পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে শ্মশানঘাট এলাকায় গত ১১ জুলাই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালায় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ সময় হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ পাঁচ জন আহত হন। এই ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে আটক করে। বিআইডব্লিউটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন সে সময় জানিয়েছিলেন, অভিযান চলাকালে বেলা ১১টার দিকে শ্মশানঘাটের ইজারাদার দাবি করে ইব্রাহিম আহমেদ রিপন উচ্ছেদে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে ইব্রাহিম তার দলবল নিয়ে অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালায়। এতে ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানসহ পাঁচ জনের গায়ে আঘাত লাগে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিআইডব্লিউটিএ-এর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে ওটাই ছিল প্রথম হামলার ঘটনা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বুড়িগঙ্গার উচ্ছেদকৃত সেই ঘাট আবার দখলে নিয়েছে সেই ইব্রাহিম আহমেদ রিপন। শুধু শ্মশানঘাট নং পার্শ্ববর্তী পোস্তগোলা সেনা কল্যাণ ঘাটও এখন ইব্রাহিম আহমেদ রিপনের দখলে। গতকাল সোমবার সরেজমিনে নদীতীর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শ্মসান ঘাট এলাকার প্রায় ৩ একর জায়গা দখল করে চলছে বালুর ট্রাক লোড-আনলোড। এ ছাড়াও ইব্রাহিম আহমেদ রিপন সেনাকল্যাণ ঘাটের পাশ থেকে সেনাবাহিনী ক্যাম্প পর্যন্ত প্রায় ৫ একর জমিতে বাউন্ডারী দিয়ে ভেতরে বালু উত্তোলনসহ বেচাকেনার কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, উদ্ধারকৃত নদীর জায়গা আর দখল করতে দেয়া হবে না। নদী উদ্ধারে সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই ঢাকার চারনদীসহ সবগুলো নদী দখলমুক্ত করা হবে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয় নদীর সীমানায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান। জুন পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদ-নদীর পাড়ের অধিকাংশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পরে ৬ জুলাই স্থায়ী সীমানাখুঁটি বসানোর কার্যক্রম শুরু হয়। ওই দিন কামরাঙ্গীরচরের খোলামোড়া ঘাটে নদীর পাড়ে সীমানাখুঁটি বসিয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তবে উদ্বোধনের পরদিন থেকে ওই কার্যক্রম আর সামনে এগোয়নি।
এদিকে, নদীর পাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন, ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ নানান পরিকল্পনাও নিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। কিন্তু নদীর জায়গা উদ্ধারের পর পুরো কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। উচ্ছেদের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও সীমানাখুঁটি বসানোর কাজে অগ্রগতি সামান্য।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ছিল সবচেয়ে জটিল কাজ। পদে পদে বাধা এসেছে। তারপরও এই কাজ বেশ দ্রুতগতিতে গুছিয়ে আনা হয়েছে। অধিকাংশ অবৈধ স্থাপনাই উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু এরপর কাজের গতি কমে গেছে। গত দেড় মাসে বলতে গেলে তেমন কোনো কাজই এগোয়নি। আর এই সুযোগে আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে দখলদারচক্র। বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত নদীর দুপাশে কমপক্ষে ২৩টি ঘাট আবার দখল করে চলছে বালুর ব্যবসা। দখলদাররা উচ্ছেদকৃত জায়গায় আবার আগের মতোই ড্রেজার লাগিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। রাতের অন্ধকারে সেই বালু ট্রাকে ভরে বিক্রি চলছে। বালু কারবারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একেকটি ঘাট থেকে প্রতিরাতে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বালু বেচাকেনা চলে। এই টাকা যে দখলদার বালু ব্যবসায়ী পায় তা নয়। এ টাকার ভাগ পায় বিআইডব্লিউটিএ-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ সরকারদলীয় স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা।
সরেজমিনে বুড়িগঙ্গা তীর এলাকা ঘুরে বালু শ্রমিক, ট্রাক শ্রমিক, ডেজার শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বুড়গঙ্গা প্রথম সেতু থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত নদীর দুই পাশে কমপক্ষে ২৩টি ঘাট রয়েছে। অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব ঘাটে বালুর ব্যবসা করছে চিহ্নিত সিন্ডিকেট। যার নেতৃত্বে আছে ইব্রাহিম আহমেদ রিপন। বিদেশে পলাতক পুরান ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কচির ঘনিষ্ঠ সহযোগি রিপনের আছে সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনীকে ব্যবহার করেই সে ঘাট দখলে নিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। এমনকি গত মাসের ১১ তারিখে উচ্ছেদ অভিযানের সময় ম্যাজিস্ট্রেটের উপর যে হামলা হয়েছিল তাতেও অংশ নিয়েছিল কচি গ্রুপের সদস্যরাই। গেন্ডারিয়ার অধিবাসী রিপনের পিতা বালু মেম্বার নামে এলাকায় পরিচিত। এই বালু মেম্বারের তিন ছেলেই নদী দখলকারী। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও তারা নদীর দখল ছাড়েনি। পেশি শক্তি ব্যবহার করে তারা দখলদারিত্ব চালিয়েই যাচ্ছে।
রিপন ছাড়াও পোস্তগোলা থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত আরও ১১টি স্পটে বালু উত্তোলন ও বেচাকেনা চলছে প্রকাশ্যে। এর মধ্যে শ্যামপুর ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর কাছে চারটি ঘাট দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। এর মধ্যে দুটি ঘাটের দখলদার সাবেক এমপি সারাহ বেগম কবরীর ব্যক্তিগত সহকারি সেন্টু। স্থানীয়রা জানান, ৫/৬ বছর আগে শ্যামপুর ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরী এলাকায় নদীতীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা একটি বস্তিতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ওই সময়
তৎকালীন এমপি কবরীর ব্যক্তিগত সহকারি (এপিএস) সেন্টু কয়েক রাউন্ড গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে বস্তিটি উচ্ছেদ করে সেই জায়গার সাথে বুড়িগঙ্গার কিছু অংশ দখল করে বালুমহাল তৈরী করেন সেন্টু। সেই থেকে এই ঘাটসহ দুটি ঘাট সেন্টুর দখলেই আছে। সেন্টু শ্যামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের ভাগ্নে সেই সাথে বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি সালাহউদ্দিনেরও আত্মীয়। ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর আশপাশে আরও আছে মুন্সীখোলায় আনসারের একটি ঘাট, রাজুর ঘাট, শফিকুর রহমানের ঘাট, শ্যামপুর ধাপা এলাকায় রফিকের ঘাট, মুন্সীখোলায় আকতারের ঘাট। সবগুলো ঘাটই নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে। বিআইডব্লিউটিএ-এর অভিযানে এসব ঘাট উচ্ছেদ করা হলেও এক মাসের মাথায় সেগুলো কিভাবে চালু হলো তার কোনো উত্তর মেলেনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে। বিআইডব্লিউটিএ-এর একজন উপ-পরিচালক বলেন, আবার কেউ নদীর জায়গা দখল করে থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অভিযানে হাজী সেলিমের বহুতল ভবন এবং দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের শ্বশুর বাড়িও বাদ যায়নি। অথচ সে সময় কেউ অভিযানে বাধা দেয়ার সাহস করেনি। কিন্তু পোস্তগোলা শ্মশানঘাট এলাকায় অভিযানের সময় ইব্রাহিম আহমেদ রিপনের লোকজন হামলা চালিয়েছে। এতে বোঝা যায় তারা কতোটা ভয়ঙ্কর। তারা কিভাবে আবার ঘাট দখল করে ব্যবসা করছে সেটাই প্রশ্ন।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদ-নদীর তীরে প্রায় ৫২ কিলোমিটার এলাকায় সীমানাখুঁটি স্থাপন, ওয়াকওয়ে, জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এজন্য একটি প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, যৌথ জরিপের মাধ্যমে নদীর যে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে, তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গত বুধবার কামরাঙ্গীরচরের খোলামোড়া ঘাটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৩টি পয়েন্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর দুদিন পর আরও ২০ থেকে ২৫টি পয়েন্ট দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনের পর দৃশ্যমান কাজ না হলেও আনুষঙ্গিক কাজ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে ৮৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে এর সঙ্গে আরও কয়েকটি নতুন কাজ যুক্ত হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মোট ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
এই প্রকল্পের মধ্যে ঢাকার চারপাশের নদ-নদীতীরে ১০ হাজার ৮২০টি সীমানাখুঁটি বসানো হবে। এর মধ্যে ঢাকা নদীবন্দর এলাকায় বসানো হবে ৩ হাজার ৮০৩টি খুঁটি। বাকি সীমানাখুঁটি টঙ্গী বন্দর ও নারায়ণগঞ্জ বন্দরের সীমানায় বসানো হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের মধ্যে পাঁচটি পার্কও করার পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে সদরঘাট ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় এক কিলোমিটারজুড়ে পর্যটন পার্ক, আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশন, মিরপুর বড় বাজার ও টঙ্গী বন্দর এলাকায় ইকোপার্ক করা হবে।
এ ছাড়া কামরাঙ্গীরচর রায়েরবাজার খাল থেকে বছিলা পর্যন্ত আট কিলোমিটার বুড়িগঙ্গা নদীর উভয় তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও নদীর পাড়ে বাঁধ দেওয়া হবে। মিরপুর বড় বাজার এলাকায় তুরাগ নদের উভয় তীরে আট কিলোমিটার, টঙ্গী এলাকাতে পাঁচ কিলোমিটার, ফতুল্লার ধর্মগঞ্জে পাঁচ কিলোমিটার, নারায়ণগঞ্জের ডিপিডিসি এলাকায় ছয় কিলোমিটার, নারায়ণগঞ্জের টানবাজার এলাকায় ছয় কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এর পাশাপাশি এসব এলাকায় বাঁধ নির্মাণ, বনায়ন ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকবে।
উচ্ছেদকৃত তীরভূমিতে ১৯টি আরসিসি জেটিও নির্মাণ করবে বিআইডব্লিউটিএ। এর মধ্যে ঢাকা নদীবন্দরের সীমানার মধ্যে ১০টি এবং নারায়ণগঞ্জ বন্দরের সীমানা নয়টি জেটি নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া এই প্রকল্পের মধ্যে সদরঘাট থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার এলাকায় ৪ মিটার করে নদী খননও করা হবে। ১০০ মিটার করে প্রশস্ততা বাড়ানো হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।