Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মতলবে দখল ও আবর্জনায় আবদ্ধ খাল

মাহবুব আলম লাভলু, মতলব উত্তর (চাঁদপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বর্ষায় ভারি বৃষ্টি হলেই চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কৃষকরা থাকে উৎকন্ঠায়। খালগুলো মানুষের দখলে চলে যাওয়া, কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনায় খালগুলো আবদ্ধ থাকায় প্রতি বছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সেচ প্রকল্পে জলাবদ্ধতা এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। জলাবদ্ধতা কৃষকের মাঠের ফসল নষ্ট হচ্ছে এবং ফসল করতে না পারায় অনাবাদি থাকছে জমি। এ জলাবদ্ধতায় এ সেচ প্রকল্পটি কৃষকের জন্যে অনেকটা অভিশাপ হয়ে দেখা দিচ্ছে।

উপজেলার হানিরপাড়, কলাকান্দা, মিলারচর, মাথাভাঙ্গা, পাঁচআনী, নাউরী, হলদিয়া, লুধুয়া, একলাশপুর, জোড়খালী, শিকিরচর, ছেঙ্গারচর, কেশাইরকান্দি, জীবগাঁও, পাঠান বাজার, ঝিনাইয়া, মরাদন, ইসলামাবাদ, অলিপুর, নয়াকান্দি, সুজাতপুর ঠাকুরচর, রুহিতার পাড়, বদুরপুর, বাগানবাড়ি, নিশ্চিন্তপুর, দুর্গাপুর, লবাইরকান্দি, ইসলামাবাদ, ফতেপুরসহ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকার নিন্মাঞ্চলে কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতার কারণে আমন ধানের বীজতলা ও রোপা আউশ, বগি পাট, আখ, ফল ও কাঠ গাছের বাগান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মৎস্য খামার তলিয়ে গিয়ে মৎস্যজীবীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা ফসলি জমিতে আবাদ করতে পারে না। কৃষকরা প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা না পাওয়ায় এ সেচ প্রকল্পকে তাদের জন্যে অভিশাপ মনে করছেন।
পাঁচআনী গ্রামের মনির হোসেন বলেন, ‘জানি না এহন আমরা কি করুম, হুদিনকালে পানি পাই না, বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জইম্মা সব ফসল তলাইয়া যায়। ফসল করতে গিয়া টাকা শেষ হইয়া যায়। ক্ষতির কারণে ফসল পাই না। এমনে আর কত দিন চলুম।’
হানিরপাড় গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‹প্রকল্পটি তৈরি হওয়ার পর থেকে আমরা বর্ষা আসলেই বৃষ্টির পানিতে ডুবে মরি। আমাদের চাষের জমি তলিয়ে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। পাউবো কর্তৃপক্ষকে এ জলাবদ্ধতার ব্যাপারে জানালেও এ পর্যন্ত কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেয় নি।› দশানী-হানিরপাড়-বালুরচর-ছেঙ্গারচর বাজার হয়ে যে খালটি কালিপুর পাম্প হাউজে মিলেছে সে খালটির অবস্থা করুণ। মানুষের দখল, কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনায় খালটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এ খালটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে দশানী, মাথাভাঙ্গা, হানিরপাড়, জোড়খালী, বালুরচর, মিলারচর এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। প্রতি বছর এ এলাকার কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানালেন, জলাবদ্ধতার মূল কারণ মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনায় ত্রুটি, খালগুলো মানুষের দখলে চলে যাওয়া, কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনায় খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া, খালগুলো সংস্কার না করা। আর এ অবস্থার জন্যে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করা হচ্ছে। খালগুলো দখল হয়ে গেলেও পাউবো কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পাউবোর কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে অবৈধভাবে লীজ নেয়ার নামে পাউবোর সম্পদ দখল করে রাখছে।
এভাবে প্রতি বছরই জলাবদ্ধতায় এ প্রকল্পের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্যে জলাবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী সমাধান জরুরি বলে দাবি কৃষি পরিবারগুলোর। তা না হলে মূলধন হারিয়ে কৃষকরা পথে বসবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন জানান, বৃষ্টি আসলেই জলাবদ্ধতা সৃস্টি হয়। অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি-ঘর নির্মাণ, খাল দখল, খালগুলোতে ময়লা-আবর্জনার স্তব। যার কারণে পানি নিষ্কাশনেরর পথ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতি বছর জলাবদ্ধতার কারণে কৃষি ক্ষেত্রের ক্ষতি হচ্ছে। আরো বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার কারণে রোপা ধানের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, খালগুলো দখলমুক্ত করতে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। দখলদারদের নোটিশ দেয়া হচ্ছে। খালগুলো সংস্কারের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। এ কাজ গুলো করতে পারলে প্রকল্পের ভিতরে জলাবদ্ধতা সৃস্টি হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ