রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
এবারে কোরবানির চামড়ার দরপতনে চরম বিপাকে পড়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা এতিমখানা ও কওমি মাদরাসায় কর্তৃক পরিচালিত লিল্লাহ বোডিংগুলোর কর্তৃপক্ষ। তারা এখন এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিংগুলো কিভাবে চালাবেন তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছরই ঈদুল আযহায় পশু কোরবানির পর চামড়া মূলত বিভিন্ন এতিমখানা, মসজিদ ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের দেয়া হয়। আর ওই সব সংগ্রহিত চামড়া বিক্রির অর্থে এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দ্বীনি শিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের খাবারে যোগান হয়ে থাকে। কিন্তু এবারে পশু চামড়ার দাম না থাকায় ওই সব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ এবারে কোরবানিতে পাওয়া চামড়া পানি দামে বিক্রি করে যে অর্থ পেয়েছেন তারা, তাতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবস্থানকারী দ্বীনি শিক্ষার শিক্ষার্থীদের এক মাসেরও খাবারের যোগান দেয়া সম্ভব হবে না।
এ নিয়ে গতকাল সৈয়দপুর শহরের দারুল রুহুল ইসলাম মাদরাসার পরিচালক মাওলারা মোহাম্মদ হারুন রেয়াজীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, শহরের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী এ মাদরাসাটি স্থাপিত হয় ১৯২৬ সালে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪ শত শিক্ষার্থী দ্বীনে শিক্ষা গ্রহণ করছে। এদের মধ্যে প্রায় আড়াই শতজন আবাসিক শিক্ষার্থী। যাদের তিন বেলা খাবার মাদরাসা থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
তিনি জানান, প্রতি বছর কোরবানির ঈদে এলাকার লোকজন কয়েক শ’ পশুর চামড়া মাদরাসায় দান করেন। আর ওই চামড়া বিক্রির অর্থে মাদরাসা লিল্লাহ বোডিংয়ে থাকা আবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় ৬ মাসের খাবার সংস্থান হয়। এবারে কোরবানি ঈদে মাদরাসায় ফান্ডে জন্য ৩৯৯ পিস গরুর চামড়া এবং ১৮১পিস ছাগলের চামড়া মিলেছে। কিন্তু এবারে বিক্রিয় করা চামড়ার অর্থে লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ছাত্রদের এক মাসেরও খাবার সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় বছরের বাকি মাসগুলো লিল্লাহ বোডিং কিভাবে পরিচালনা করবেন তা নিয়ে মারাত্মক চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
এ রকম মন্তব্য করেন শহরের কাজীপাড়ায় অবস্থিত আল-জামিআতুল আরাবিয়া আল ইসলামিয়া মাদরাসা মহতামিম মাওলানা আবুল কালাম কাসেমী। তিনি জানান, ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত তাঁর মাদারাসায় প্রায় ৬ শ’ শিক্ষার্থী ইসলাম শিক্ষা গ্রহণ করছেন। তারা সকলেই আবাসিক শিক্ষার্থী। এবারের কোরবানিতে মাদরাসার ফান্ডে ২৯২ পিস গরুর এবং ৭০ পিস ছাগলের চামড়া পাওয়া গেছে। যা বিক্রি করে মিলেছে ৭৪ হাজার ৪ শ’ টাকা। ওই অর্থে আাবাসিক ছাত্রদের এক দেড় মাসের খাবার চালানো যাবে। বছরের অন্যান্য মাসগুলো কিভাবে চলবে এ চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তিনি। তিনি জানান, কওমি মাদরাসাগুরোর আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে কোরবানির চামড়া। সেই চামড়ার এবারের দাম নেই। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরগুলোতে চামড়ার জন্য শহরের ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে মাদরাসায় এসে ধর্ণা দেয়। কিন্তু এবারে চামড়ার মূল্য না থাকায় মাদরাসার জন্য পাওয়া চামড়াগুলো নিতে রাত পর্যন্ত কোন চামড়া ব্যবসায়ী আসেননি। আর তারা কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতিও জানেন না। এ অবস্থায় প্রচন্ড গরমে চামড়াগুলো নষ্ট হওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। অবশেষে শহরের গোলাহাট এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী মো. মেরাজের কাছে গিয়ে অনেক অনুরোধ করে পানি দরে চামড়াগুলো তুলে দেন। তিনি জানান, শেষ পর্যন্ত সরকারিভাবে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হলো। কিন্তু সরকার যদি ওই সিদ্ধান্ত কয়েক দিন আগেই নিতেন তাহলেও চামড়ার কিছুটা মূল্য পাওয়া যেত। আমরাও প্রতিষ্ঠানগতভাবে সমস্যার সম্মুখীন হতাম না।
সৈয়দপুর শহরের মিস্ত্রিপাড়ার চামড়া ব্যবসায়ী মো. রিপন জানান, আমরা বংশপরম্পরায় চামড়া ব্যবসায় জড়িত। আগে আমার বাবা মো. ইনসান আলী আমাদের পারিবারিক চামড়া ব্যবসার সার্বিক দেখভাল করতেন। এখন বয়সের ভারে তিনি আর ব্যবসায় মনযোগ দিতে পারেন না। তাই গত প্রায় ৭/৮ বছর ধরে আমি আমাদের চামড়া ব্যবসার পুরোটাই দেখাশুনা করছি। তিনি জানান, ট্যানারি মালিকদের দিক-নির্দেশনায় এবারে চামড়া ক্রয় করেছি। এবারে তিনি ভাল মানের প্রতিটি চামড়া ৮ শ’ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ২শ’ টাকা পর্যন্ত দামে প্রায় ২ হাজার চামড়া ক্রয় করেছেন। তিনি জানান অত্যধিক গরমে কারণে তাঁর কিছু ক্রয়কৃত চামড়া নষ্ট হয়েছে। আর আগামীকাল তিনি ক্রয়কৃত চামড়াগুলো ঢাকার ট্যানারি মালিকের কাছ পাঠাবেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়ির সংলগ্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ক্রয়কৃত চামড়া প্রক্রিয়াকরণ করে ¯ুÍপ করে রাখা রয়েছে।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ই্উএনও) এস. এম. গোলাম কিবরিয়া জানান, এবারের কোরবারির চামড়ার মূল্য না পেয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলা কিংবা নষ্ট করার মতো কোন ঘটনা এখানে ঘটেনি। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কেনার জন্য ব্যবসায়ীদের উদ্ধুদ্ধ করেছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।