Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডাক্তার সঙ্কটে রোগীর ভোগান্তি

দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

মো. গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে বগুড়া-নওগাঁ সড়কের পাশে দুপচাঁয়িা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই সরকারি ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি অন্তহীন সম্যসায় জর্জরিত। এখানে ডাক্তারদের অর্ধেকের বেশি পদ শূণ্য থাকায় রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

সরেজমিনে তথ্যানুসারে জানা যায়, বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক সংলগ্ন দুপচাঁচিয়া সিও অফিস বাসস্ট্যান্ডের পাশে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অবস্থিত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বিগত কয়েক বছরে অবকাঠামোগত বেশ কিছু উন্নয়ন হয়েছে। গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এক কোটি আশি লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে ২০০৮ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না পাওয়ায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারদের ২৭ টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছে ১১ জন। দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তারদের ১৬টি পদ শুন্য রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবারে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিভিন্ন রুগীর অপারেশনের তারিখ নির্ধারন থাকলেও অজ্ঞানের ডাক্তারের পদ শূন্য থাকায় পাশবর্তি কাহালু স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে অজ্ঞান ডাক্তার নিয়ে এসে অপারেশন করা হচ্ছে। অপারেশনে এ ক্ষেত্রে চরম বিরম্বনায় পরতে হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ইসিজি মেশিন বরাদ্দ হলেও টেকনিশিয়ানের পদ শূন্য। স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জন্য ৫ জন সুইপারের স্থলে কর্মরত রয়েছে মাত্র ১ জন। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ১ জন সুইপারের পক্ষে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা দুঃসাধ্য। ফলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে প্রায় সময় নোংড়া পরিবেশ বিরাজ করছে। ড্রেনগুলোতে পঁচা পানি জমে মশার কারখানায় পরিণত হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চারিপাশে আগাছা ও জঙ্গল মশা, মাছির অভায়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মরত ডাক্তারদের স্বাস্থ্য কেন্দ্র ক্যাম্পাসে আবাসিক বাসভবন থাকলেও ডাক্তাররা জেলা শহরেই অবস্থান করছেন। রুটিন মোতাবেক প্রতিদিন দু’এক জন ডাক্তার যাওয়া আসা করছেন। ডাক্তাররা নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অবস্থান করে আবার জেলা শহরে ফিরে যাচ্ছে। আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য থাকলেও ডা. দেলোয়ার হোসেন সাঈদী নামে একজন ডাক্তার আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়মানুসারে আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে ২৪ ঘন্টায় কর্মস্থলে থাকার কথা। তিনিও জেলা শহরেই বসবাস করছেন।
এ ক্ষেত্রে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার লালুকা গ্রামের মৃত আমিরুল ইসলামের মেয়ে খোদেজা (৬৫), করমজি গ্রামের বশির প্রামানিকের ছেলে আব্দুল শফিক (৪৫), ইসলামপুর কুশ্বহর গ্রামের ওসমান ফকিরের ছেলে লুতফর রহমান চিকিৎসক সঙ্কটের কারনে দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়ে জানান, সকাল থেকে জরুরি বিভাগে দাড়িয়ে আছেন, ডাক্তার নেই। একজন ডাক্তার রোগী দেখছেন। এতে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
চিকিৎসাধীন মহিলা ওয়ার্ডে ১৭ নং বেডের করমজি গ্রামের সামছুদ্দিনের স্ত্রী রেনুকা বিবি (৫৫), ১৬ নং বেডে চিকিৎসাধীন শিশু মুক্তির (১মাস) বাবা ইমরান হোসেন, পুরুষ ওয়ার্ডে ৪৬ নং বেডের চিকিৎসাধীন বাঁকাদহ গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে হাসেন আলী (৩৫), ৪৭ নং বেডে চিকিৎসাধীন কুমের আলীর ছেলে ছোবহান (৩০)সহ আরো অনেকে জানান, স্বাস্থ কেন্দ্রের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মী না থাকায় নোংড়া অবস্থা বিরাজ করছে। দুপুর দুটার পরে মেডিকেল অফিসাররা জেলা শহরে চলে যাওয়ায় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য তাদেরকে চিকিৎসক সহকারীদের ওপর একমাত্র ভরসা করতে হয়।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার চব্বিশ ঘন্টা হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের নিয়ম থাকলেও দুপুর দুটার পর তাকেও আর খুজে পাওয়া যায় না। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। সবার জন্য বিশেষ করে দরিদ্র অসহায় মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা নিতে আসা ভোগান্তির শিকার এ সব রোগীরা এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল কুদ্দুস দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, তিনি প্রায় দেড় বছর পূর্বে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর ডাক্তারের শূণ্য পদগুলো পূরণসহ উল্লিখিত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য একাধিক বার বগুড়া জেলা সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন। কিন্তু তার কোন সমাধান হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ