Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পিলখানায় চাকরিচ্যুতদের দলে নিতে তৎপর জঙ্গিরা

৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

 পিলখানার হত্যাকান্ডের ঘটনায় চাকরিচ্যুতদের সংগঠনে ভেড়াতে কাজ করছে জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ বা ‘আল্লাহর সরকার’। এ ছাড়া বিভিন্ন বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত, চাকরিচ্যুত ব্যক্তিদেরও নিজেদের সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে এই জঙ্গি সংগঠনটি। গতকাল সোমবার রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান। এর আগে গত রোববার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দলের’ চার সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ আব্রাহিম আহমেদ হিরো (৪৬), আবদুল আজিজ (৫০), মো. শফিকুল ইসলাম সুরুজ (৩৮) ও মো. রশিদুল ইসলাম (২৮)। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে মোবাইল, পেনড্রাইভ এবং হার্ডড্রাইভ, ক্রেডিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক এবং পুস্তিকা উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব কর্মকর্তা এমরানুল হাসান বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজেদের জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ বা ‘আল্লাহর সরকার’-এর সদস্য বলে স্বীকার করেছে। তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সংগঠনটিতে সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের টার্গেট করা হয়। এ ক্ষেত্রে তারা পিলখানার ঘটনায় চাকরিচ্যুতদেরকে নিজেদের দলে ভেড়াতে কাজ করছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় তারা সফল হয়নি।
তিনি বলেন, জঙ্গি মতিন মেহেদী মমিনুল ইসলাম ওরফে মতিন মাহবুবের নেতৃত্বে ১৯৯৫ সালে ‘আল্লাহর দল’ নামে এ জঙ্গি সংগঠনটি গড়ে ওঠে। পরে ২০০৪ সালে শেষ দিকে সংগঠনটিকে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত করেন তিনি। সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলায়ও সংগঠনটির সদস্যরা অংশগ্রহণ করে। পরে জেএমবি নেতৃত্বশূন্য হলে জঙ্গি মতিন মেহেদী জেএমবি ত্যাগ করে তার মূল সংগঠন পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন। মতিন মেহেদী ২০০৭ সালে গ্রেফতার হলেও তাকেই আমির হিসেবে মান্য করে এ জঙ্গি সংগঠনটি নতুন করে পরিচালিত হচ্ছিল। স্বাভাবিক জঙ্গি সংগঠনের তুলনায় এদের অবকাঠামো বিন্যাস কিছুটা ভিন্ন। গ্রামপর্যায়ে নায়ক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পদ তারকা হিসেবে তারা চিহ্নিত করে। এদের অধিনায়ক, উপ-অধিনায়ক, অতিরিক্ত অধিনায়ক পদ রয়েছে। এরা সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত সদস্যদের যুক্ত করার চেষ্টা করে আসছিল। স¤প্রতি বিজিবির চাকরিচ্যুত সদস্যদের দলে টানতে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনাও করে। ২০০৪ সালে এ জঙ্গি সংগঠনের আটজন এবং সা¤প্রতিক সময়ে খুলনা থেকে তিনজন, ঢাকা থেকে চারজন, রংপুর থেকে তিনজনসহ ১৮ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সর্বশেষ গ্রেফতারকৃত চারজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়েছে, সদস্য সংগ্রহের জন্য ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও রিক্রুটের মাধ্যমে সংগঠনের কাঠামো মজবুত করার পরিকল্পনা করেছে আল্লাহর দল। পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই জঙ্গি সংগঠনটি চিরকুট ও লোক মারফত দূত ব্যবহার করে থাকে। নতুন সদস্যরা জঙ্গি মতিন মেহেদীকে আমির মেনে বায়াত বা শপথ বাক্য পাঠ করে দলে অন্তর্ভুক্ত হয়। সংগঠনটি অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রতি মাসে জাকাত দেয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে। সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে যারা চাকরি বা ব্যবসা করে, তারা তাদের উপার্জিত অর্থ থেকে প্রতি মাসে ২ থেকে ৫ শতাংশ হারে সংগঠনকে জাকাত দিয়ে থাকে। এভাবেই আল্লাহর দলের ফান্ড তৈরি করা হয়েছে বলে জানান লে. কর্নেল এমরানুল হাসান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: র‌্যাব


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ