Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জায়গা দখল করতে বস্তিতে আগুন লাগিয়েছে ক্ষমতাসীনরা -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৯, ২:৩১ পিএম

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার খালি করার নীতিতে দেশ চালাচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মিরপুরের চলন্তিকা, আরামবাগসহ একের পর এক বস্তিতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। এসব বস্তিতে বসবাসকারী অসহায় বস্তিবাসীর ওপর শকুনের দৃষ্টি পড়েছে। ক্ষমতাসীনদের কারো ওই জায়গাটা দখল করতে হবে এজন্য খালি করতেই আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। প্রথমে আগুন লাগিয়ে দিয়ে অসহায় মানুষদের মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে ওই জায়গাগুলো তারা দখল করছে। এটা হচ্ছে আওয়ামী সরকারের খালি করার নীতি। যার শিকার হয়েছেন চলন্তিকার বস্তিবাসী।

সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের পক্ষ থেকে মিরপুরের চলন্তিকা বস্তিতে অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গত ১৬ আগস্ট দিবাগত রাতে মিরপুরের চলন্তিকা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এতে ওই বস্তির প্রায় ৩ হাজার ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এদের মধ্যে কিছু মানুষের হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দেন রিজভী।

চলন্তিকা বস্তিকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে মিডনাইট সরকার খালি করার নীতিতে দেশ চালাচ্ছে। সারা বাংলাদেশ থেকে বিরোধী দল খালি করে দাও, বিএনপিকে খালি করে দাও, এর জন্য তারা গুম, ক্রসফায়ার, মামলা, গ্রেফতার এবং আটক করে রেখে দেশ থেকে বিরোধী দল খালি করতে চায়। অন্যদিকে বস্তির অসহায় মানুষের ওপর শকুনের দৃষ্টি পড়েছে। ক্ষমতাসীনদের কারো বস্তির জায়গা প্রয়োজন, দখল করতে হবে, অতএব ওই জায়গাটা খালি করো। কিভাবে করবে? এজন্য তারা আগুন লগিয়ে দিয়েছে। কয়েকটি জায়গায় এধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। প্রথমে আগুন লাগিয়ে দিয়ে অসহায় মানুষদের মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। এরপর ওই জায়গাগুলো তারা দখল করছে। এটা হচ্ছে আওয়ামী সরকারের খালি করার নীতি। যার শিকার হয়েছেন চলন্তিকার বস্তিবাসী। সুতরাং আওয়ামী সরকার যতদিন থাকবে ততদিন এই খালি করার নীতির মধ্যে দিয়ে এদেশের মানুষকে বসবাস করতে হবে। কারণ ওদের যেখানে টার্গেট হচ্ছে- যদি দেখে যে বিরোধী দল কিংবা সরকারের সমালোচনাকারী কারো একটি বাড়ি সুন্দর আছে তাহলে ওই বাড়িটি খালি করে দাও। এমনকি যদি মনে করে যে কোন বাড়িতে সুন্দরি মেয়ে আছে তাকে তুলে নিয়ে যেতে হবে, সেটা করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না।

লড়াই করতে না পারলে কারো অস্তিত্ব থাকবে না মন্তব্য করে রিজভী বলেন, আজকে পরিবার, বস্তি, জনপদ থেকে শুরু করে দেশের গণতন্ত্রে বিরোধী দলের অস্তিত্বকে খালি করে দেয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ সরকার। এখান থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে আমাদের একযোগে লড়াই করতে হবে। না করলে কারো অস্তিত্ব থাকবে না। কারো গৃহ থাকবে না, বাড়ি থাকবে না, সন্তান-সন্ততি থাকবে না।

তথাকথিত উন্নয়নের নামে সরকার মানুষের সাথে উপহাস, হাসি-ঠাট্টা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকারের লোকেরা গর্ব করে বলে দেশ উন্নত হলে সেখানে ডেঙ্গু হয়। কিভাবে মানুষকে নিয়ে তারা হাসি ঠাট্টা করে? অথচ এটা একটা মহামারি, প্রতিদিন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আর এটাকে তারা তাদের তথাকথিত উন্নয়নের সাথে মিলিয়ে বলছে, উন্নয়ন হচ্ছে বলেই এডিস মশার প্রাদুর্ভাব হচ্ছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আর কয়েকদিন পর সরকারের লোকেরা বলবে যে, এই যে বন্যায় ধানক্ষেত ভেসে যাচ্ছে, গবাদি পশু ভেসে যাচ্ছে এটাও হচ্ছে আওয়ামী উন্নয়নের কারণে। প্রচ- শীতে যখন মানুষ কষ্ট পায়, বস্তির মানুষরা একটা চাদর পায় না, লেপ-তোশক তো দূরে থাক, তখনও আওয়ামী লীগের নেতারা বলবে দেশে উন্নয়ন হচ্ছে বলে বেশি শীত পড়ছে। আর বেশি শীত পড়াটা হচ্ছে উন্নয়নের নমুনা। মানুষকে নিয়ে তারা উপহাস করে, তাচ্ছিল্য করে। কারণ ওদের ভোটের দরকার হয় না, ওদের দরকার পড়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। ওদের দিনের বেলা ভোটের দরকার নাই, রাতের বেলা ভোট হলেই হয়। এজন্য তারা মানুষকে তারা মানুষকে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারে, উপহাস করতে পারে, ব্যঙ্গ করতে পারে।

আওয়ামী লীগের ইচ্ছাতেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ২১ আগস্ট বোমা হামলা মামলায় ওনাদেরই লোকেরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নামে চার্জশিট দিতে পারেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম অন্তর্ভূক্ত করে। অথচ তার আগের দুটি চার্জশিটের কোনটিতেই তারেক রহমানের নাম ছিল না।

বিচার বিভাগ ও বিচারিক প্রক্রিয়াকে আওয়ামী প্রক্রিয়া উল্লেখ করে বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, এই প্রক্রিয়ায় রায় হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নাহলে গণভবন থেকে। এখানে স্বাধীন বিচার বিভাগ বিচারিক প্রক্রিয়া নেই। যদি থাকতো তাহলে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি থাকতেন না। তার কোথাও কোন সই নেই, স্বাক্ষর নেই, মিথ্যা, অসত্য মামলায় শুধু তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের বিচারক দিয়ে রায় দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। যে মামলায় জামিনযোগ্য সেই মামলায় তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। কারণ একটাই, বেগম জিয়া যদি বাইরে থাকতো তাহলে মিডনাইট নির্বাচন করতে অসুবিধা হতো। অবৈধ, অগণতান্ত্রিক কর্মকা- করতে পারতো না। এজন্য নিজের পথের কাটা সরাতে বেগম জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়েছে।

বর্তমান সরকারের কোন জবাবদিহিতা নেই অভিযোগ করে সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, ভোট হলে শেখ হাসিনা হেরে যাবেন, এজন্য তিনি ভোটের নামে প্রহসন করেন। দিনের বেলা না করে রাতে করেন। গণতন্ত্র থাকলে জবাবদিহিতা থাকতে হবে, ভোট হলে সেখনে কোন না কোনভাবে জবাব দিতে হবে, জবাবদিহিতা আওয়ামী সরকার করে না, শেখ হাসিনা করে না। যদি থাকতো তাহলে আজকে চলন্তিকা, আরামবাগ বস্তি পুড়তো না। এদের বাড়িঘর পুড়ে যাবে আর এসি গাড়িতে করে মন্ত্রীরা ফুরফুর করে পতাকা উড়াতে উড়াতে ঘরে ফিরে যাবে এটি গণতান্ত্রিক সরকারে, স্বভাবে কখনো সম্ভব না। এরা সামগ্রিক দিক দিয়ে ব্যর্থ সরকার বলেই জোর করে ক্ষমতা আকড়ে ধরে আছে। যদি সফল সরকার হতো তাহলে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দিতেন।

সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে দুই বছরেও ১০জন রোহিঙ্গা ফেরত পাঠাতে পারেনি মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে সাফল্য অর্জন করার যে প্রয়োজন ছিল তার কিছুই করতে পারেনি এই সরকার।

মহানগর উত্তর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- উত্তরে সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, মোঃ ইয়াছিন আলী, সাজ্জাদ হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন মতিন, মোঃ আউয়াল, ইঞ্জিনিয়ার মজিবর রহমান, হাজী মোঃ তৈমুর, রেজাউল কবীর, মোঃ আলাউদ্দীন প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ