দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
“ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, অধ্যায়: আল-ওসিয়্যাহ, অনুচ্ছেদ: আল-ওসিয়্যাতু বিছ-ছুলুছ, কায়রো: দারুল হাদীস, ১৯৯৭ খ্রি., খ.৩, পৃ: ১০৫, হাদীস নং-১৬২৮।”
ওসিয়্যাত চার প্রকার। যথা: এক : এমন ওসিয়্যাত যা কথা এবং কাজ উভয়ভাবে প্রত্যাহার করা যায়। যেমন- কথার মাধ্যমে প্রত্যাহার যথা- এ কথা বলা যে, আমি ওসিয়্যাত প্রত্যাহার করলাম। কাজের মাধ্যমে প্রত্যাহার যথা- ওসিয়্যাতকৃত বস্তুটি বিক্রয় বা অন্য কোনভাবে আপন মালিকানা থেকে বের করে দেয়া। দুই : এমন ওসিয়্যাত, যা কথা বা কাজ কোন প্রকারেই প্রত্যাহার করা যায় না। যেমন- কেউ আপন গোলামকে শর্তহীনভাবে বলল, আমার মৃত্যুর পর তুমি আযাদ ও মুক্ত। অবস্থায় কোনভাবেই তার এ কথা প্রত্যাহার করা যাবে না। “সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক সম্পাদিত, ওয়াফক সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল, ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০০৫, পৃ: ৫৬।”
তিন: এমন ওসিয়্যাত, যা কথার দ্বারা প্রত্যাহার করা যায় কিন্তু কাজের মাধ্যমে প্রত্যাহার করা যায় না। যেমন- কারো জন্য এক তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ সম্পদের ওসিয়্যাত করা। এক্ষেত্রে কথার মাধ্যমে ওসিয়্যাত প্রত্যাহার করা যায়। কাজের মাধ্যমে করা যায় না, সে যদি মূল সম্পদ থেকে এক-তৃতীয়াংশ পৃথক করে তবুও ওসিয়্যাত বাতিল হবে না, বরং অবশিষ্ট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশে তা প্রযোজ্য হবে।
চার : এমন ওসিয়্যাত যা কাজের মাধ্যমে প্রত্যাহার করা যায়। কিন্তু কথার মাধ্যমে প্রত্যাহার করা যায় না। যেমন- কেউ শর্ত সাপেক্ষ কোন গোলামকে বলল, আমার মৃত্যুর পর তুমি আযাদ। এই ক্ষেত্রে সেই গোলাম বিক্রয় করে দিলে ওসিয়্যাত বাতিল হয়ে যাবে। কোন কথা দ্বারা বাতিল করা যাবে না। “প্রাগুক্ত, পৃ: ৫৬”।
শরীয়তের দৃষ্টিতে ওসিয়্যাত : ওসিয়্যাত কয়েক ধরনের হতে পারে। যেমন- ওয়াজিব : যথা গচ্ছিত রাখা সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার ওসিয়্যাত, অজ্ঞাত ঋণ পরিশোধের ওসিয়্যাত, ছুটে যাওয়া সিয়ামের ফিদয়া ও কাফ্ফারা আদায়ের ওসিয়্যাত। “মাওলানা উবাদুল হক ও অন্যান্য সম্পাদিত, ফাতাওয়া মাসাইল, প্রাগুক্ত, পৃ: ৪৮০।”
মুবাহ : যেমন- আত্মীয় ও অপরিচিত বিত্তবান লোকদের জন্য ওসিয়্যাত। এ ধরনের ওসিয়্যাত বৈধ।
মাকরূহ : যেমন- এমন চরিত্রহীন ও অসৎ লোকদের জন্য ওসিয়্যাত করা যেখানে অধিক সম্ভাবনা থাকে যে, সে ব্যক্তি এ অর্থ খারাপ কাজে ব্যয় করবে। তাহলে সে ওসিয়্যাত মাকরূহ। ওসিয়্যাত যথার্থ ও বৈধ হওয়ার জন্য এর উদ্দেশ্য অবশ্যই শরীয়ত সম্মত হতে হবে। শরীয়ত বিরোধী কোন উদ্দেশ্যে ওসিয়্যাত করা বৈধ নয়। অবৈধ উদ্দেশ্যে ওসিয়্যাত করলে তা কার্যকর হবে না। বরং বাতিল বলে গণ্য হবে। “গাজী শামছুর রহমান ও অন্যান্য সম্পাদিত, বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন, প্রাগুক্ত, পৃ: ৭২৮।” আল্লাহ তাআলা বলেন, “সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমারা পরস্পর সহযোগিতা করবে এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। “আল-কুরআন, ৫:২।”
মুস্তাহাব : উপর্যুক্ত তিন ধরনের ওসিয়্যাত ছাড়া যাবতীয় ওসিয়্যাত মুস্তাহাব। ফকীহগণ কুরআন, হাদীস ও উম্মাতের ইজমার ভিত্তিতে ওসিয়্যাতের কল্যাণের দিকটি বিবেচনা করে ওসিয়্যাতকারীর যাকাত, রোযা, হজ্জ ও অনুরূপ অত্যবশ্যকীয় কর্তব্য অপূর্ণ না থাকার শর্তে এই মুসতাহাব ওসিয়্যাতকে অনুমোদন দিয়েছেন। এখানে একটি বিষয় আলোচনা করা জরুরি, সেটি হলো আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কারও মৃত্যুকাল উপস্থিত হলে সে যদি ধন সম্পত্তি রেখে যায় তবে ন্যায়ানুগ প্রথা মত তার পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনের জন্য ওসিয়্যাত করার বিধান তোমাদের দেয়া হল। এটা মুত্তাকীদের জন্য একটি কর্তব্য”। “আল কুরআন, ২:১৮০।” ইসলামের প্রাথমিক যুগে যতদিন পর্যন্ত ওয়ারিসগণের অংশ কুরআনের আয়াত দ্বারা নির্ধারিত হয়নি, ততদিন পর্যন্ত মৃত্যু পথযাত্রী তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ পিতা-মাতা এবং আত্মীয়স্বজনের জন্য ওসিয়্যাত করে যেতেন। অবশিষ্ট সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে বণ্টিত হতো। নির্দেশটির বিষয়েই এ আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। উক্ত এ আয়াতের দ্বারা ওসিয়্যাত ফরজ বুঝা যায়। অতঃপর ওসিয়্যাত সম্পর্কিত এ নির্দেশটি ‘মীরাস’ এর দ্বারা রহিত করে দেয়া হয়েছে। “মুফতী মুহাম্মদ শফী, তাফসীরে মাআরেফুল কোরআন, অনুবাদ : মাওলানা মুহিউদ্দীন খান,
ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০০৫, খ.১, পৃ: ৪৮৮”। তাফসীরে মাযহারীতে উপর্যুক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এ আয়াত অবতীর্ণের পূর্বেই ইসলামের প্রথম যুগে আত্মীয়-স্বজনের জন্য ওসিয়্যাত করা ফরজ ছিল। পরে এ আয়াত রহিত হয়ে যায়। মীরাস সংক্রান্ত আয়াত এ আয়াতকে রহিত করেছে। “কাযী মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ পানিপথী, তাফসীরে মাযহারী, অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক ও অন্যান্য কর্তৃক সম্পাদিত, ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১৯৯৭, খ.১, পৃ:৪৩০”। মীরাস সম্পর্কিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, “পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, তা অল্প হোক অথবা বেশি হোক। এটা নির্ধারিত অংশ।” “আল কুরআন, ৪:৭”।
তবে আলিমগণের সর্বসম্মত অভিমত হচ্ছে, যেসব আত্মীয়ের জন্য মীরাসের আয়াতে কোন অংশ নির্ধারণ করা হয়নি, তাদের জন্য ওসিয়্যাত করা মৃত্যু পথযাত্রীর পক্ষে ফরজ বা জরুরি নয়। সে ফরজ রহিত হয়ে গেছে। এখন প্রয়োজন বিশেষে এটা মুস্তাহাবে পরিণত হয়েছে। ওসিয়্যাতের প্রতি গুরুত্বারোপ করে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোন মুসলিম ব্যক্তির ওসিয়্যাত করার মত সম্পদ থাকলে তার নিজের নিকট ওসিয়্যাতনামা লিখে দুই রাতও অতিবাহিত করা উচিত নয়’। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।