Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফুলবাড়িতে অবৈধ বালু উত্তোলন

বিলীন হচ্ছে বাঁধ ও ফসলি জমি

মো. আবু শহীদ, ফুলবাড়ি (দিনাজপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে ছোট যমুনা নদী থেকে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করলেও নিরব ভুমিকায় রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে নদীর বিভিন্ন এলাকায় বালু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো বালু উত্তোলন করায়, নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে গ্রামরক্ষা বাঁধসহ ফসলী জমি। শুধু তাই নয়, বালু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো বালুর দাম নেয়ায় তাদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে, বালু বহনকারী ট্রাক্টর মালিক-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ি উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের ছোট যমুনা নদীর রাজারামপুর মৌজার বেলতলী ঘাট ও গোপলপুর ঘাট বালুমহল হিসেবে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বালুমহল ইজারাদার ইমরুল হুদা চৌধুরী ইনু, বেলতলী ও গোপালপুর ঘাট ছাড়াও, উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের গঙ্গাপ্রসাদ ঘাট, মৎস্যর বিল থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে।
এছাড়া উপজেলার খয়েরবাড়ি ইউনিয়নের মহদীপুর ঘাট, জমিদারপাড়া ঘাট, দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া ঘাট, জানিপুর ঘাটে সাব-ইজারাদার নিয়োগ করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ইচ্ছামত বালু উত্তোলন করছে। বারাইপাড়া ঘাটের বালু উত্তোলনকারী বাবলু মিয়া বলেন, প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা চুক্তিতে, বালুমহল ইজারাদার ইনুর নিকট থেকে তিনি বারাইপাড়া ঘাট সাব-ইজারা নিয়েছেন। একই কথা বলেন, মহদীপুর ঘাটের বালু উত্তোলনকারী মুরাদ হোসেন। জমিদারপাড়া ঘাটের বালু উত্তোলনকারী মতি বলেন, জমিদারপাড়া ঘাট থেকে বালু উত্তোলনের জন্য প্রতিমাসে ৬০ হাজার টাকা করে দিতে হয় বালুমহলের ইজারাদার ইমরুল হুদা চৌধুরী ইনুকে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বালুমহল ইজারাদার ইমরুল হুদা চৌধুরী বলেন, মাত্র দুটি ঘাট থেকে বালু উত্তোলন করে ইজারা মূল্য পরিশোধ করা কঠিন, তাই তিনি ওই ঘাটগুলো সাব-ইজারা প্রদান করেছেন।
এদিকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ ফসলি জমি। জাফরপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষক হামিদুল হক বলেন, বালু উত্তোলনের কারণে গত বছরে বন্যায় তাঁর প্রায় এক একর ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে, এই বিষয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি। একই কথা বলেন, খয়েরবাড়ি জমিদারপাড়া গ্রামের আফছার আলী।
খয়েরবাড়ি ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি এনামুল হক বলেন, জমিদারপাড়া ঘাটে যেভাবে বন্যার হাত থেকে গ্রামরক্ষা বাঁধটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাতে আগামী বন্যায় এই এলাকার বাড়ি-ঘর ও মাঠের ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়ে যাবে। রাজারামপুর গ্রামের আবু বক্কর বলেন, বালু উত্তোলনের ফলে তার এক বিঘা জমি ইতোমধ্যে নদীতে চলে গেছে, এখন যেভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে আগামী বন্যায় তার পাশের জমিটিও নদীতে চলে যাবে।
এদিকে বালু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামত বালুর দাম নির্ধারণ করে, জিম্মি করে ফেলেছে বালু বহনকারী ট্রাক্টর মালিক শ্রমিকদের। ট্রাক্টর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মকলেছার রহমান সরকার নবাব বলেন গত কয়েক দিন পুর্বেও ৩৫০ টাকায় এক ট্রাক্টর বালু ঘাট থেকে নেয়া হয়েছে, এখন বালুর ইজারাদার এক ট্রাক্টর বালুর দাম নির্ধারণ করেছে ৭০০ টাকা, এতে করে তাঁরা উন্নয়মূলক প্রকল্পে বালু সরবরাহ করতে পারছে না।
ট্রাক্টর মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বালু ইজারাদারের দৌরাত্বে জিম্মি হয়ে পড়েছে ট্রাক্টর মালিক ও শ্রমিকরা, বালু ইজারাদার এক মাস পরপর বালুর দাম বৃদ্ধি করছে, এতে উন্নয়নমূলক কাজের ব্যয় বাড়ছে।
ইজারা ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন ও বালুমহল ইজারাদারের দৌরাত্বের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা হবে।
এবিষয়ে গ্রামবাসীরা বলেন, কয়েক বছর থেকে বালুর ইজারাদার তার ইচ্ছামত বালু উত্তোলন করলেও কোন ব্যবস্থাই গ্রহন করেনি উপজেলা প্রশাসন।
এই প্রসঙ্গে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম বলেন, কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে পারবে না। অল্পসময়ের মধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান করবেন বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ