বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
হোসেন মাহমুদ
শেষ হয়েছে দেশব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। সহিংস, রক্তক্ষয়ী এ নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়েছে শতাধিক লাশের স্তূপ। উড়িয়েছে সরকারি দলের নিরংকুশ বিজয় পতাকা। সে সাথে শেষ পেরেক ঠুকেছে গণতন্ত্রের কফিনে। অন্য কথায় এ নির্বাচনে কবরস্থ হয়েছে গণতন্ত্র। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ইউপি নির্বাচন আগে আর দেখা যায়নি। এ নির্বাচন প্রমাণ করেছে এ দেশে নির্বাচন কমিশন একটি নামকাওয়াস্তে প্রতিষ্ঠান মাত্র যার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে আখ্যায়িত করা হয়েছে আত্মতুষ্টিতে ভোগা সর্বকালের অযোগ্যতম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে। এর আগেও যে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা হয়নি তা নয়, কিন্তু দেশ থেকে গণতন্ত্রকে তা এভাবে ধুয়ে মুছে ফেলেনি। এ নির্বাচনে সরকারি দল ছাড়া আর কোনো দলের জন্য কিছু প্রাপ্তি ঘটেনি।
গণতন্ত্রহীন দেশে এবারই প্রথমবারের মত দলীয় ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ ওঠে। এর ফলে ব্যাপক সহিংসতা ঘটতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন নির্বাচন নিয়ে কাজ করা ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সে সময় বলেছিলেন, ‘এই উদ্যোগ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করবে। ক্ষমতাসীন দলই স্থানীয় সরকার গ্রাস করে ফেলবে। এ ছাড়া প্রভাবশালী, বিত্তশালী ও রাজনৈতিক দাপটে খারাপ লোক নির্বাচিত হয়ে আসার সুযোগ প্রশস্ত হবে।’ কিন্তু দলীয় ভিত্তিতেই ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তে সরকার অটল থাকে। নির্বাচন কমিশন ২২ মার্চ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ৬ দফায় ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের তফসিল ঘোষণা করে। সে অনুযায়ী শুরু হয় নির্বাচন। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ৬ জুন দৈনিক ইনকিলাবে এ বিষয়ে প্রকাশিত মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় স্কুল ছাত্র ও ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ নিহত হয়েছে ১৩৫ জন। আর আহত হয়েছে ১০ হাজার, পঙ্গু হয়েছে ৩ হাজার। অন্যদিকে উভয়পক্ষের সংঘর্ষের ভিত্তিতে কতগুলো মামলা হয়েছে বা কত লোক গ্রেফতার হয়েছে সে বিষয়ে বিশদ তথ্য জানা যায়নি।
নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, ৪১০৪টি ইউপিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ২৬৫৪ জন। এ ছাড়া বিএনপি ৩৬৭, জাতীয় পার্টি ৪৮ ও স্বতন্ত্র ৮৭৪ জন বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২১১ জন। তাদের মধ্যে ২০৯ জনই সরকারি দলের। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নির্বাচন শুরুর আগেই একটি বার্তা প্রচারিত হয়ে যায় যে সারাদেশে শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থীদেরই বিজয়ী করতে হবে। এটি মন্ত্র হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের সকল পর্যায়ে কর্মরতদের কানে প্রবেশ করে। তারা তা অলংঘনীয় বার্তা হিসেবেই গ্রহণ করেন ও সে মতই কাজ করেন। ইউপি নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে ভোট ডাকাতির অভিযোগ উঠেছে। এবারের নির্বাচনে যেসব ঘটনা ঘটে তার মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের হুমকি, মনোনয়ন পত্র জমাদানে বাধা ইত্যাদি। আর নির্বাচনের সময় ঘটেছে আগের রাতেই ব্যালট পেপারে সিল দেওয়া, ইসি কর্মকর্তাদের (প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার) জাল ভোট দেওয়া ও কারচুপি করা, পুলিশের সামনে জাল ভোট দেওয়া, প্রকাশ্যে সিল মারতে বাধ্য করা, কেন্দ্রের পরিবর্তে উপজেলায় এনে ফলাফল ঘোষণা, বিজয়ীদের পরিবর্তে পরাজিতদের বিজয়ী করা ইত্যাদি। এর সাথে নির্বাচনী প্রচার কালে, নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে ও বাইরে সংঘর্ষ, ভোটের আগে পরে গুপ্ত হামলা, প্রার্থীর বাড়িতে হামলা ইত্যাদি তো আছেই। অন্যকে ভোট দেওয়ায় নির্বাচনের পর ২ সন্তানের জননী এক গর্ভবতী মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। রাতের বেলা ফল পাল্টানোর ঘটনার মধ্যে রয়েছে : কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় রাজাখালি ইউপির ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে বক প্রতীকে নির্বাচনকারী ছাদেকা বেগম পান ২৩২৭ ভোট। তালগাছ প্রতীকে নির্বাচন করে মোহছেনা বেগম পান ১২৫১ ভোট। ফলাফলে ছাদেকা বেগমের বক প্রতীককে পাল্টে তালগাছ ও মোহছেনা বেগমকে তাল গাছের বদলে বক প্রতীক দিয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজান নগর ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী আকবর আলিকে ১৮ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। কয়েকঘণ্টা পর রাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আল মামুনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এ জন্য একটি কেন্দ্রের ফলাফল ফ্লুইড দিয়ে ঘষামাজা করা হয়।
এই যে এত মানুষের মৃত্যু, এত মানুষ আহত হওয়া, এত মানুষ পঙ্গুত্বের শিকার হওয়া তথা ৬ দফা সহিংসতা, সে বিষয়ে যেমন সরকার নীরব থেকেছে, তেমনি নির্বিকার থেকেছে নির্বাচন কমিশন। প্রতি দফা নির্বাচন হয়েছে আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দফতরে বসে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সাফাই গেয়েছেন। ৪ জুন সর্বশেষ দফা নির্বাচনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাবলীল কণ্ঠে বলেন, নির্বাচন পরিস্থতির উন্নতি হয়েছে। কিছু অনিয়ম ও গুটিকয়েক মারামারি ছাড়া সার্বিকভাবে এবারের ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। হায়রে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার বক্তব্য।
এদিকে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ইউপি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থার সর্বনাশ ঘটেছে। আর তা করেছে সরকার। সাম্প্রতিককালে দেশের একটি শীর্ষ সংবাদপত্রে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করে খ্যাতি লাভ করা আওয়ামী লীগ সমর্থক লেখক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মইনুল ইসলাম ইউপি নির্বাচন প্রসঙ্গে মত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের পরিসমাপ্তি হয়েছে। আমাদের তো নির্বাচন নেই। নির্বাচনকে আমরা কোথায় নিয়ে গেছি! কত বড় ক্ষতি হয়েছে তা বুঝতে সময় লাগবে।’
এবারে নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটেছে অনেক। অতীতের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোর প্রাণহানির তথ্য থেকে দেখা যায়- ১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৮৩ ও ১৯৯২ সালে প্রাণহানির কোনো ঘটনা ঘটেনি। ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৮০ জন, ১৯৯৭ সালে ৩১ জন, ২০০৩ সালে ২৩ জন এবং ২০১১ সালে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। অতীতের নির্বাচনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ১৯৮৮ সালে। সবচেয়ে খারাপ নির্বাচন ছিল তা।
ইউপি নির্বাচন নিয়ে দু’ দফা সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেদের পর্যবেক্ষণ ও সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ সম্মেলন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। ৫ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রায় ১৫০ জনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে খারাপ নির্বাচনের একটি ট্রেন্ড বা নজির সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রথম ধাপ। চলমান ইউপি নির্বাচনকে ‘বিকৃত’ মন্তব্য করে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা ও অনিয়মের পাশাপাশি বর্তমানে প্রকাশ্যে অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত। তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি। এটি কারচুপি, ব্যালটবক্স ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারার নির্বাচন হয়েছে। দলভিত্তিক ইউপি নির্বাচনের কারণে সহিংসতা ও অনিয়মের ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, এ নির্বাচন ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের মহড়া।
২৬ মে আরেক সংবাদ সম্মেলনে এবারের ইউপি নির্বাচনকে ইতিহাসের সবচেয়ে ‘মন্দ’ ইউপি নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করে সুজন। এ নির্বাচন প্রসঙ্গে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, এবারে নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য এতটাই প্রকট ছিল যা অনেকটা রোযার আগে ছোলা কেনাবেচার মতো বেচাকেনা হয়েছে। কোথাও কোথাও মৃত ব্যক্তিরাও ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে নিহতরা আসলে নিহত নন, শহীদ হয়েছেন। তাই এ নির্বাচনকে একটি শহীদী নির্বাচন আখ্যা দেওয়া যায়।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ বলেন, ইউপি নির্বাচন শুধু প্রশ্নবিদ্ধই নয়, গুলিবিদ্ধও। ইউপি নির্বাচনে এ পর্যন্ত প্রাণনাশের সেঞ্চুরি হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন ধারাবাহিকভাবে গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এতে বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোই ধসে পড়বে এবং দেশ সীমাহীন নৈরাজ্য ও সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাবে।
দেশে গণতন্ত্র, অবাধ,সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা যে দুরাশা তা ইউপি নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ যে দেশের প্রচ- জনপ্রিয় দল, জনগণ তৃণমূলের নির্বাচনে সরকারী দলকে দু’হাত ভরে ভোট দেবেÑঅঘোষিতভাবে সরকার তা প্রমাণ করতে চেয়েছিল। করেছেও। বিদেশীরা ইউপি নির্বাচনের প্রকৃত অবস্থা কিছুই জানে নাÑতা নয়। কিন্তু তারা এ সরকারকে রুষ্ট না করার নীতি অবলম্বন করেছে। তাই সরকারের দেওয়া ভাষ্যই তাদের কাছে অফিসিয়ালি গ্রহণযোগ্য। নিজ নিজ দেশের সরকারকেও তারা তাই জানাবে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয় বলে বিএনপির চিৎকার, অভিযোগ আজ আর কেউ শোনে না, কোনো গুরুত্বও দেয় না। এবারও তার অকাট্য প্রমাণ থাকলেও কোনো ফলোদয় হবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না যে একটি দুর্বল ও অকার্যকর রাজনৈতিক দলে পরিণত বিএনপি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তা পুনরুদ্ধারে দলীয় নেতৃত্বের কোনো চিন্তা-পরিকল্পনা-প্রচেষ্টা আছে কি না বলা মুশকিল। অন্তত তা দৃশ্যমান নয়।
বস্তুত বহুজনেরই কথা, যে কোনো বিচারেই এটা স্পষ্ট যে গোটা ইউপি নির্বাচন আসলে আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। এ নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে সরকার গণতন্ত্র কী বিষয় তা ভুলে গেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশের প্রধান বিরোধী দলসহ বহু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করলেও সরকার ভোটারবিহীন সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে দিব্যি টিকে আছে। দেশ থেকে গণতন্ত্রকে হাপিস করে দিলেও কিছু হয় নাÑএ নিশ্চিন্ততা বোধ সরকারকে ইউপি নির্বাচনের মতো আরেকটি প্রহসন ঘটাতে উৎসাহিত করেছে। শক্তি, কৌশল ও প্রচারণায় জনমতকে যে অবজ্ঞা করা যায়, বিরোধী দলকে সম্পূর্ণ কোণঠাসা করে রাখা যায়, সরকার আবার তা প্রমাণ করতে সফল হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, এ নির্বাচন নানাদিক দিয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচনে মনোনয়ন লাভের জন্য বাণিজ্যের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভিড় করেছিলেন অসৎ, ক্ষমতালোভী, খারাপ লোকেরা। শোনা যায়, মনোনয়ন পেতে স্থানীয় পর্যায়ে কোটি টাকার বাণিজ্যও হয়েছে। সবাই জেনেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেলে বিজয় নিশ্চিত। আর প্রত্যাশা যে বিজয় লাভের পর সামনে খুলে যাবে অফুরান সম্পদ অর্জনের সম্ভাবনার দিগন্ত। এ নির্বাচন গ্রামাঞ্চলে সমাজে-পরিবারে গুরুতর বিভেদের সৃষ্টি করেছে। ভাই-ভাই-পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী পর্যায়ে সৃষ্টি করেছে নজিরবিহীন বিরোধ। অথচ, এ নির্বাচনকে সরকার ও নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার কাজে ব্যবহার করতে পারত। তা করেনি। অন্যদিকে তা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বিভেদকে ব্যাপক ও প্রকাশ্য করে দিয়েছে যা দলের দুর্বলতাকে তুলে ধরেছে। সব মিলিয়ে দেশে একটি আস্থাহীনতার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতো তাহলে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি জনগণের কতটা সমর্থন আছে তার একটা পরিচয় মিলত। কিন্তু সরকার সে ঝুঁকি নেয়নি। বরং শক্তির আশ্রয় নিয়ে সরকার ও দলের প্রতি নিরংকুশ সমর্থন প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছে। দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে, প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাধরদের একজন ইত্যাদি অর্জন ও সাফল্য সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার এখনো কি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে ভয় পায়? ইউপি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কি সে কথাই আরেকবার প্রমাণিত হলো? এ প্রশ্ন এখন দেশের বহু মানুষের মনে।
লেখক : সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।