দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর: ইসলাম শান্তির ধর্ম। এ ধর্ম মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানবহত্যা কিংবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোন কারণে যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করলো, সে যেন পৃথিবীর সমস্ত মানুষকেই হত্যা করল। আর যে ব্যাক্তি কারো জীবন রক্ষা করলো সে যেন পৃথিবীর সমস্ত মনুষের জীবনই রক্ষা করল।’ (সূরা মায়েদাহ : ৩২।) অন্যায়ভাবে কোন মুসলমানকে হত্যার পরিণাম নিশ্চিত জাহান্নাম। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি জেনে বুঝে কোন মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার ওপর আল্লাহর ক্রোধ ও লানত বর্ষিত হতে থাকবে। আল্লাহ তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ৯৩।)
নিরীহ মানুষকে হত্যার করার চরমপন্থা গ্রহণ বা বাড়াবাড়ির অবকাশ ইসলামে নেই। দুনিয়াতে অহেতুক কারো প্রাণনাশ বা হত্যা করা সামাজিক অনাচার ও অত্যাচারের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনে মানব হত্যাকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা করো না।’ (বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৩।) একবার হজরত হামজা (রা.) নবী করিম (দ.) এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূল আল্লাহ (দঃ)! আমাকে এমন পথ বলে দেন যা আমাকে সুখী করবে। হুজুর (দ.) বললেন, মানুষের জীবন রক্ষা এবং ধংস করা- এ দুটির মধ্যে তুমি কোনটি পছন্দ কর? হামজা (রা.) বললেন, মানুষের জীবন রক্ষা করা। রাসুল (দ.) বললেন, দুনিয়া ও আখেরাতে সুখী হওয়ার জন্য তুমি এ কাজই করতে থাকো। (মুসনাদে আহমাদ : ৬৪৬০।)
যখনই কেউ অন্যায় ও অবৈধভাবে মানুষ হত্যায় লিপ্ত হয় তার ওপর থেকে আল্লাহর রহমত ও বরকত উঠে যায়। নরহত্যা, বর্বরতা ও নাশকতার ফলে পৃথিবীর শান্তি বিনষ্ট হয় এবং ভূপৃষ্ঠে একের পর এক শাস্তি ও বিপর্যয় আপতিত হয়। নবী করিম (দঃ) বলেছেন, ‘একজন প্রকৃত মুমিন তার দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ প্রশান্ত থাকে, যে পর্যন্ত সে অবৈধ হত্যায় লিপ্ত না হয়।’ (বুখারি : ৬৮৬২।)
পৃথিবীতে যত পাপ আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি? একাধিক হাদিস শরিফে রাসুল (দ.) বলেছেন, সাতটি মহাপাপ থেকে বেঁচে থাকো। এ সাতটি মহাপাপের প্রথমটি হলো আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক অংশীদার করা। আর তৃতীয়টি হল অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা। (বুখারী : ৬৮৫৬; মুসলিম : ১২৯।) ইমাম কুরতুবী (রহ.) মুসনাদে বাযযারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রাসুল (দ.) বলেছেন, ‘পৃথিবীর সব মানুষ একসাথে যদি একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আল্লাহ তায়ালা সব মানুষকেই জাহান্নামে দেবেন। তারপরও অন্যায়ভাবে হত্যাকে কখনোই মেনে নিবেন না।’ ইমাম কুরতুবি আরেকটি হাদিস উল্লেখ করেছেন, রাসুল (দ.) বলেছেন, ‘কোন মানুষ যদি আরেকজন নিরপরাধ মানুষ কে হত্যায় মুখের একটি কথা দিয়েও সাহায্য করে, তাহলে কিয়ামতের দিন তার কপালে লেখা থাকবে- এ ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে মাহরুম। (আকদিয়াতুর রাসুল (দ.) পৃষ্ঠা : ১।)
কিয়ামতের দিন মানুষ হত্যার বিচার করা হবে সবার আগে। তারপর অন্যান্য অপরাধের বিচার করা হবে। রাসুলুল্লাহ (দ.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা হবে, তা হলো রক্তপাত (হত্যা) সম্পর্কিত।’ (বুখারী : ৬৩৫৭; মুসলিম : ৩১৭৮।) অন্য একটি হাদিসে নূরনবী (দ.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীকে নিয়ে আসবে। হত্যাকারীর চুলের অগ্রভাগ ও মাথা নিহতের হাতের মুষ্ঠিতে থাকবে আর তার কণ্ঠনালী থেকে তখন রক্ত ঝরতে থাকবে। সে বলবে, হে আমার রব, এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে তাকে আরশের কাছে নিয়ে যাবে।’ (তিরমিযী : ২৯৫৫; মুসনাদ আহমদ : ২৫৫১।)
ভয়াবহ হত্যাকান্ড থেকে সমাজ ও দেশকে মুক্ত রাখতে হলে আমাদের সবাইকে আল্লাহর বিধান এবং রাসুল (দ.) এর নির্দেশ মেনে চলতে হবে। আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব ধরনের অন্যায়, অবিচার ও যাবতীয় পাপাচার থেকে একনিষ্ঠভাবে তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসতে হবে। নিজেদের ও নিজেদের সন্তান তথা ভবিষ্যত প্রজন্মকে মুত্তাকি ও নবী প্রেমিক (দঃ) হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমেই সম্ভব হানাহানি ও নৈরাজ্যমুক্ত দেশ উপহার দেয়া। তবেই আল্লাহর রহমত এবং ক্ষমা আমাদের জান্নাতের দরজায় পৌঁছে দিবে। রাসুল (দ.) বলেছেন, ‘কোন মুমিন বান্দা যদি আল্লাহর কাছে এমন অবস্থায় হাজির হয় যে, সে কারো রক্ত ঝরায়নি, অর্থাৎ কোন হত্যাকান্ডে জড়ায়নি, তাহলে আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায় তাকে ক্ষমা করে দেয়া। (মুসলিম : ১৩৯।) আসুন, আমরা সবাই কুরআন সুন্নাহ মেনে চলি। জবান ও হাত থেকে সকল মুসলমানদের ভালবেসে নিরাপদে রাখি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফীক দান করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।