পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারের সব প্রকল্প এবং প্রতিষ্ঠানজুড়ে দুর্নীতির দূরন্ত গতি চলছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, চারদিকে শুধু ‘উল্টে পাল্টে দে মা, লুটেপুটে খাই’ অবস্থার বিস্তার ঘটেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান একবার তাঁর দলের লোকজনের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি দেখে দুঃখ করে বলেছিলেন, পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে, চোরগুলো সব রেখে গেছে, সেই চোর আর চাটার দল একত্রিত হয়ে সোনার বাংলা লুটে নিচ্ছে। আজও সেই আওয়ামী লীগের লোকজন লুটপাট আর দুর্নীতিকে তাদের নীতি করে নিয়েছে। নিশিরাতের নির্বাচনের সরকারের প্রশ্রয়ে ও ছত্রছায়ায় দুর্নীতির মচ্ছব চলছে। তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফ্ল্যাটের জন্য ৬ হাজার ৭১৭ টাকায় একেকটি বালিশ ক্রয়ের মহাদুর্নীতিসহ ৩৬ কোটি টাকার বেশি লুটপাটের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর এবার দুর্নীতির বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর আর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে আড়াল করাতে একটি পর্দা কিনতে দাম দেখিয়েছে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে হাসপাতালটির যন্ত্র ও সরঞ্জাম কেনাকাটাতেই অন্তত: ৪১ কোটি টাকার দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এখন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি অক্সিজেন জেনারেটিং প্ল্যান্ট কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। একটি ভ্যাকুয়াম প্ল্যান্ট ৮৭ লাখ ৫০ হাজার, একটি বিএইইস মনিটরিং প্ল্যান্ট ২৩ লাখ ৭৫ হাজার, তিনটি ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মেশিন ৩০ লাখ ৭৫ হাজার, আর একটি হেডকার্ডিয়াক স্টেথোসকোপের দাম ১ লাখ ১২ হাজার টাকা। এমন অবিশ্বাস্য দামে ১৬৬টি যন্ত্র ও সরঞ্জাম কিনেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির ১১ কোটি ৫৩ লাখ ৪৬৫ টাকার মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনাকাটায় বিল দেখানো হয়েছে ৫২ কোটি ৬৬ লাখ ৭১ হাজার ২০০ টাকা।
তিনি বলেন, হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তারাও এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। বই ক্রয়ে রীতিমত পিলে চমকানো দুর্নীতি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সাড়ে ৫ হাজার টাকা দামের একটি বই স্বাস্থ্য অধিদফতর কিনেছে সাড়ে ৮৫ হাজার টাকায় ! গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের জন্য ‘প্রিন্সিপাল অ্যান্ড প্র্যাকটিস অব সার্জারি’ নামক সার্জারির পাঠ্য বইয়ের ১০টি কপি কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ১০ কপি বইয়ের মোট দাম পরিশোধ করা হয়েছে ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকায়। শুধু এই একটি আইটেমের বই-ই নয়, দুটি টেন্ডারে ৪৭৯টি আইটেমের ৭ হাজার ৯৫০টি বই কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এসব বইয়ের মূল্য বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৪৩ টাকা।
নানা প্রকল্পের নামে ক্ষমতাসীন দলের লুটেরাদের কর্মকা-ে উৎসাহিত হয়ে এখন প্রশাসনের লোকজনও স্বেচ্ছাচারিতা আর দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, পুকুর কাটা শিখতে রাজশাহীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ১৬ কর্মকর্তা রাষ্ট্রের ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় করে ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন। আবহমানকাল ধরে এদেশের সাধারণ মানুষ পুকুর কাটার যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছে, এটিই তো সারাবিশ্বের কাছে শিক্ষণীয়। দেশব্যাপী যে বিখ্যাত দীঘিগুলো এখনও অস্তিত্বমান, তার জন্য কি এই পুকুর কাটার সাথে জড়িতরা বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছিল? শত শত বছর ধরেই তো দেশীয় লোকেরা মসজিদ, মন্দির, মাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে অথবা আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতাসম্পন্ন মানুষরা নিজেদের বাড়ীর সামনে পুকুর-দীঘি তৈরী করেছেন তাদের তো বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়নি। তাহলে রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের এটা কি আসলে অভিজ্ঞতা সফর নাকি ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যরাতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ব্যালট বাক্স পূর্ণ করে ক্ষমতায় বসানোর পুরস্কার? তাই এসব দেখে শুনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উদ্ধৃতি মনে পড়ে গেল-আমাদের রাজা গুণীর পালক/মানুষ হইয়া গেল কত লোক। আসে এক বুড়ো গণ্যমান্য/করপুটে লয়ে দুর্বাধান্য/রাজা তার প্রতি অতি বদান্য/ভরিয়া দিলেন থলি।
প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি মহামারি আকার ধারণ করেছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, মশা মারা শিখতে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। সিলেট বিভাগে বক্স-কালভার্ট বানাতে কনসালটেন্সি বাবদ খরচ করা হয়েছে দেড় কোটি টাকা ! গত চার বছরের বেশি সময় নিয়ে ঢাকা ওয়াসার একটি পানি পরিশোধন প্রকল্প শেষ হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৮’শ কোটি টাকা। সম্প্রতি এই প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফেটে গেছে পানির পাইপ। ইতোমধ্যে সিলেটের এক কারা কর্মকর্তার বাসায় ঘুষের ৮০ লাখ টাকা পাওয়া, স্বাস্থ্য বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীর আবজল দম্পতির দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পদের কাহিনী হারিয়ে যেতে না যেতেই রূপকথার পর্দার কাপড়, পুকুর খনন শিক্ষা, বই কাহিনী আর মশা মারা শেখার নামে বিদেশে বিনোদন ভ্রমণের খবর ফাঁস হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন সরকার বিরোধী নেতাকর্মীর পিছনে বেপরোয়াভাবে ছুটাছুটি করলেও দেশের প্রতিটি সেক্টরে যখন দুর্নীতি মহামারী আকার ধারণ করেছে, তখন তারা নীরব ভূমিকা পালন করছে বলেও মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দুদকের হাত-পা বর্তমান শাসক দলের কাছে বাঁধা রয়েছে। এই দুদক কি করছে? আজকে জাতি জানতে চায়। শাসক দলের লোকজন এই প্রতিটি দুর্নীতি আর লুটপাটে জড়িত। ফলে পত্রপত্রিকা ও মিডিয়া যখন এই দুর্নীতি যতটুকু পারছে প্রকাশ করছে এরপরও এই সরকারের টনক নড়ে না। কারণ মধ্যরাতের নির্বাচন করে দম্ভে ও গর্বে এই সরকার আত্মস্ফীত, সেজন্য লাগামহীন দুর্নীতি হচ্ছে-সরকারের টিকে থাকার ভূষণ। প্রতিটি ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য চেষ্টা করে সরকারের উর্দ্ধতনরা। এতে জনগণের মধ্যে চাপা চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের একজন মন্ত্রীই বলেছিলেন সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খেতে। কারণ সুযোগ সন্ধানীর রাজনীতির খেলায় প্রধানমন্ত্রী নিজেদের লোকদের দেশটাকে লুটে নিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করার সুযোগ দিচ্ছেন।
দেশের আর্থিক খাত আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ধুঁকছে। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের ব্যাপারে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে, যা ১২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে শোকে দুঃখে কৃষক ধান পুড়িয়ে দেয়, কোরবানির চামড়ার ন্যায্য মূল্য না পেয়ে মানুষ চামড়া মাটির নিচে পুঁতে রাখে, অথচ দেশের সরকারি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে চলছে হরিলুট। ব্যাংকগুলো পরিণত হয়েছে লুটেরাদের মানিব্যাগে। দেশে বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা এই ঋণ খেলাপি হওয়ায় তাদের পক্ষে সাফাই গাইছেন স্বয়ং মধ্যরাতের নির্বাচনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত পহেলা সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ব্যাংকগুলোতে সুদের হার বেশি হওয়ার কারণে নাকি সবাই ঋণ খেলাপি হচ্ছে। সরকার প্রধানের কাছ থেকে এমন প্রশ্রয় পাওয়ার কারণে ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে এখন মূলধন সংকট দেখা দিয়েছে। টাকা পাচারকারী, ব্যাংক ডাকাত আর ঋণ খেলাপিদের বেপরোয়া লুটপাটে দেশের ব্যাংকগুলো প্রায় দেউলিয়া। শেয়ার বাজারের লুটপাট ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে দিচ্ছে, অথচ সরকার নির্বিকার। লুটপাটের কারণে গত কয়েক মাসে শেয়ার বাজার থেকে বিদেশীরা ৬০০ কোটি টাকা পুঁজি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভূইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল আউয়াল, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, মীর হেলাল, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ প্রমূখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।