চ আসনে জীবনভর থেকেছেন, এক মুহূর্তের জন্যও তাদের সে আসনচ্যুত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যিনি কোরআন সুন্নাহর ধারক তিনি তো পার্থিব জীবনে প্রতিষ্ঠার চিন্তা পেছনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েই দ্বীনের কাজকে বেছে নিয়েছেন। এখানে মনের কুপ্রবৃত্তিকে প্রশ্রয় দিয়ে ইসলামের ক্ষতি করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
চার দিকে এখন যে অবস্থা শুরু হয়েছে তা নিয়ে আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদদের ভাবতে হবে এবং মানুষকে বোঝাতে হবে। দায় এড়িয়ে না গিয়ে সমাজকে সংশোধন করতে হবে। দেশে চার-সাড়ে চার লাখ মসজিদ, লাখো মাদরাসা এখানে লাখ লাখ মানুষ কর্মরত আছেন। একজন কেউ যদি শুধু অভিযুক্ত না, অপরাধী বলে প্রমাণিত হয় তার পক্ষে কেউই দাঁড়াবে না।
মাদরাসাগুলো যেভাবে সন্ত্রাসী সন্দেহ করলে যে কোনো ছাত্র-শিক্ষক পরিচয়ধারী ভুল ব্যক্তিকে প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়। সেভাবে কোনো যৌন অপরাধীকেও তাদের পরিচয় খুঁজে বের করে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে। আর মিডিয়া যখন প্রচার করে তখন বলে দেয় একজন ইমাম এমন বা একজন আলেম এমন। কেউ খুঁজে দেখবে না যে, যাকে ইমাম বা আলেম বলা হচ্ছে মূলত তার যোগ্যতা পড়ালেখা আদর্শিক দৃঢ়তা ও সার্বিক অবস্থা কোন পর্যায়ের ছিল।
সামাজিকভাবে এদেশে সারাজীবনই দেখা গেছে সমাজের মুরব্বীরা গুরুত্বপূর্ণ পদে বিশেষ করে ইমাম, বড় হুজুর, পীর, মাশায়েখ হওয়ার ক্ষেত্রে একটু বয়সী লোক তালাশ করেছেন। বিয়ে করেননি, বয়সে তরুণ, ফ্যামিলি সাথে রাখেন না এমন ব্যক্তিকে ইমাম বা বড় হুজুর হিসেবে নিয়োজিত করা হয়নি। এটি তার মানসিক স্থিরতা ও পরিশুদ্ধ মননের প্রত্যাশা নিয়ে করা হতো। আর এসব বাছ-বিচারের ফলেই দুনিয়ার সব ধর্মের তুলনায় বিশ্বব্যাপী ইসলামী ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ তুলনামূলক সর্বশ্রেষ্ঠ পবিত্র ও নিষ্কলুষ।
ইদানীং কিছু ঘটনা সিরিজ আকারে মিডিয়ায় আসতে শুরু করেছে। নাম গোত্রহীন মহিলা মাদরাসা বা বালক মাদরাসা, কোনো ব্যক্তি একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ঘন বসতিপূর্ণ শহরে মাদরাসা নামক একটি প্রাইভেট ঠিকানা বানিয়ে নিলো কিংবা অজপাড়াগাঁয়ে একটি ঘর নিয়ে বলে দিলো, এটি একটি মাদরাসা। জনসংখ্যাও বাংলাদেশে অচিন্ত্যনীয়। ছেলেমেয়েদের এক জায়গায় পড়তে দিতে হয়। কোয়ালিটিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সুবিধা সবার থাকে না। তাই এক রুমের ভাড়া বাসা বা বড় জোর মাদরাসা পরিচালকের বাসার একটি অংশ মাদরাসা হিসেবে গণ্য হয়। এমন অসংখ্য আছে।
ভালো হলে তো কোনো কথাই নেই। মন্দ কিছু হলে দুনিয়ার সব মাদরাসা এই ঘরটির সাথে সাথে বদনামের শিকার হয়। এই শিক্ষকটির কারণে গোটা আলেম সমাজকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়। একটু লক্ষ করলে ইদানীংকার কথিত মাদরাসা ও এর পরিচালক যারা শিশু নির্যাতনের অভিযোগের শিকার তাদের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্ব কোন পর্যায়ভুক্ত তা সহজেই অনুমান করা যাবে।
মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের খুব সতর্ক থাকতে হবে, যেন প্রতিটি শিক্ষক ও ছাত্রের পরিচয়পত্র, চারিত্রিক সনদ, নাগরিক সনদ, আগের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাগত ও নৈতিক চরিত্রগত সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ মাদরাসায় থাকতে না পারে। এমন ঘটনা ঘটাও অসম্ভব নয়, টাকা-পয়সার বিনিময়ে মাদরাসার লোক বানিয়ে টুপি-জামা গায়ে দিয়ে কাউকে দিয়ে শিশু নির্যাতন, ঘৃণ্য অপরাধ এমনকি খুন পর্যন্ত করানো হবে। মিডিয়ার মাধ্যমে বিচারও সেরে ফেলা হবে। বলা হবে, এই হচ্ছে মাদরাসা।
অতীতে দেখা গেছে, শত্রু মিডিয়ায় সংবাদ ছাপা হয়ে গেছে কোনো ঘটনার। অথচ ঘটনাটি ঘটেনি। এরপর মানুষ বুঝেছে, সংবাদটি সত্য হওয়ার জন্য ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। খুব সতর্কতার সময় এখন। জানাও যাবে না, আলেম ও মাদরাসা শিক্ষার্থী নামের যে অপরাধী ধরা হবে সে মূলত মুসলমানের সন্তান কি না। নাকি অন্য কোনো ধর্মের?
ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার বিখ্যাত এক মাদরাসায় একবার ১৫ জন ভিন্নধর্মাবলম্বী তরুণ মুসলমান ও মাদরাসা শিক্ষার্থীর রূপ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। একদিন তারা কিছু শিশুছাত্র হত্যার পরামর্শ করার সময় অন্য ছাত্ররা তা শুনে ফেলে এবং তাদের পরস্পরের নাম ও আচরণ থেকে বোঝে যে এরা মুসলিম নয়। যখন কর্তৃপক্ষ তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এরা সবাই পালিয়ে গেছে। বিষয়গুলো খুবই ভাবনার।
ইসলামের শত্রুদের বিদ্বেষমূলক কর্মকান্ড সম্পর্কে যারা খোঁজখবর রাখেন তাদের জানা থাকার কথা যে, অতীতে মধ্যপ্রাচ্য ও উপমহাদেশে এমন ঘটনাও পাওয়া গেছে যা বিশ্বাস করা কঠিন। ত্রিশ বছর মিসরে ইমামতি করে চলে যাওয়ার পর প্রমাণিত হয় যে, ইমাম সাহেব ছিলেন একজন ইহুদি। ব্রিটিশ গোয়েন্দা লরেন্স অব এরাবিয়ায় কেমন করে নামাজ তসবীহ তাহলিল ইত্যাদি করেছিলেন অনেকেই তা জানেন।
উইলিয়াম হামফ্রে লিখেছেন, মুসলমানের ভান ধরে মিসওয়াক করতাম, কিছুদিন পর আমার মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে পাইওরিয়াও ভালো হয়েছিল। ভারতে বিশাল এক মাদরাসা আবিষ্কৃত হয়েছিল, দেখতে সাহারানপুরের মতো বড়। তবে এর প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক ও শিক্ষকদের সবাই ছদ্মবেশী অমুসলিম। ছাত্র সব ছিল অবুঝ মুসলমান।
সম্প্রতি কয়েক বছরে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে অমুসলিম তালিবান, মুজাহিদ ইত্যাদি কত কিছু পাওয়া গেল। আমাদের দেশেও মসজিদ-মাদরাসায় সমাজের অন্যান্য অঙ্গনের সাথে পাল্লা দিয়ে শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌনতা পাওয়া যদি শত্রুদের জন্য খুবই জরুরি হয়ে পড়ে তাহলে ছদ্মবেশী বা সাজানো লোকজনের ব্যবস্থা করা কি খুবই কঠিন? ঘন ঘন ঘটনা ঘটতেই থাকবে, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, মিডিয়া ও দর্শক প্রথম পর্বটি দেখবে। শেষতক কী হয় তা আর কেউ খোঁজ নেবে না।
মাদরাসা ও আলেম সমাজের শত শত বছরের ত্যাগ তিতিক্ষা, সংগ্রাম, সাধনা, ধৈর্য, সহ্য ও কষ্টসহিষ্ণুতা এক নিউজেই ধুলোয় মিশে যাবে। যুগ যুগ ধরে খোদাভীতি, নৈতিকতা, উন্নত চরিত্র, উত্তম আচরণ, নির্লোভ জ্ঞান সাধনা, সৎ ও সাত্তি¡ক জীবন এক প্রতিবেদনেই পানিতে ভেসে যাবে। আসলেই কি এমন হবে?
যদি মাদরাসা আল্লাহর দ্বীনের দুর্গ হিসেবে নিজের মূল আদর্শকে ধরে রাখে, যদি আলেম সমাজ নিজ গুরুদায়িত্ব সঠিক উপায় সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে পালন করেন, যেসব সমস্যা আছে তা দূর করতে সচেষ্ট হন, তাহলে কোনো আশঙ্কাই বাস্তবায়িত হবে না। শত্রুর কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।