Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৌখিক নোটিসে চাকুরী হারালো বিসিসি’র স্বাস্থ্য প্রকল্পের ৩৩ কর্মচারী

কারণ জানেন না কেউ

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৪:৩৩ পিএম

সেপ্টেম্বরের প্রথমদিন কর্মব্যস্ত দিন কাটিয়ে শেষ বিকালে যখন ঘরে ফেরার প্রস্ততি নিচ্ছিলেন, তখন প্রকল্প কর্মকর্তা মো. শাহনেওয়াজ কাগজে লেখা একটি নামের তালিকা সহ এসে সকলকে ডেকে বলেন, ‘আমি যাদের নাম বলব তাদের আগামীকাল থেকে আর অফিসে আসার প্রয়োজন নেই’। এরপর তালিকা দেখে একে একে ৩৩ জনের নাম বললেন কর্মকর্তা মাহনেওয়াজ। প্রতিটি নাম ঘোষণার সঙ্গে মধ্যবয়সী ৩৩ জনের জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে এলো। টানা ৮ মাসের বেতন বকেয়া আকাবস্থাতেই মাসের প্রথম দিনে চাকুরিচ্যুত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ‘আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিস ডেলিভেরি প্রকল্প’র নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৩৩ কর্মচারী ।

তবে এরপড়ে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তারা জানতে পারেননি কি কারনে তারা চাকুরি হারালেন। তবেএকাধীক সূত্রের মতে, নগরীর এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধির পছন্দের ব্যক্তিদের চাকুরী দিতে ১০ বছরের অধিক কর্মরত ৩৩ জনকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। যাদের সকলে আয়া, দাড়োয়ান সহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। হতভাগ্য এই ৩৩ জন রোববার বিকালে তারা যখন চাকুরীচ্যুত হলেন- তখন তাদের কারোরই সরকারি চাকুরীর বয়স নেই। প্রত্যেকের সন্তানেরা স্কুলগামী। নি¤œ আয়ে তারা নগরীতে ভাড়া বাসায় পরিবারসহ থাকেন।

২০০৬ সাল থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশন আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিস ডেলিভেরী প্রকল্পের আওতায় নগরীতে ৫টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা কওে আসছে। এসব কেন্দ্রে মা ও শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়ে থাকে। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ‘মেরী ষ্টোপস’ এবং ‘সৃজনী বাংলাদেশ’ পর্যায়ক্রমে প্রকল্পটি পরিচালনা করেছে। নিয়মানুযায়ী প্রকল্প পরিচালনায় উন্নয়ন সংস্থার হাতবদল হলেও নিয়োগপ্রাপ্ত জনবল একই থাকতো। ‘সৃজনী বাংলাদেশ’র মেয়াদ শেষে এনজিও ‘সীমান্তিক’ গত ১ আগষ্ট দায়িত্ব নিয়ে কর্মরতদের ক্ষেত্রে একই নিয়ম বহাল রাখার প্রতিশশ্র“তি দিয়েছিল। অজ্ঞাত কারনে গত ১ সেপ্টেম্বর তারা কর্মরত ৮৫ জনের মধ্যে ৩৩ জনকে মৌখিক নোটিশে চাকুরিচ্যুত করল।

চাকুরিচ্যুত অ্যাডমিন অ্যাসিট্যান্ট সুশান্ত বালা কান্নাজড়িত হয়ে বললেন, ‘বেতন বকেয়া ৮ মাস। তারপরও চাকুরী করে আসছিলাম যে প্রকল্প থাকলে বেতনও একদিন পাবো। এখন বেতন না দিয়ে চাকুরী থেকে বিদায় করে দিল। বাসা ভাড়া ও মুদি-মনোহারি দোকানের বাকি টাকা পরিশোধ করে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মতো ভাড়ার টাকাও এখন আমার হাতে নেই’। চাকুরীচ্যুত সুপারভাইজার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সোমবার থেকে স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তানের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকি। তারা এটা-ওটা খেতে চায়।

চাকুরীচ্যুত অপর ৩১ জনের অবস্থাও এ দুজনের মতোই। মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর কাউনিয়া বাঁশেরহাট এলাকায় প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চাকুরীচ্যুত কয়েকজন সেখানে ঘোরাঘুরি করছেন। সংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তারা প্রথমে কথা বলতে রাজি হননি। তাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেলো- চাকুরি ফিরে পাওয়ার জন্য নানানভাবে দেনদরবার করছেন তারা। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার অপরাধে সুযোগ হারানোর আশংকায় তারা কথা বলতে রাজি নন।

চাকুরিচ্যুত এক মহিলা কর্মী জানান, মৌখিক নোটিশে চাকুরীচ্যুত হওয়ার পর তারা কয়েকজন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল­াহর সাথে দেখা করার জন্য দুইদিন তার বাসায় ও অফিসে ঘুরেও তা সম্ভব হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল সাংবাদিকদের জানান, ‘আরবান হেলথ কেয়ারের প্রকল্প পরিচালনায় আগের এনজিও’র মেয়াদ শেষ হয়ে নতুন একটি এনজিও দায়িত্ব নিয়েছে’ বলে জানিয়ে ‘এর বেশী তিনি কিছু জানেন না’। ৩৩ জনকে মৌখিক নোটিশে চাকুরীচ্যুত করার কারন জানতে প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. শাহনেওয়াজের কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি নিজের চাকুরী রক্ষার দোহাই দিয়ে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ