বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন মাজীদ যেসব চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের ওপর অতি অধিক জোর দিয়েছে, বিভিন্ন শিরোনামে ও বিভিন্ন আকারে যেসব বিষয়ের গুরুত্ব ও মহিমা বর্ণনা করেছে তন্মধ্যে ‘সবর’ তথা ধৈর্যের গুরুত্ব সবিশেষ। কিন্তু আমাদের ভাষায় সবর-এর অর্থ অত্যন্ত সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
মনে করা হয়, সবর-এর মর্মার্থ শুধু এতটুকুই যে, মৃত্যু, রোগবালাই, কিংবা অভাব-অনটনের মত বিপদাপদকে এমনভাবে সয়ে নেয়া যাতে হা-হুতাশ ও অভিযোগ-অনুযোগ প্রকাশ না পায়। পক্ষান্তরে কোনো অত্যাচারী-অত্যাচার করলে তার প্রতিশোধ না নেয়া এবং কান্নাকাটি কিংবা ফরিয়াদ না করা। কিন্তু কোরআনের ভাষায় সবর-এর অর্থ এর চাইতে অনেক ব্যাপক ও গভীর।
সংক্ষেপে এর তাৎপর্যকে কিছুটা এভাবে ব্যক্ত করা যেতে পারে যে, ‘কোনো বিশাল ও পবিত্র উদ্দেশের জন্য (যেমন, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও আখেরাতের সওয়াবের জন্য কিংবা পৃথিবীতে কল্যাণ বিস্তার ও অকল্যাণ অপসারণের লক্ষ্যে অথবা অন্যের সেবা ও সুখদানের জন্য) দুঃখ-কষ্ট ও অমনোপূত বিষয়াদি বরদাশত করা এবং প্রতিক‚ল অবস্থায়ও ন্যায় ও সত্যের ওপর দৃঢ়তার সাথে স্থির থাকা, কল্যাণের পথে চলতে থাকা হল সবর।’
সবর-এর ব্যাপক অর্থ মাথায় রেখে কোরাআন মাজীদের কয়েকটি আয়াত পাঠ করা যেতে পারে। সর্বপ্রথম সূরা বাকারার একটি আয়াত, ‘হে ঈমানদারগণ, (জটিলতা ও কষ্টের ক্ষেত্রে) ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য অর্জন কর। এ কথা সন্দেহতীতভাবে নিশ্চিত যে, (আল্লাহর পরিপূর্ণ সাহায্য এবং স্বয়ং) আল্লাহ ধৈর্যধারণকারীদের সাথে রয়েছেন।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৫৩)।
সবর তথা ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য অর্জনের বিষয়টি সূরা আ’রাফের সে আয়াতগুলোর দ্বারা আরও অধিক স্পষ্ট হয়ে যায়, যাতে উল্লেখ রয়েছে যে, ফিরআউন ও তার সরকার যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, বনি ইসরাঈলের সমস্ত বালকদের হত্যা করা হোক আর বালিকা ও মহিলাদের অব্যাহতি দেয়া হোক, তখন মূসা আ. নিজের সম্প্রদায় বনি ইসরাঈলকে উপদেশ দান প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করা এবং ধৈর্যকে নিজেদের প্রতীক বানিয়ে নাও। (অর্থাৎ, দৃঢ়তার সাথে ন্যায়ের ওপর স্থির থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নাও এবং তৈরি হয়ে যাও। তারপর দেখো, আল্লাহ তায়ালা কী করে দেখান।) রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক আল্লাহই বটেন। তিনি তার বান্দাদের মাঝে যাকে ইচ্ছা রাষ্ট্রের উত্তরাধিকারী সাব্যস্ত করেন।’ (সূরা আ’রাফ : আয়াত ১২৮)।
সূরা আলে ইমরানের শেষ আয়াতটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এ আয়াতটিই যেন সূরাটির সারনির্যাস। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, ধৈর্যধারণ কর, পরস্পরকে ধৈর্যের প্রতি উৎসাহিত কর, (আল্লাহর রাহে চেষ্টা-প্রয়াস চালানোর জন্য) তৈরি থাক এবং আল্লাহকে ভয় করা (অর্থাৎ, তাকওয়াকে নিজের আদর্শ করে না।) আশা করা যায়, তোমরা তাহলে মুক্তি পেয়ে যাবে।’ (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ২০০)।
মানুষের স্বভাবগত দুর্বলতা রয়েছে যে, সত্য ও সৎপথে চলতে গিয়ে যখন তাদের ক্রমাগত বিপদাপদ ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, অথচ নিজেদের কোরবানি (আত্মনিবেদন) এর কোনো সুফল তারা দেখতে পায় না, তখন তাদের মাঝে নৈরাশ্য চলে আসে এবং তাদের সাহস ভেঙ্গে যেতে থাকে।
এমনি পরিস্থিতির জন্য কোরআন মাজীদে বলা হয়েছে, ‘আর সবর কর, কারণ, আল্লাহ তায়ালার রীতি রয়েছে যে, তিনি সৎকর্মশীলদের প্রাপ্য বিনিময় নস্যাৎ করেন না। (বিলম্বে কি অবিলম্বে তিনি সংকর্মশীদের বিনিময় অবশ্যই দান করবেন।)’ (সূরা হুদ : আয়াত ১১৫)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।